বেঙ্গল ওয়াচ নিউজ ডেস্ক: উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ, সন্দেশখালি ১-ব্লকের তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি। কিন্তু সেই ‘মামুলি’ নেতার হাতের মুঠোয় গোটা সন্দেশখালি। এলাকার মানুষের কথায়, শাহজাহান ভাই এলাকার পুলিশ এলাকার প্রশাসন। এলাকার সমস্যা পুলিশ নয়, মেটান বাদশাই। কিন্তু কীভাবে উত্থান ‘মামুলি’ এই তৃণমূল নেতার? কীভাবে হয়ে উঠলেন সন্দেশখালির ‘বেতাজ বাদশা’?

রাজনৈতিকমহলের মতে, শেখ শাহজাহানের (Sheikh Shahjahan Arrested) উত্থানের পিছনে রয়েছে রাজ্যের মন্ত্রী তথা তৃণমূল নেতা জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের বড় ভূমিকা। বর্তমানে রেশন দুর্নীতি মামলায় তিনি জেলবন্দী। কিন্তু একদা সহকর্মীদের নিষেধাজ্ঞাকে কানে না তুলেই তৃণমূলে শেখ শাহজাহানকে নিয়ে ছিলেন প্রাক্তন মন্ত্রী বালু।

এমনকি তাঁর হাতেই সন্দেশখালি সহ বিস্তীর্ণ এলাকায় সংগঠনের গুরু দায়িত্ব জ্যোতিপ্রিয় দিয়েছিলেন বলেও দাবি এলাকার মানুষের। আর সেই দায়িত্ব পাওয়ার পরে নদী ঘেরা বিচ্ছিন্ন দ্বীপে নিজের সাম্রাজ্য বাড়িয়ে নেন। হয়ে ওঠেন বেতাজ বাদশা!

সন্দেশখালির আনাচে-কানাচে কান পাতলেই শোনা যায় বাম জমানার শেষের দিকে সন্দেশখালিতে উত্থান হতে শুরু করে শেখ শাহজাহানের। সেই সময় মাথার উপর লাল ঝাণ্ডার ছায়া থাকায় কোনওরকম ‘ঝামেলা’ ছাড়াই উত্থান হতে শুরু করে। এরপর বামেদের সরিয়ে ২০১১ সালে ক্ষমতায় আসে তৃণমূল। জানা যায় ক্ষমতা থেকে বামেরা সরে যাওয়ার পর লাল বাহিনীর সঙ্গ ত্যাগ করেন শাহজাহান। যোগ দেন তৃণমূলে। জ্যোতিপ্রিয়ের হাত ধরেই তৃণমূলে পদে পান শাহজাহান। তারপর আরও প্রতিপত্তি বৃদ্ধি পায়।

শুধু তাই নয়, ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে নুসরত জাহানকে যখন বসিরহাট থেকে প্রার্থী করেছিল তৃণমূল, তখন নাকি সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্ক নিশ্চিত করতে ‘ঘাম ঝরিয়েছিলেন’ শাহজাহান। যা নুসরতের জয়ের ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করেছিল বলে সংশ্লিষ্ট মহলের ধারণা। শাহজাহানের মদতে রোহিঙ্গাদের শিবিরও চলে বলে অভিযোগ উঠেছে। সূত্রের খবর, ইডির আধিকারিকরা মনে করছেন যে রেশন দুর্নীতিতে বড় ভূমিকা আছে শাহজাহানের। এলাকায় নাকি তাঁর ইশারাতেই গাছের পাতা নড়ে।

শুধু তাই নয়, বেতাজ বাদশার বিরুদ্ধে মানবপাচারের অভিযোগ শোনা যেতে শুরু করেছিল। গরুপাচার এবং কাঠপাচারের অভিযোগও উঠেছিল তাঁর বিরুদ্ধে। উঠেছিল হেরোইন ব্যবসার অভিযোগ। যিনি নিজে নাকি সীমান্ত পেরিয়ে অবৈধভাবে ভারতে এসেছিলেন। তবে ইডির হানার পরেই সম্পূর্ণ বদলে যায় পরিস্থিতি। গ্রেপ্তার হওয়ার ভয়ে কুর্সি ছেড়ে গোপন ডেরায় আস্তানা নেন সন্দেশখালির বেতাজ বাদশা।

বাদশার ভয় সরিয়ে প্রতিবাদের সুর চড়ান সেখানকার বাসিন্দারা। তাঁর ভয়ে দীর্ঘদিন ভয়ে মুখে কুলুক এঁটে থাকতে বাধ্য হয়েছিলেন মহিলারা। কিন্তু আর নয়, একেবারে টা লাঠি হাতে নিয়ে প্রতিবাদে নামেন মহিলারা। বেশিরভাগ জমিয়ে গ্রামবাসীদের কাছ থেকে দখল করেছিলেন শেখ শাহজাহান সেখানে গড়ে উঠেছিল তার মাছের ভেড়ি। এছাড়াও জমি জবরদখল, মানব পাচার, মহিলাদের শ্লীলতাহানি ছাড়াও আরো বড় বড় কুকীর্তির অভিযোগ রয়েছে শেখ শাহজাহানের বিরুদ্ধে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *