বেঙ্গল ওয়াচ নিউজ ডেস্ক: ৪০০ পারে’র স্লোগান দিলেও অধরা থেকেছে সেই স্বপ্ন! গোটা দেশেই কার্যত বিজেপির ফল আশানরূপ নয়। বিশেষ করে যোগী রাজ্যে বড়সড় ধাক্কা খেয়েছে বিজেপি। অভাবনীয় উত্থান হয়েছে বিজেপি বিরোধী INDIA bloc-এর। এমনকি অযোধ্যাতেও মুখ থুবড়ে পড়েছে বিজেপি। উত্তরপ্রদেশ সহ গোটা দেশেই ভোট বেড়েছে কংগ্রেসের। আর এই ফল রীতিমত অবাক করেছে বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্বকে।
বিশেষ করে হিন্দুত্ব মতাদর্শের গভীর শিকড় যেখানে মাটি ভেদ করে ঢুকে গিয়েছে, সেখানে এহেন ফলাফল চমকে দিয়েছে।যদিও উত্তরপ্রদেশের ফলাফল নিয়ে আশাবাদী ছিল বিজেপি নেতৃত্ব। ২০১৯ সালের মতোই সে রাজ্যের মানুষ তাঁদের আশির্বাদ করবেন বলে কার্যত নিশ্চিত ছিলেন।
কিন্তু কম ভোটদান, একাধিক স্থানীয় সমস্যার ফলে এই ফল বলে মনে করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, মোদী ঝড় এবার তেমন ভাবে না থাকাও অন্যতম কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। গত কয়েক বছরে একাধিক উন্নয়ন হয়েছে উত্তরপ্রদেশজুড়ে। কিন্ত্যু কিছু বিষয়ের উপর নজর দেওয়া হয়নি বলে মনে করা হচ্ছে। আর সেই কারণে এই ফলাফল বলেও মত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের।
বলে রাখা প্রয়োজন, উত্তরপ্রদেশের রাজনীতি বুঝতে গেলে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ভি পি সিংয়ের ( V P Singh) কথা স্মরণ করতে হয়। তাঁর আমলে মন্ডল কমিশন রিপোর্ট (Mandal Commission report) কার্যকর করেছিলেন। সেই রিপোর্ট কার্যত বদলে দিয়েছিল ভারতের সামাজিক এবং রাজনৈতিক ছবিটা। কমিশনে তাঁদের কথা বলা হয়েছিল, যারা সমাজের পিছিয়ে পড়া শ্রেণির মানুষ। মন্ডল কমিশন রিপোর্ট (Mandal Commission report) কার্যকরের পরেই ওবিসি’রা তাদের অধিকার নিয়ে সরব হতে শুরু করে।
জাতি ভিত্তিক সংরক্ষণের আলোচনায় উঠে আসে। তবে এবার উত্তরপ্রদেশের যে ফলাফল সামনে এসেছে তা একদিনে সম্ভব হয়নি। একটু একটু করে বদলেছে সে রাজ্যের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট। নতুন করে উত্থান হয়েছে সমাজবাদী পার্টির। নিজের ভাবমুতি বদলে ফেলেছেন রাহুল গান্ধী। যোগী সরকারকে নিয়ে অস্বস্তি বেড়েছে দলিতদের মধ্যে। আর সবথেকে বড় কারণ হল সে রাজ্যের অর্থনীতি। অর্থনৈতিক ভারসাম্য এতটাই হারিয়েছে যে দরিদ্ররা দরিদ্রতর হয়েছে।
লোকসভা ভোটের ফলাফলের দিকে তাকালেই বোঝা যাবে ইন্ডিয়া জোটের ভালো ফল করার অন্যতম কারিগর হচ্ছে সমাজবাদী সুপ্রিমো অখিলেশ যাদব। ২০২২ সালের বিধানসভা ভোটে দেখা যায়, কীভাবে বিজেপির আসন সংখ্যা কমে গেছিল। আর ভোট শতাংশ বেরেছিল সপা। অখিলেশ একা হাতেই ওবিসি এবং দলিতদের ছোট ছোট দলগুলিকে একত্রিত করে বিজেপি বিরোধী একটা জোট গড়ে তুলেছে। নিজেকে একজন পিছিয়ে পড়া শ্রেণির নেতা হিসাবে অখিলেশ তুলে ধরতে সফল। বলছেন বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, ২০২৪ সালে অখিলেশ সে পথেই আরও একধাপ এগিয়ে গিয়েছেন। ঠাণ্ডা মাথায় কংগ্রেসের সিওঙ্গে আসন সমঝোতা করেছেন বলেও মত বিশ্লেষকদের।
তবে ২০২৪ সালের নির্বাচনে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে কংগ্রেস, বলছেন রাজনৈতিক কারবারিরা। তাদের কথায় ন্যায় যাত্রার হাত ধরে বদলে এসেছে রাহুল গান্ধীর মধ্যেও। আমেঠি এবং রায়বেরিলে আসনে জয় তাদের হারানো জনপ্রিয়তাকে ফিরিয়ে দিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। অনেকেই মনে করছেন, ইস্তেহারে যে চাকরি এবং সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতি কংগ্রেস দিয়েছে তা মানুষ ভালোভাবে গ্রহণ করেছে।
ইন্ডিয়া জোট বারবার বুঝিয়েছে, জাতি সুমারি আটকে দিয়ে বিজেপি মানুষকে সংরক্ষণ থেকে ব৯ঞ্চিত করতে চাইছে। দলিতদের একাংশ তাতে ভয় পেয়ে যান বলেও মনে করা হচ্ছে। ফলাফলে সাম্প্রদায়িকতা যে কোনও ছাপ ফেলেনি তা স্পষ্ট হয়ে গেছে ফৈয়জাবাদের ফলাফলে। রামমন্দিরের হওয়া সত্ত্বেও সেখানে জয় পেয়েছেন সপার দলিত নেতা Awadesh Singh।
সেক্ষেত্রে রাজনৈতিক মহলের ব্যাখ্যা, মন্ডল কমিশনের সেই পিছিয়ে পড়া শ্রেণির মানুষ আর হিন্দুত্ববাদীদের মধ্যে জোর টক্কর হয়েছে উত্তরপ্রদেশের লোকসভা নির্বাচনে। ইন্ডিয়া জোট মানুষকে রাম ইস্যু থেকে সরিয়ে এনে সাধারণ পিছিয়ে পড়া মানুষকে প্রতিদিনের সমস্যাগুলো বীঝাতে সফল হয়েছে বলেই মনে করছেন রাজনীতির কারবারিরা। শুধু তাই নয়, রাজনীতির বিশ্লেষকরা মনে করছেন সেখানে এবারের ভোটে মেরুকরণের রাজনীতিকে ছাপিয়ে গিয়েছে সামাজিক এবং অরথনৈতিক ইস্যু।