বেঙ্গল ওয়াচ নিউজ ডেস্ক ::

ভারতের স্বাধীনতার আগে ও পরে রাম জন্মভূমি নিয়ে আন্দোলন হয়েছে বিভিন্ন সময়ে। অনেকেই আদালতে গিয়েছেন। যার পরিসমাপ্তি হয় ২০১৯-এর ৯ নভেম্বর। সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ অযোধ্যার ২.৭৭ একর বিতর্কিত জমিতে রাম মন্দির তৈরির পক্ষে রায় দেন। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন হিন্দু নেতা রাম জন্মভূমি আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছেন।

এখানে রঘুবর দাসের নাম উল্লেখ করতে হয়। তিনি ১৮৮৫ সালে বাবরি মসজিদের সামনে রামের পুজোর জন্য একটি মণ্ডপ তৈরির অনুমতির জন্য স্থানীয় আদালতে গিয়েছিলেন। সেই আবেদন খারিজ হওয়ার পরে তিনি ফৈজাবাদ জেলা আদালতে যান। কিন্তু সেখানেও বিচারক স্থিতাবস্থার আদেশ দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন ৩৫০ বছর আগে করা ভুল সংশোধন করতে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে।

অভিরাম দাস মুক্তিদাতার উপাসক হিসেবে পরিচিত। তিনি ১৯৪৯ সালের ২২-২৩ ডিসেম্বর রাতের ঘটনাগুলিতে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন। সেই সময় মসজিদের কাঠামোর ভিতরে রামলালার মূর্তি স্থাপন করা হয়েছিল। পুলিশ রিপোর্টে মহন্ত রামচন্দ্র দাসের পরমহংস ও বৃন্দাবন দাসের সঙ্গে তাঁর নামও রয়েছে।

গোপাল সিং বিশারদ ছিলেন আইনজীবী ও হিন্দু মহাসভার অযোধ্যার সম্পাদক। ১৯৪৯-র ডিসেম্বরে বাবরি মসজিদে রামের মূর্তি স্থাপনের পরে আদালতে গিয়েছিলেন। তিনি দাবি করেছিলেন, হিন্দুদের সেখানে উপাসনা করার পূর্ণ অধিকার রয়েছে।

উমেশচন্দ্র পান্ডে ছিলেন ফৈজাবাদের একজন আইনজীবী। তিনি গল্প নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে অযোধ্যা নিয়ে বিতর্কে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। ১৯৮৬ সালের জানুয়ারিতে তৎকালীন বিতর্কিত এলাকা খুলে দেওয়ার জন্য ফৈজাবাদ আদালতে যান।। যার প্রেক্ষিতে জেলা বিচারক ১ ফেব্রুয়ারি দেওয়া আদেশে ১৯৪৯ সাল থেকে দেওয়া তালাগুলি খুলে দেওয়ার নির্দেশ দেন। আদেশের ৪০ মিনিট পরে বিতর্কিত এলাকা খুলে দেওয়া হয় এবং রাম মন্দির আন্দোলন সবার সামনে চলে আসে।

গুরুদত্ত সিং মন্দিরের প্রচারের অন্যতম ব্যক্তি ছিলেন। ১৯৪৯ সালে তিনি ছিলেন ফৈজাবাদের শহরের শাসক। তিনি ও অভিরাম দাস স্বপ্ন দেখার কথা বলেছিলেন, তারপরেই রাম মন্দির মসজিদের কেন্দ্রীয় গম্বুজের নিচে পাওয়া যায়। মসজিদের ভিতরে রামের মূর্তি স্থাপনের পরে ১৯৪৯-এর ২৩ ডিসেম্বরের সকালে প্রার্থনাও করেন। পরে তিনি জনসংঘে যোগ দেন। আরএসএসের তালিকায় তিনি প্রথম কর সেবক হিসেবে পরিগণিত হন।
কেকে নায়ার ছিলেন ১৯৪৯ সালে ফৈজাবাদের জেলাশাসক। অর্থাৎ পদমর্যাদায় তিনি ছিলেন ফৈজাবাদের সিটি ম্যাজিস্ট্রেট গুরুদত্ত সিংয়ের ওপরে। মসজিদের ভিতরে রামের মূর্তি স্থাপনের পরে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু সেই সময়ের উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী জিবি পন্থকে সাম্প্রদায়িক গোলযোগ নিয়ে সতর্ক করেছিলেন। দায়িত্বে অবহেলার জন্য গুরুদত্ত সিংয়ের সঙ্গে তাঁকে পদ থেকে অপসারিত করা হয়। পরে কেকে নায়ার জনসংঘে যোগ দেন এবং ১৯৬৭ সালে উত্তর প্রদেশের বাহরাইচ থেকে সাংসদ হন।

দেওকি নন্দন আগরওয়াল এলাহাবাদ হাইকোর্টের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি। তিনি ভিএইচপির প্রাক্তন সহ-সভাপতিও। ১৯৮৯ সালে তিনি বিতর্কিত স্থানটি পুনরুদ্ধারের জন্য রামলালা বিরাজমানের কাছে আবেদন করেছিলেন। যেখানে তিনি বন্ধু হিসেবে বাদী পক্ষে নাম লিখিয়েছিলেন। ২০০২ সালে তাঁর মৃত্যুর পরে বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক টিপি ভার্মা এবং পরবর্তী সময়ে ভিএইচপি কর্মী ত্রিলোকী নাথ পান্ডেকে বন্ধু হিসেবে নিযুক্ত করা হয়।

নির্মোহী আখড়ার প্রধান ভাস্কর দাস ছিলেন রাম জন্মভূমি মামলার সব থেকে বয়স্ক মামলাকারী। ২০১৭ সালে ৮৯ বছর বয়সে তিনি প্রয়াত হন। গত শতকের ৩০ দশকের গোড়ার দিকে তিনি রামের জন্মস্থানের রক্ষক হিসেবে ফৈজাবাদে পিটিশন দাখিল করেছিলেন ১৯৫৯ সালে। তিনি দাবি করেছিলেন, বাবরি মসজিদ একটি মন্দিরের ওপরে দাঁড়িয়ে রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *