বেঙ্গল ওয়াচ নিউজ ডেস্ক: তিন মুসলিম যুবক নিশিন্দ্রা ঠাকুর পাড়ায় জগন্নাথ দেবের রথ তৈরি করলেন। মুসলিম ভাইদের তৈরি রথ ঘুরে বেড়াবে গ্রামের ওলিত গলিতে। গ্রামের কচিকাঁচা থেকে বৃদ্ধ সকলেই এই রথ টানবেন। ধর্মীয় মেরুকরণকে দূরে সরিয়ে রেখে এবার হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতির অনন্য নজির গড়ল মুর্শিদাবাদের ফরাক্কায়।

নিশিন্দ্রা ঠাকুরপাড়ার তনুশ্রী মিত্র জানান, বহু বছর ধরে গ্রামে রথ হয়ে আসছিল। কিন্তু প্রায় কয়েক বছর ধরে রথ বন্ধ থাকার পর, গত বছর আমরা ছোট করে রথ তৈরি করে ছিলাম। এবছর গ্রামের সকলে মিলে ঠিক করা হয় এবার আমরা লোহার রথ বানাবো এবং তারপরেই বেশ কিছু দোকানের কারিগরের সঙ্গে কথা বলেছিলাম। অনেকে বানাতে চাননি। শেষমেষ এই দোকানে আসলে দোকন মালিক এক কথায় রাজি হয়ে যান।

ফরাক্কার মেলা গেটের সামনে একটি গ্রিলের দোকানে রথ তৈরীর বায়না দেন। আর সেই বায়না সাদরে গ্রহণ করেন গ্রিলের দোকানের মালিক মোরসেলিম শেখ। এরপর অসীম খান, আমিরুল শেখের সাথে মিলে মাত্র আড়াই দিনের মধ্যে তৈরি করে ফেলেন ছ’ফুট উচ্চতার একটি রথ। প্রায় ৫৫ কেজি লোহা দিয়ে তৈরি এই রথের দৈর্ঘ্য আড়াই ফুট। নিষ্ঠার সঙ্গে রথ তৈরী করে দেন। সয়ং জয়নাথ ঠাকুর হয়তো মুসলিম ভাইদের হাতে তৈরী রথে ঘুরবেন, তাই এই দোকানে আমাদের পাঠায়েছেন।

দোকানের মালিক মোরসেলিম শেখ বলেন, গত সাত দিন আগে এই রথ তৈরী করার বয়না পায়। আড়াই দিনের মধ্যে রথ আমরা বানিয়েছি। ‘হিন্দু মুসলিম আমরা ভাই ভাই। আমাদের মধ্যে কোনও বিভেদ নেই। তাই হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতির বার্তা সকলের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্যই আমি এই বায়না নিয়েছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে আমরা মুসলমান ভাইয়েরা জগন্নাথদেবের জন্য এই রথ তৈরি করলাম। এই রথ দেখে যদি কারওর পছন্দ হয় তাহলে আবারও রথ তৈরি করতে আমরা প্রস্তুত।’

লোহার এই রথ তৈরীর কারিগর আমিরুল শেখ বলেন, ‘এই রথ তৈরি করতে পেরে আমরা খুবই খুশি। আড়াই দিন ধরে আমরা এই রথ তৈরি করেছি। হিন্দু মুসলিম আমরা ভাই ভাই।

একদিকে যেমন দীঘার জগন্নাথ মন্দিরের প্রসাদ বাড়ি বাড়ি পৌঁছে যাচ্ছে। সেই দীঘার জগন্নাথ মন্দিরের প্রসাদ হিন্দু-মুসলিম সব ধর্মের মানুষ সাদর আমন্ত্রণে গ্রহন করছেন। এবং ঘরে প্রসাদ পেয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে সবাই ধন্যবাদ জানিয়েছেন। সেইরকমই মুসলিম ভাইদের তৈরি রথে জগন্নাথ ঠাকুর গ্রামে গ্রামে ঘুরে বেড়াবে। সম্পৃতির বার্তা নিয়ে। এই চিত্রই দেখা গেল মুর্শিদাবাদের ফরাক্কার খুন্তিপাড়া গ্রিলের দোকানে। আড়াই দিন ধরে ৫৫ কেজি লোহা দিয়ে তৈরি রথ বানাছেন মুসলিম ভাইরে। আজকে সেই রথ চলে গেল ফরাক্কার নিশিন্দ্রা গ্রামের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *