বেঙ্গল ওয়াচ নিউজ ডেস্ক: চৈতন্য থেকে মহাত্মা গান্ধী, রামকৃষ্ণ থেকে বিবেকানন্দ আবার সাধক বুদ্ধদেব থেকে গুরু ননক – সকলেই ভারতকে শুনিয়েছে শান্তি, মৈত্রী ও বন্ধুত্বের কথা। এবার ২০২৫ সালে সেই শান্তি ও মৈত্রীর বার্তাই সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিতো চায় ভারত। ২০২৪ সালে নরেন্দ্র মোদীর শ্লোগান ছিল – ভারত ‘বিশ্ববন্ধু’ হতে চায়। আর ২০২৫ সালে সেই কাজকে আরও ফলপ্রসূ করতে ঝাঁপিয়ে পড়বে ভারত – এটাই কেন্দ্রীয় সরকারের এ বছরের প্রধান আন্তর্জাতিক কর্মসূচি।

 

আমরা লক্ষ করেছি, বর্তমান বাংলাদেশ সরকারের একাধিক নেতা মন্ত্রী প্রবল ভারত বিরোধিতা করা সত্ত্বেও মোদী সেই বিষয়ে কোনো শত্রুতার কথা না বলে, মহম্মদ ইউনুস রাষ্ট্র প্রধান হওয়ার পরেই তাঁকে শুভেচ্ছা পাঠান ও সম্প্রতি হিন্দুদের নিরাপত্তা দেবার অনুরোধ করেন। বিদেশ সচিব বিক্রম মিস্রি ডিসেম্বরে বাংলাদেশ সফরে গিয়েছিলেন। সেখানে গিয়েও তিনি জানান, বাংলাদেশের আমজনতার প্রতি ভারত তাদের সমর্থন জারি রাখবে। এদিকে হাসিনাকে ফেরত না দিলেও দিল্লির সঙ্গে স্বাভাবিক সম্পর্ক অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন বিদেশ উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। পাকিস্তানের সঙ্গেও সুসম্পর্ক স্থাপনের বার্তা দিয়েছেন ভারতের বিদেশমন্ত্রী জয়শঙ্কর।
বিদেশমন্ত্রী এস জয়শংকর ২০২৪ সালে পাকিস্তানে গিয়েছিলেন এসসিও সামিটে যোগ দিতে। ২০১৮ সালের পর এই প্রথম ভারতের কোনও প্রশাসনিক প্রতিনিধি সেদেশে গেলেন। তিনি বলেন, অন্য প্রতিবেশীদের মতো পাকিস্তানের সঙ্গেও গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি স্বাক্ষর করতে চায় ভারত।

প্রতিবেশী এই দুই দেশ ছাড়াও চিনের সঙ্গে দীর্ঘ ৭০ বছরের সীমান্ত সমস্যা মিটিয়ে নিতে অনেক দূর এগিয়ে গেছে ভারত। সাম্প্রতিক সময়ে চিন ও ভারত সামরিক ও কূটনীতিক দুই স্তরেই দুই দেশের সীমান্ত নিয়ে ঘনিষ্ঠ আলাপচারিতা চালিয়েছে বারবার। আর এবার দুই পক্ষই প্রাসঙ্গিক বিষয়ে ঐক্যমত্যে পৌঁছেছে। সেই চুক্তি স্বাক্ষরকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। আবার মধ্যপ্রাচ্যের গুরুত্বপূর্ণ বন্ধু হয়ে উঠতে উদ্যোগ নিয়েছে মোদী সরকার। ২০২৪ সালে সংযুক্ত আরব আমিরশাহি, কাতার ও কুয়েতে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এর মধ্যে আমিরশাহিতে দুই দেশের উচ্চপর্যায়ের বৈঠককে তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে।

আবার বিশ্বের অন্যতম দুই শক্তিধর দেশ – আমেরিকা ও রাশিয়ার সঙ্গে নিবিড় বন্ধন তৈরী করতে এগিয়ে গেছে ভারত। আমেরিকার সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক নিয়ে ২০২৫ সাল যে সকলের কৌতূহল থাকবে তা স্বাভাবিক। ২০২৪ সালের শেষলগ্নে ভোটে জিতে প্রত্যাবর্তন করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। জানুয়ারিতেই তাঁর শপথগ্রহণ। ট্রাম্পের সংঙ্গে মোদীর সম্পর্ক বন্ধুত্বের। একটা ট্রাম্পও বলেন। সেই সম্পর্ক আরও নিবিড় করে তুলতে চায় ভারত। অন্যদিকে রাশিয়া বরাবরই ভারতের ‘বন্ধু’। যদিও ইউক্রেনের সঙ্গে তাদের সংঘাতে যুদ্ধের বিরুদ্ধেই থেকে নয়াদিল্লি, তবুও সব মিলিয়ে পুতিনের হাতই ধরতে চেয়েছেন মোদি। ২০২৪ সালে রাশিয়া সফরে গিয়েছিলেন মোদি। এবছর দুই দেশের বার্ষিক সম্মেলনে যোগ দিতে এদেশে আসার কথা পুতিনের। আর শেষে আমরা দেখলাম বিশ্বের বহু দেশে ইতিমধ্যে ঘুরে এসেছেন নরেন্দ্র মোদী – ভারতের শান্তি ও বন্ধুত্বের বাণী নিয়ে। এমনকি উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে নতুন করে বন্ধুত্বের সম্পর্ক স্থাপনে উদ্যোগ নিয়ে সম্প্রতি সেখানে আবার ভারতীয় দূতাবাস খুলেছেন ভারত। এই সমস্ত সম্পর্ককে নতুন করে ঝালিয়ে নেওয়াই ২০২৫ সালে ভারতের প্রধান কর্মসূচি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *