বেঙ্গল ওয়াচ নিউজ ডেস্ক: কোটি টাকার সুপারি পাচারের ছক মণিপুরে ভেস্তে দিল অাসাম রাইফেলস। যার সঙ্গে উত্তরবঙ্গ যোগের স্পষ্ট প্রমাণ এখন সেনা গোয়েন্দাদের হাতে।
অসম হয়ে সেই বিপুল পরিমাণ সুপারি বীরপাড়া, চ্যাংরাবান্ধা, কোচবিহার, ফালাকাটা, ধূপগুড়ি, শিলিগুড়ি, রায়গঞ্জ, মুর্শিদাবাদ, নদিয়া এবং কলকাতার পঁচিশটি ঘাঁটিতে পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল পাচারচক্রের।
যে চক্রে উত্তরবঙ্গের একাধিক ব্যবসায়ী, শিলিগুড়ির প্রভাবশালী দুই ট্রাক মালিক, শুল্ক দপ্তরের তিন কর্তা এবং বারবিশা ও বাগডোগরার দুই জিএসটি মাফিয়ার নাম পেয়েছেন তদন্তকারীরা। তাদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ শুরু হয়েছে। অাসাম রাইফেলসের কাছে খবর ছিল, মায়ানমার থেকে একদিনে উত্তরবঙ্গে প্রায় ১০০ কোটি টাকার সুপারি পাচারের ছক কষা হয়েছে। মায়ানমারের সীমান্ত পার করে রওনা দেওয়ার সময়ই মণিপুরের তেংনৌপাল জেলার পাশাপাশি কয়েকটি এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৫৩টি ট্রাকে ৪৭ কোটি টাকার ওই সুপারি ধরে ফেলা হয় গত ১৩ নভেম্বর।
ট্রাকগুলি থেকে উদ্ধার হয় ৫,৪৪,০০০ কেজি (৬৮০০ বস্তা) সুপারি। তবে কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি সেনা। সকলেই পালিয়ে মায়ানমারে আশ্রয় নিয়েছে। ইতিমধ্যে পাচারচক্রের উদ্ধার করা কয়েকটি মোবাইল এবং একটি পকেট ডায়েরি ঘেঁটে পাচারে উত্তরবঙ্গ যোগের নানা তথ্য মিলেছে। এক গোয়েন্দা আধিকারিকের কথা, ‘পাচারে শিলিগুড়ির নাম বারে বারে এসেছে। উত্তরবঙ্গের আরও কয়েকটি জেলার যোগ আছে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত বিস্তারিত কিছু বলা যাবে না।’
গোয়েন্দা সূত্রের খবর, গুয়াহাটির কাছে অসম-মেঘালয় সীমানায় দুটি গোপন ঘাঁটিতে বদল হয় পাচারের ট্রাক। বদলে যায় লাইনম্যান ও লিংকম্যান। গোয়েন্দাদের আশঙ্কা, পশ্চিমবঙ্গে ঢোকার পর পুলিশের চোখে ধুলো দিতে ট্রাকগুলি রাজ্য পরিবহণ দপ্তরের ‘উত্তরের সুবিধা’ পোর্টালে নথিভুক্ত করা থাকে। ফলে ট্রাকগুলিকে আটকানো হয় না বা তল্লাশি চালানো হয় না।
অসম-মেঘালয় সীমানায় যে সব ট্রাক বদল হয়, সেগুলি শিলিগুড়ির দুই অবাঙালি ব্যবসায়ী সরবরাহ করে বলে গোয়েন্দাদের কাছে খবর পৌঁছেছে। একাধিক লিংকম্যানদের কাছে ‘শিলিগুড়ি নিউ বাজার’-এর নাম পেয়েছেন তাঁরা। নিউ বাজার বলতে খালপাড়ার নয়াবাজারের কথা বলা হচ্ছে বলে মনে করছেন স্থানীয় পুলিশকর্তারা।
উত্তরবঙ্গ হয়ে কলকাতা পর্যন্ত বিভিন্ন ঘাঁটিতে সুপারি পৌঁছোনোর এই চক্রে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের তদন্তে বারবার উঠে এসেছে জনৈক ‘বর্মন দাদা’র নাম। যার বাড়ি অসম এ। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা জানিয়েছেন উত্তরবঙ্গের ভৌগোলিক অবস্থান সুপারি পাচারকারীদের পক্ষে সুবিধা জনক হয়ে দাঁড়িয়েছে। সহজেই গা ঢাকা দিতে পারছেন তারা।