বেঙ্গল ওয়াচ নিউজ ডেস্ক: দু’দিনের উত্তরবঙ্গ সফরে গেছেন মুখ্যমন্ত্রী। মূলত উত্তরবঙ্গের বন্যা পরিস্থিতি নিজের চোখে তিনি দেখতে চান। উত্তরবঙ্গে যাওয়ার আগেবিমান বন্দরে ভিড়ে ঢাসা সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “উত্তরবঙ্গে বন্যা হয়েছে।
কোশী নদীর জল নেপাল ছেড়েছে৷ সেই জল বিহার হয়ে বাংলায় আসছে। মালদা, মুর্শিদাবাদ, দিনাজপুরে এর প্রভাব পড়বে। বিহারও ভাসবে৷ বাংলাও ভাসবে৷ ফারক্কায় ড্রেজিং হয় না। ফলে তারাও জল ধরে রাখতে পারে না। ফারাক্কা ব্যারেজ কেন্দ্র দেখে।” মমতা আগেই জানান, বন্যা কবলিত এলাকায় প্রশাসনের সঙ্গে নিরন্তর যোগাযোগ রেখেছেন। যাঁদের শস্যের ক্ষতি হয়েছে, তাঁরা শস্য বীমার টাকা পাবেন বলেও আশ্বাস দেন।
দক্ষিণবঙ্গে বন্যার জন্য প্রথম থেকেই কেন্দ্রকে নিশানা করছেন মমতা। ডিভিসির বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন তিনি। তাঁর অভিযোগ, ডিভিসি কোনও সতর্কতা ছাড়াই ইচ্ছেমতো জল ছাড়ে। উত্তরবঙ্গের উদ্দেশে রওনা দেওয়ার আগে রাজ্যের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে আবারও এক বার কেন্দ্রীয় সরকারকে নিশানা করলেন মমতা। তিনি স্পষ্ট জানালেন, বাংলার বন্যার কেউ খোঁজও নেয়নি। ক্ষোভের সঙ্গে তিনি বলেন, বিজেপি ভোট আসলে ব্যস্ত হয়ে পরে ভোট কেনার জন্য। তারপরে আর কোনো খোঁজ নেয় না।
এদিন কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তিনি সমস্ত ক্ষোভ উগ্রে দেন। রাজ্যকে না জানিয়ে ডিভিসি যেভাবে জল ছেড়েছে তার তীব্র প্রতিবাদ করেন তিনি। মমতার দাবি, আগে ফারাক্কার ১২০ কিমি দেখত কেন্দ্র, এখন মাত্র ২০ কিমি দেখে৷ তাঁর কথায়, ” নির্বাচনের সময় ওরা বড় বড় কথা বলে। আসে আর চলে যায়। মুখ্যসচিবকে পাঠিয়েছি৷ আজ বিকেল ৫’টায় আমরা প্রশাসনিক বৈঠক ডেকেছি।” মমতা আরও জানান, বৈঠকে থাকতে পারেন সেনা। না থাকলে তিনি কথা বলে নেবেন। নতুন রাস্তাও বানিয়ে দিয়েছেন বলে জানান। তিনি বিমান বন্দরে সাংবাদিকদের বলেন, উত্তবঙ্গে পৌঁছে তিনি সাংবাদিকদের বিস্তারিত জানাবেন।
উত্তরবঙ্গে প্রশাসনিক বৈঠক করে সবটা জেনে নিয়ে তিনি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন।
উত্তরবঙ্গের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে রবিবার উত্তরকন্যায় প্রশাসনিক বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। নেপালের কোশি নদী থেকে জল ছাড়ার কারণে উত্তরবঙ্গের একাধিক জেলা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বন্যা মোকাবিলায় কী কী পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন, তা নিয়ে প্রশাসনিক কর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেন তিনি। এই বৈঠকের পরেই সাংবাদিক বৈঠক করে মমতা বলেন, ‘এক দিকে পুজো। অন্য দিকে বন্যার ফাঁড়া। প্রতিটি ক্ষেত্রে মানুষের পাশে থাকতে হবে। পুজো বলে বন্যা ত্রাণের কাজে মানুষের পাশ থেকে সরে গেলে হবে না। এটিও একটি সেবা। বন্যাত্রাণে মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে।’ তিনি বলেন এই মুহূর্তে বড়ো কাজ মানুষের সেবায় এগিয়ে আসা। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের শস্য বিমার পাওয়ার ব্যাপারে আশ্বস্ত করেন মুখ্যমন্ত্রী।
তিনি জানান, শস্য বিমার জন্য প্রতি বছর ৩১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দেওয়া থাকে। কিন্তু এ বার সেপ্টেম্বেরের শেষ সপ্তাহে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সেই কারণে, শস্য বিমার আবেদনের সময়সীমা ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে। এর পাশাপশি শিলিগুড়ি বিধান মার্কেটে অগ্নিদগ্ধ দোকানের মালিকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়। এমন কি অবৈধভাবে বিদ্যুৎ হুক করতে গিয়ে একই পরিবারের বেশ কয়েকজন মারা গেছেন। তাদের পরিবারকেও অর্থ সাহায্য করার কথা ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী।
তিনি আরও জানান, “কেন্দ্রীয় সরকার বন্যায় আমাদের এক পয়সাও দেয় না। যদিও বন্যা নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ কেন্দ্রের অধীনে। ফারাক্কা বাঁধও ড্রেজ়িং করা হয় না। ঠিক মতো ড্রেজ়িং করলে ফরাক্কা বাঁধে আরও জল জমা রাখতে পারত। সেই কারণে বিহারও ডোবে, বাংলাও ডোবে।” উল্লেখ্য, বৃষ্টি এবং বন্যা পরিস্থিতির সময় গ্রামাঞ্চলগুলিতে সাপের উপদ্রবও বৃদ্ধি পায়। সে দিকেও নজর রেখেছেন মুখ্যমন্ত্রী। সাপের কামড়ে যাতে কারও মৃত্যু না হয়, সেই কারণে প্রতিটি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অ্যান্টিভেনম মজুত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। সাধারণ মানুষের উদ্দেশেও তাঁর বার্তা, সাপে কামড়ালে বাড়িতে ফেলে না রেখে দ্রুত নিকটবর্তী স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যেতে হবে। রবিবার সন্ধ্যার সাংবাদিক বৈঠক থেকে বিশেষ করে গঙ্গা পার্শ্ববর্তী এলাকার বাসিন্দাদের সতর্ক করে দেন মুখ্যমন্ত্রী। অনুরোধ জানান, এখন বাড়ি সংলগ্ন এলাকায় জল না থাকলেও তাঁরা যেন সরকারি ত্রাণ শিবিরে গিয়ে আশ্রয় নেন। কারণ, বাঁধ থেকে ছাড়া জল আসতে কিছুটা সময় লাগবে। মহালয়ার ভরা কোটাল শেষ না হওয়া পর্যন্ত এবং যতক্ষণ না আবহাওয়া দফতর সবুজ সংকেত দিচ্ছে, ততক্ষণ কষ্ট করে হলেও ত্রাণ শিবিরে থাকার জন্য অনুরোধ করেন মমতা।