বেঙ্গল ওয়াচ নিউজ ডেস্ক:বাঙ্গালিদের বার মাসে তের পার্বন।বার মাসে তের পার্বনের মধ‍্যে সর্ব শ্রেষ্ট পার্বন হল শারদীয় দূর্গোৎসব।দূর্গা পূজো এলেই বাঙ্গালিদের মন আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে ওঠে।

 

দূর্গা পূজো মানে নতুন কাপড়,আনন্দ উল্লাস,বন্ধু-বান্ধবদের সাথে চুটিয়ে আড্ডা ও রকমারি খাবার দাবার।একটি বছরের অপেক্ষায় বসে থাকা কখন শারদীয় দূর্গোৎসব আসবে আর বন্ধুবান্ধব,আত্মীয় পরিজনরা দলবেঁধে মণ্ডপে মণ্ডপে মায়ের দর্শন করতে যাওয়া যাবে।শহর থেকে গ্রাম সবখানেই দেবী মায়ের আরাধনায় সামিল হন পূজো উদ্যোক্তারা।চারিদিকে শিউলি ফুলের গন্ধ।কুমোর পাড়া থেকে শুরু করে মালা শিল্পী,ঢাকি ও পুজোমণ্ডপে শিল্পীদের চরম ব্যস্ততা।দোকান গুলিতে কেনাকাটার ধুম।এক কথায় যেন চারিদিকে পূজো পূজো গন্ধ।দেবী দশ ভূজার মর্তে আগমন উপলক্ষ ইতিমধ‍্যে মর্তবাসী পাড়ায় পাড়ায় দেবীর পূজো মন্ডপ তৈরী করে দেবীকে বরন করার জন‍্য চুরান্ত প্রস্তুতি নিচ্ছে।গোটা রাজ্যের সাথে উত্তর জেলার বানিজ্য নগরী হিসেবে পরিচিত ধর্মনগর শহরে বড় বাজেটের পূজো করছেন ক্লাব ও সার্বজনীন দূর্গা পূজো কমিটির পূজো উদ্যোক্তারা।ধর্মনগর শহরে ছোট-বড় প্রায় ২৮ থেকে ত্রিশটি দূর্গা পূজো হয়ে থাকে।তারমধ্যে ৮ থেকে ১০ টি বড় বাজেটের পূজো রয়েছে। বনেদি ক্লাব ও পূজো কমিটির আপ্রান চেষ্টায় বিভিন্ন আকর্ষণীয় থিমের উপর রয়েছে এবারের পূজো প্যান্ডেল।রয়েছে কাল্পনিক আদলে তৈরি মন্দিরও।শহরের প্রাণ কেন্দ্রে বড় বাজেটের মধ্যে আপনজন ক্লাব,পদ্মপুর ক্লাব,এগিয়ে চলো ক্লাব,নয়াপাড়া সার্বজনীন দুর্গাপূজা কমিটি,ক্লাব কনসেনসাস্,মধ্যশহর সার্বজনীন দুর্গাপূজা কমিটি,নবরাগ সংঘ

ইত্যাদি। প্রতিবছর প্রত্যেকটি ক্লাব ও সার্বজনীন পূজা কমিটি দর্শনার্থীদের কিছু নতুনত্ব দেওয়ার প্রয়াস করে থাকেন।এবারও তার ব্যতিক্রম নেই।অধিকাংশ বড় বাজেটের পুজো প্যান্ডেল গুলি থিম ও কাল্পনিক আদলে মন্দিরে তৈরি করছেন।যেমন আপনজন ক্লাব তাদের দশ লাখ টাকার পূজোর বাজেটে মা আসছেন অত্যাচারিত নারীর ভয়ংকর রুপে।এবারের তাদের পূজো ৬১ তম বছরের।ক্লাব কর্তৃপক্ষরা জানান,পূজো উপলক্ষে থাকছে রক্ত দান,বস্ত্র বিতরণ,দুস্হ ছাত্র ছাত্রীদের বই পুস্তক বিতরণ সহ মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে আর্থিক অনুদান।মধ্য শহর ক্লাবের এবারের পূজার থিম অরন্য কন্যা। সতেরো লাখ টাকার এবারের তাদের পূজো ১২ তম বছরের। প্যান্ডেল ও মন্ডপ তৈরি করছেন নবদ্বীপ ও মেদিনীপুরের সুনামধন্য শিল্পীরা। রয়েছে মূর্তিতে বিশেষত্ব।এবছর জেল রোড ক্লাব কনসেনসাস্ তৈরি করছে সুবিশাল মন্দিরের আদলে প্যান্ডেল।এগিয়ে চলো ক্লাবের এবারের থিম নর্থ কেরলের উপজাতিদের ফেস্টিভ্যাল থিয়াম আর্ট ফর্মের আদলে।২৩ লাখ টাকা ব্যয়ে ৫৫ তম বছরের এবারের তাদের পূজো। স্হানীয় আর্টিস্ট সুরাজ ঘোষ সহ কদমতলা আর্ট এন্ড ক্রাফ্টের আর্টিস্ট ও ছাত্র ছাত্রীরা তৈরি করছে গোটা পূজো প্যান্ডেল।প্যান্ডেলে ব্যবহার করা হচ্ছে কলাগাছ,নারিকেল পাতা,সুপারি পাতা, নারিকেল,কলা ছড়ি,আখ ইত্যাদি।পদ্মপুর ক্লাবের পূজো প্যান্ডেল দীর্ঘ একমাস যাবৎ ধুবড়ি ও কুচবিহারে ষোল জন শিল্পী দ্বারা নির্মাণ করা হচ্ছে।কুড়ি লাখ টাকা ব্যয়ে ৪৬ তম বছরের এবারের তাদের পূজোর থিম পঁয়ষট্টি ফুটের কাল্পনিক মন্দির।নয়াপাড়া সার্বজনীন দূর্গা পূজোয় এবারের থিম স্বপ্নের ভূবন।মূলত প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা নিয়ে তাদের থিম।সাড়ে এগারো লাখ টাকা ব্যয়ে এবারের তাদের পূজো ৪৭ তম বছরের। তাছাড়া সাউন্ড ও লাইটের উপর থাকছে বিশেষত্ব। তবে প্রতিটি প্যান্ডেল নির্মাণে অধিকাংশ শিল্পীরা নবদ্বীপ ও বৃন্দাবনের।আবার অনেক উঁচু উঁচু প্যান্ডেল রাজ্যের দক্ষ শিল্পীরাও নির্মাণ করছেন।দিনরাত একাকার করে প্যান্ডেলের কাজ করে যাচ্ছেন রাজ্যের ও বহিঃ রাজ্যের শিল্পীরা।দুর্গা পূজো কমিটি থেকে শুরু করে প্যান্ডেলের শিল্পীরা আশাবাদি,পঞ্চমীর আগেই প্যান্ডেলের কাজ শেষ করতে পারবেন।এক কথায় দর্শনার্থীদের মন কাড়তে প্রতিটি ক্লাব ও পুজো কমিটির যেন এক অঘোষিত প্রতিযোগিতা।আর পঞ্চমী থেকেই দেবী মায়ের দর্শনে প্রতিটি ক্লাব ও সার্বজনীন পূজা প্যান্ডেলে দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড় লেগে পড়ে, চলে দশমী পর্যন্ত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *