বেঙ্গল ওয়াচ নিউজ ডেস্ক:রাজা রামমোহন রায়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ও মহানায়ক উত্তমকুমারের স্মৃতি বিজড়িত চন্দ্রকোনার জাড়া জমিদার বাড়ির দুর্গাপুজো।

 

এবছর ২২৫ তম বর্ষে পদার্পণ করতে চলেছে জাড়ার রায় বাড়ির পুজো, জোর কদমে চলছে পুজো প্রস্তুতি। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ঘাটাল মহকুমার চন্দ্রকোনা ১ ব্লকের জাড়া গ্রামের জমিদার বাড়ির রায়বাবুদের পরিবার হিসাবে আজও পরিচিত। রাজা রামমোহন রায়ের বন্ধু ছিল জমিদার রাজীবলোচন রায়।তাই জাড়া গ্রামে যাতায়াত ছিল রাজা রামমোহন রায়ের। তেমনই জাড়া জমিদার বাড়ির সাথে সখ্যতা ছিল ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের। জমিদার পরিবারের আমন্ত্রণে জাড়া স্কুলের স্থাপনা করেছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, তৎকালিন সময়ে জমিদার বাড়িতে বেশ কয়েকবার এসেছিলেন বিদ্যাসাগর, এমনই দাবি বর্তমান জাড়া জমিদার বাড়ির পরিবারের সদস্যদের। এমনকি জাড়া জমিদার বাড়িতে মহানায়ক উত্তমকুমার তার ‘অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি’ ছবির শুটিং করেছিলেন, যা ‘অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি’ ছবিতে একটি গানের মাধ্যমে উল্লেখ রয়েছে। সেই গানটি হল, ‘কি করে বললি জগা জাড়ার গোলক বৃন্দাবন, যেখানে বামুন রাজা চাষী প্রজা, চারিদিকে তার বাঁশের বন।’ এই জাড়ার জমিদার বাড়িতে কবি গানের আসর বসতো, বিখ্যাত কবিয়াল ভোলা ময়রা নাকি এই গান বেঁধে ছিলেন যা ‘অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি’ ছবিতেও তুলে ধরা হয়।এমনই স্মৃতি বিজড়িত জাড়া জমিদার বাড়ির দুর্গা পুজোও হত মহাসমারোহে। জমিদার বাড়িতে দুর্গা পুজোর পাশাপাশি কালী, বিষ্ণুদেবতা, শিব সহ একাধিক দেবদেবীর মুর্তি ও মন্দির রয়েছে, এখনও তিন বেলা ভোগ চড়িয়ে নিত্যসেবা করা হয়। ১১৫৫ বঙ্গাব্দে (১৭৪৮ খ্রীস্টাব্দ) জাড়া জমিদার বাড়ির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন রাম গোপাল রায়। পরবর্তী সময়ে তার ছেলে রাজা রাজীবলোচন রায় বর্ধমান রাজার থেকে ‘রাজা’ উপাধি পেয়েছিলেন তারপর থেকে জমিদারি আরও বিস্তারলাভ করে এবং তিনিই জমিদার বাড়িতে দুর্গা পুজোর সূচনা করেছিলেন।তৎকালীন সময়ে পুজোতে বহু মনীষী আমন্ত্রিত হিসাবে আসতেন বলে জানান জমিদার বাড়ির বর্তমান সদস্যরা। আগে পুজোর সময় কবি গানের আসর, যাত্রাপালা, নঙ্গর খানা চলতো পুজোর ৬-৭ দিন, পাশাপাশি ১০-১৫ টি গ্রামের মানুষ ভিড় জমাতো পুজোয়, চলতো নরনারায়ণ সেবা।রুপোর পালকিতে করে গ্রামের একটি পুকুরে শোভাযাত্রা করে নবপত্রিকা স্নান হত। বর্তমানে জমিদারিত্ব নেই তবে রয়ে গিয়েছে জমিদার বাড়ির বিশাল প্রাসাদ, যা এখন ভগ্নপ্রায়, আগাছায় ঢাকা।জমিদার বাড়ির ২১ টি পরিবার এখনও বসবাস করেন কিন্তু তাদের অধিকাংশই এখন কর্মসূত্রে ভিন রাজ্য বা ভিন দেশে।তবে পুজোর সময় অনেকেই হাজির হয় জমিদার বাড়ির দুর্গা পুজোয়। এবছর জাড়া জমিদার বাড়ির দুর্গা পুজো আনুমানিক ২২৫ তম বর্ষে পদার্পন করবে। পুজোয় আগের মতো জৌলুস না থাকলেও আগের মতোই সমস্ত রীতিনীতি মেনেই পুজোর আয়োজন হয়ে থাকে। বৈষ্ণব মতে জমিদার বাড়িতে দুর্গা পুজো হওয়ায় কোনও বলি হয়না। তবে নবপত্রিকা স্নান শোভাযাত্রা করে যাওয়া হয় এবং বিসর্জনের দিন পরিবারের সকল সদস্য মিলে বিসাদের সুরে গান গেয়ে মাকে নিয়ে যাওয়া হয় গ্রামের পুকুরে বিসর্জনের জন্য। জমিদার বাড়িতে পুজোর দিনগুলিতে মায়ের জন্য ভোগ রান্না থেকে নাড়ু তৈরি একমাত্র অগ্রাধিকার পাই পরিবারের মহিলারই। দুরদুরান্তের গ্রামের বহু মানুষ ভিড় জমায় পুজো কদিন, তাদের জন্য খিচুড়ি প্রসাদের আয়োজন থাকে। এছাড়াও নরনারায়ণ সেবারও ব্যাবস্থা করা হয় পুজোয়। পুজোর হাতে আর কটাদিন তাই এখন থেকেই জাড়া জমিদার বাড়িতে প্রস্তুতিও শুরু হয়ে গিয়েছে জোরকদমে। বাইরে থেকে প্রতিমা আনা হয়না জমিদার বাড়িতে, জমিদার দালান বাড়িতেই বংশপরম্পরা মৃৎশিল্পী দিয়ে একই মেড়ে তৈরি হয় দুর্গা, লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক, গনেশ। প্রতিমা তৈরির কাজও চলছে জোরকদমে। পুজোর আগে সেজে উঠছে চন্দ্রকোনার স্মৃতি বিজড়িত জাড়া গ্রামের জমিদার বাড়ি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *