বেঙ্গল ওয়াচ নিউজ ডেস্ক:বৃহস্পতিবার সকাল ৮.২০ মিনিটে নিজের ফ্ল্যাটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বাংলার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। বামপন্থীদের সামনে তিনি রেখে গেলেন অনেকগুলো প্রশ্ন। প্রথম প্রশ্ন, তাঁর জীবনচর্যা! তাঁকে কখনো পোস্টার লিখে নিজেকে জানাতে হয় নি -‘সততার প্রতীক।
‘ তিনি যথার্থ অর্থেই সততার প্রতীক। আজ যখন বাংলার বহু পৌরসভার প্রধানের একতলা বাড়ি তিন তলা হয়েছে। একটা মোটর সাইকেল বা সাইকেল হারিয়ে গিয়ে ৩/৪ তে বিদেশি গাড়ি হয়েছে। সেই অবস্থাতেও প্রয়াত বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য চিরকাল একটা ৪২০ স্কোয়ার ফুট ফ্ল্যাটে থেকে গেছেন। তাই তো তিনি ‘ব্র্যান্ড বুদ্ধ’।
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ছিলেন একজন একনিষ্ঠ বাম মনস্ক মানুষ। তাই তিনি সরকারের পক্ষ থেকে একাধিক ফ্ল্যাট ও গাড়ি পেলেও তিনি মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন শেষদিন পর্যন্ত সেই সরকারি নন A/C এম্বাসডার গাড়ি ব্যবহার করেছেন। তাই তিনি ‘ব্র্যান্ড বুদ্ধ’!
ক্ষমতায় থাকার সময়ে যে বুদ্ধদেব সমালোচনায় বিদ্ধ হতেন বারবার। সেই তিনিই হয়ে উঠেছেন বাংলার বর্তমান মসীহা! নেটাগরিকদের একাংশের কাছে সবচেয়ে স্বচ্ছ ভাবমূর্তি বহুল মুখ্যমন্ত্রীও! একমাথা সাদা চুল, ধবধবে সাদা ধুতি, ফতুয়ার কালো দাগহীন বিরাজে সেই বুদ্ধই যেন হয়ে উঠেছেন পূর্ণিমার বঙ্গ-চাঁদ! তাঁর না থাকায় একাধিক অভাব খুঁজে পেয়েছে জনতা। কারণ তি নি তো ‘ব্র্যান্ড বুদ্ধ’।
তার মানে এই নয় যে তিনি ছিলেন বিতর্কের উর্দ্ধে। আসলে বিতর্কের উর্দ্ধে কেউ হয় না। বার বার করে তিনি বিতর্ক জড়িয়েছেন। কিন্তু কখনো বামপন্থা থেকে বিচ্যুত হন নি।
অনেকেই বলেন, জ্যোতি বসুর জীবনে ‘ঐতিহাসিক ভুল’ ছিল বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে নিজের উত্তরসূরি হিসেবে বাছা! আবার কেউ কেউ দাবি করেন, প্রমোদ দাশগুপ্তের পছন্দের বুদ্ধ ‘অনিলায়নে’র ভাঙনে সক্রিয় ছিলেন বরাবর! তাই নাকি বামেদের অন্দরে খুব একটা পছন্দের পাত্র ছিলেন না সংস্কৃতিপ্রেমী বুদ্ধদেব। কিন্তু মেরুদন্ড ছিল সোজা ও অভঙ্গুর। তাই তিনি ‘ব্র্যান্ড বুদ্ধ।’
প্রেসিডেন্সি কলেজের গন্ডি পেরিয়ে বুদ্ধের বিস্তার ঘটেছে প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে। পূর্ববঙ্গের সন্তানের কলকাতা যাপনে ততদিনে সঙ্গী হয়েছেন কার্ল মার্ক্স। ১৯৬৬ নাগাদ সিপিএমের প্রাথমিক সদস্যপদ। তারপর ১৯৭৭ সাল কাশিপুর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে নির্বাচন লড়লেন বুদ্ধদেব। সেই শুরু! তারপরে চলেছে এক ঐতিহাসিক লড়াই। সেখানেও তিনি ‘ব্র্যান্ড বুদ্ধ’।
‘ব্র্যান্ড বুদ্ধ’ হয়ে ওঠার পিছনে তাঁর প্রধান ভূমিকা ছিল বাংলায় শিল্পায়ন। আর সেটাই হয়তো তাঁর পরাজয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। সেখানেও তিনি ‘ব্র্যান্ড বুদ্ধ’। নিজের হাতে থাকা লাল পতাকাকে তিনি কখনো কলুষিত হতেই দেন নি। এই মুহূর্তে যখন বাংলার নেতা মন্ত্রীরা অনেকেই চুরির দায়ে জেলে, অনেকে আবার জেলে ঢোকার প্রতীক্ষায়, তখন সাধারণ মানুষ কিন্তু বলেন, ‘কই বুদ্ধুদেব ভট্টাচার্যের সময় তো এমন ছিল না’। আসলে এটাই প্রকৃত ‘ব্র্যান্ড বুদ্ধ।’