*সংক্ষেপে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য*

— মদনমোহন সামন্ত, ৮ আগস্ট ২০২৪ :
আজ আট আগস্ট ২০২৪ বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা ২০তে (মতান্তরে ৮টা ৩০এ) দক্ষিণ কলকাতার পাম এভিনিউএ তাঁর নিজ বাসভবনে প্রয়াত হয়েছেন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর উত্তরসূরি ২০০০ থেকে ২০১১ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করা রাজ্যের সপ্তম প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ও প্রাক্তন পলিটব্যুরো সদস্য বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য।

বার্ধক্যজনিত এবং শ্বাসজনিত অসুস্থতার জন্য বেশ কিছুদিন ধরেই ভুগছিলেন। মাঝে মাঝেই চিকিৎসার জন্য তাঁকে হাসপাতালে যেতে হত। গত বছর ২৯ জুলাই তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। সেবার তাঁকে জীবনদায়ী ব্যবস্থার সাহায্য নিতে হয়েছিল। তবুও তিনি প্রত্যাবর্তন করেছিলেন গত বছরের ৯ আগস্টেই। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল আশি বছর। রেখে গেলেন তাঁর স্ত্রী মীরা ও কন্যা সুচেতনা তথা পুত্র সুচেতনকে।

শৈলেন্দ্র সরকার বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র বুদ্ধদেব তৎকালীন প্রেসিডেন্সি কলেজের বাংলা সাহিত্যের অনার্স প্রাক্তনী রাজনীতিতে আসার আগে দমদমের আদর্শ শঙ্খ বিদ্যামন্দির স্কুলের শিক্ষক ছিলেন।

একাধারে কবি, অনুবাদক, নাট্যকার এবং বিধায়ক, গৃহ ও পার্বত্য মন্ত্রণালয়, তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রী, নগরোন্নয়ন মন্ত্রী, রাজ্যের তৃতীয় উপ মুখ্যমন্ত্রীর পদ সামলে তিনি মুখ্যমন্ত্রীত্বের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। ১৯৭৭-৮২ ছিলেন কাশীপুর-বেলগাছিয়ার বিধায়ক। হয়েছিলেন তথ্য ও জনসংযোগ মন্ত্রী। ১৯৮৭তে যাদবপুর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত হয়ে ২০১১ পর্যন্ত ছিলেন। ‘চোরেদের সরকারে’ থাকবেন না বলে ১৯৯৩তে পদত্যাগ করেন, যদিও পরে আবার যোগ দেন। ২০২২এ পদ্মভূষণ পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেন।

তৎকালীন ব্রিটিশ অধিকৃত বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির উত্তর কলকাতায় 1লা মার্চ ১৯৪৪এ জন্ম কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের ভাইপো বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের। পুরোহিত দর্পণের প্রণেতা কৃষ্ণচন্দ্র স্মৃতিতীর্থ তাঁর দাদু ছিলেন। নেপালচন্দ্র ভট্টাচার্যের পুত্র বুদ্ধদেব পার্টি সদস্যপদ গ্রহণ করেন ১৯৬৬তে। ‘৬৮তে ডিওয়াইএফআইয়ের রাজ্য সম্পাদক নির্বাচিত হন। ‘৭২এ নির্বাচিত হন রাজ্য কমিটিতে। ‘৮২তে রাজ্য সেক্রেটারিয়েটের অন্তর্ভুক্ত হন। ২০১৫তে পলিটব্যুরো থেকে পদত্যাগ করেন , ২০১৮তে রাজ্য সেক্রেটারিয়েট সদস্যপদ ছেড়ে দেন।

তাঁর অনুবাদিত বিপন্ন জাহাজের এক নাবিকের গল্প, দুঃসময়, এই আমি মায়াকভস্কি, চিলিতে গোপনে সহ ফিরে দেখা (প্রথম ও দ্বিতীয় পর্ব), নাৎসি জার্মানির জন্ম ও মৃত্যু, ও শেষতম স্বর্গের নিচে মহাবিশৃঙ্খলা বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল।

আপাতত তাঁর মরদেহ তাঁর পাম অ্যাভিনিউয়ের বাসভবনেই থাকবে। তাঁর শেষ ইচ্ছানুযায়ী চক্ষুদানের ব্যবস্থা হয়েছে। দুপুর ১২:৩০টায় পিস ওয়ার্ল্ডে তাঁর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে। আগামীকাল সকাল ১০:৩০ থেকে ৩১, আলিমুদ্দিন স্ট্রিট, সিপিআই(এম) রাজ্য দপ্তর মুজফ্ফর আহমদ ভবনে সর্বসাধারণের শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের জন্য শায়িত থাকবে তাঁর মরদেহ। এরপর সেখান থেকেই বিকাল ৪টা নাগাদ বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মরদেহ নিয়ে শোক মিছিল করে নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজে মরণোত্তর দেহদান করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *