বেঙ্গল ওয়াচ নিউজ ডেস্ক: লোকসভা নির্বাচনের শেষ দফায় ভোট হবে পশ্চিমবঙ্গের ৯টি আসনে। তার আগে সারদা কেলেঙ্কারির কথা তুললেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সারদা কেলেঙ্কারিতে যুক্ত থাকার নথি তাঁর কাছে রয়েছে বলে দাবি শুভেন্দুর। আজ তিনি, শিশির বাজোরিয়া ও জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় বিজেপির তরফে যান নির্বাচন কমিশনের দফতরে।
মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক আরিজ আফতাবের কাছে বেশ কয়েকটি দাবি পেশ করেন বিজেপি নেতৃত্ব। সেই সংক্রান্ত ব্যবস্থা ইতিমধ্যেই সুনিশ্চিত হয়েছে বলে দাবি শুভেন্দুর। তিনি বলেন, আগের দফাগুলির মতো বিজেপির পোলিং এজেন্টদের পুলিশ গ্রেফতারের পরিকল্পনা করেছে।
শুভেন্দুর কথায়, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ মেনে কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল কয়েকজন ওসিকে দিয়ে বিরোধীদের এজেন্ট, নেতাদের গ্রেফতারের ছক করছেন কলকাতায়। মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক শুভেন্দুর কাছে পোলিং এজেন্টদের নাম চেয়েছেন। সাফ জানিয়েছেন, আদালতের পেন্ডিং ওয়ারেন্ট ছাড়া কাউকে গ্রেফতার করা যাবে না।
শুভেন্দু বলেন, বিজেপি-সহ অন্য দল, এমনকী নির্দলদের উদ্দেশে বলছি যদি ১০৭-এর নোটিশ থাকে তাহলে আদালতে আগাম জামিন না। ৪১-এর ধারায় নোটিশ না দিলে পুলিশ ডাকলে থানায় যাবেন না। বাড়ির দরজা খুলবেন না। পুরানো মামলায় এফআইআরে নাম না থাকা সত্ত্বেও পুলিশ গ্রেফতার করছে, ভোটের দিন পোলিং এজেন্টদের থানায় বসিয়ে রাখা হচ্ছে বলেও উদাহরণ দেন শুভেন্দু। বলেন, অবৈধভাবে গ্রেফতার করায় সন্দেশখালির কয়েকজনকে কলকাতা হাইকোর্ট অবিলম্বে মুক্তির নির্দেশ দিয়েছে।
শুভেন্দু এদিন জানান, শেখ শাহজাহানের মতো বড় গুণ্ডা শওকত মোল্লাকে নজরবন্দি করেছে নির্বাচন কমিশন। আমাদের দাবি, ফলতার জাহাঙ্গির খান এবং ডায়মন্ড হারবারের গৌতম অধিকারী, শামিমদের জন্যও একই পদক্ষেপ করতে হবে। আমরা খুশি ৯০ শতাংশ জায়গায় ভোট ঠিক হয়েছে, ১০ শতাংশ ক্ষেত্রে চুরি করেছে।
মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক জানিয়েছেন, সুন্দরবনের কয়েকটি বুথ বাদে সর্বত্র ওয়েব কাস্টিং ক্যামেরা চালু রেখে ভোট করাতে হবে। শুভেন্দু বলেন, যেখানে নেটওয়ার্কের সমস্যা সেই বুথগুলির তালিকা চেয়েছি। সেখানে সাংবাদিকরা বা আমাদের প্রার্থী ও এজেন্টরা সতর্ক থাকবেন। গণতন্ত্রের মহোৎসবে ডু অর ডাই। ছেড়ে কথা বলব না।
শুভেন্দুর দাবি, ষষ্ঠ দফায় ৪৭৪টি জায়গায় ওয়েব কাস্টিং ক্যামেরা অফ ছিল। বিজেপি অভিযোগ জানানোর পর অনেকগুলি চালু হয়। লোডশেডিং করে, তার খুলে রাখা হয়েছিল। ১৫০-র মতো বুথে ক্যামেরা বন্ধ ছিল। তার মধ্যে ৭০টি কেশপুরেই। সংখ্যালঘু অধ্যুষিত বুথেই বেশি কারচুপি হয়েছে। আশা করি, সপ্তম দফায় তা হবে না। কারণ, মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক জানিয়েছেন, কোনও কারণে ক্যামেরা যতক্ষণ বন্ধ থাকবে, ততক্ষণ ভোট বন্ধ থাকবে।
গণনায় কারচুপির আশঙ্কাও করছে বিজেপি। ২০২১ সালের গণনায় আইপ্যাকের কর্মীরা গণনাকেন্দ্রে ছিলেন বলে অভিযোগ। শুভেন্দুর অভিযোগ, অনেক জেলাশাসক ৩১ মে-র মধ্যে কাউন্টিং এজেন্টদের তালিকা চাইছেন। কিন্তু মুখ্য নির্বাচন আধিকারিক বলেছেন, ১ তারিখের মধ্যে দিতে। ওইদিন বিকেলে আমরা দেব। তবে তালিকা যাতে আইপ্যাক-সহ অন্য কারও কাছে না যায় তার দায়িত্ব নিতে হবে কমিশনকে।
সপ্তম দফায় কেন্দ্রীয় বাহিনীর কোম্পানির সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। বাড়ছে ক্যুইক রেসপন্স টিমের সংখ্যা। শুভেন্দু বলেন, গণনাকেন্দ্রে ক্যাজুয়াল, কনট্রাকচুয়াল কর্মী বা আইপ্যাকের কাউকে রাখা যাবে না। যাঁরা জল বা অন্য কিছু এনে দেবেন তাঁদের গ্রুপ ডি কর্মী হওয়া বাধ্যতামূলক। গ্রুপ সি থেকে উপরের ধাপ অবধি কর্মীরা গণনা চালাবেন। প্রত্যেকের কাছে রাখতে হবে রাজ্য বা কেন্দ্রীয় সরকারি অফিসের পরিচয়পত্র।
শুভেন্দু বলেন, আইপ্যাকের চোর-চিটিংবাজ আর কয়েকজন আইপিএস সব করতে পারেন। আমরাও সতর্ক। গণনাকেন্দ্রে আইপ্যাকের কেউ থাকলে খানাকুলের মতো সমান ধোলাই হবে। অন দ্য রেকর্ড বলছি। যা পারেন করে নিন। আমি ভয় পাই না। খানাকুলে সাইজ করেছেন জনগণ। গণনাকেন্দ্রে আইপ্যাক থাকলে তেমনটা আমরা করব।
শেষ দফার ভোটের আগে শুভেন্দু বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ির ল্যান্ডলাইনের ফোনের বিল, ইলেকট্রিকের বিল সারদা মিটিয়েছে। সেই নথি আমার কাছে আছে। এখন উনি ছবি আঁকেন না কেন? যা আগে কিনতেন গৌতম কুণ্ডু, সুদীপ্ত সেনরা। উনি চোর, বড় ডাকাত। চুরি করলে জেলে যেতেই হবে। হেমন্ত সোরেন, কেজরিওয়ালদের জেল হলে উনি কেন পার পাবেন? জয়ললিতা যদি জেল খাটতে পারেন, উনি কেন পারেন না?