বেঙ্গল ওয়াচ নিউজ ডেস্ক:কলকাতা সহ সারা দক্ষিণবঙ্গ তখন পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে প্রচন্ড দাবদাহে। জ্বলছে উত্তরবঙ্গ। এই অবস্থায় এই অবস্থায় নিজের স্বামী প্রদীপ রায়ের মৃত্যুর প্রতিবাদ এবং অভিনব স্মরণ সভায় হাজার হাজার সাধারণ মানুষকে ঠান্ডা শরবত খাইয়ে মৃত্যুবার্ষিকী পালন করলেন বাগুইআটির মহিলা ব্যবসায়ী কাবেরী রায়।

এই অনুষ্ঠানে কাবেরী দেবীর পাশে ছিলেন নিজের ভাই পার্থ দত্তগুপ্তের উপস্থিতি। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কাবেরী দেবীর মেয়ে লাবণ্য, জামাই পৃথ্বীজিৎ, ছেলে ইন্দ্রজিৎ এবং ছোট্ট ফুটফুটে নাতি রিক। প্রচন্ড দাবদাহে সমগ্র অনুষ্ঠান উপভোগ করলেন বাগুইআটির সমস্ত ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সব ধরনের মানুষ। প্রচন্ড গরমে ঠান্ডা শরবত খাওয়ানোর জন্য প্রদীপ রায় এবং কাবেরী দেবীকে আশীর্বাদ করলেন সকলেই। ২০০৪ সাল। তখন অগ্নিগর্ভ বাগুইআটি।

প্রমোটিং ব্যবসায়ী যোগদান প্রদীপবাবু। সেটাই তার জীবনের কাল হয়ে দাঁড়ায় ‌ তখন এলাকার বিভিন্ন অঞ্চলে চলছে তোলাবাজি, গুন্ডারাজ এর তাণ্ডব। দু একটি প্রোমোটিং এ করে তিনি সাফল্য পান। সেটাই তার জীবনের কাল হয়ে ওঠে। প্রচন্ড হিংসায় জ্বলে উঠতে থাকেন তার নিজের পরিবারের কয়েকজন আত্মীয়। অভিযোগ, সবচেয়ে বেশি হিংসার্বিত হয় প্রদীপ বাবুর নিজের একজন ভাই। সেই তখন ভাড়াটে গুন্ডা লাগিয়ে দেন প্রদীপ রায়ের পিছনে। সেই ভাড়াটে সুপারি কিলার এবং কুখ্যাত তোলাবাজ এর নাম দেবজ্যোতি ঘোষ। ওরফে টাক বাবাই। সেই তোলাবাজ তখন মোটা টাকা তোলা চেয়েছিল প্রদীপ বাবুর কাছ থেকে। সেই টাকা দিতে অস্বীকার করেছিলেন প্রদীপবাবু। সেই কারণেই ২০০৪ সালের শনিবার সন্ধ্যেবেলা বাড়ির মধ্যে ঢুকে প্রদীপবাবুকে গুলি চালিয়ে খুন করে টাক বাবাই বাহিনী। নিহত ব্যবসায়ী প্রদীপ রায় এলাকায় প্রচন্ড জনপ্রিয় মানুষ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। খুবই সজ্জন ব্যক্তি ছিলেন তিনি। তার মৃত্যুর প্রতিবাদে সারা এলাকায় অনির্দিষ্টকালের জন্য বনধ এবং পথ অবরোধ করেছিলেন এলাকার সাধারণ মানুষ। চাপে পড়ে স্থানীয় থানার পুলিশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছিল। কিন্তু প্রয়োজনীয় সাক্ষীর অভাবে তারা বেকসুর খালাস হয়ে যায়।। অভিযোগ, সাক্ষী দিতে বারণ করেছিল, ভয় দেখিয়েছিল প্রদীপ বাবুর পরিবারের একজন। যে নাকি এই খুনের মধ্যে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। কিন্তু পুলিশ আজ পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি ‌ টার্গেট ছিল প্রদীপ বাবুর পুরো পরিবার। সবাইকে খুন করতে চেয়েছিল তার পরিবারের লোকজন। কারণ সম্পত্তি হাতিয়ে নেওয়া। কিন্তু কোন একটি দৈব কারণে সেটা হতে পারেনি। কোন একজন দৈব শক্তি কাবেরী দেবীর পরিবারের পাশে এসে দাঁড়িয়ে যায়। এর ফলে পুরো পরিবারটা বেঁচে ওঠে। দীর্ঘ কুড়ি বছর অক্লান্ত পরিশ্রম দারুন লড়াই একা করেছেন কাবেরী দেবী। এখন মেয়ে লাবণ্য বিবাহিতা। মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন ভালো ছেলের সঙ্গে। ফুটে নাতি হয়েছে। ছেলে ইন্দ্রজিৎ এখন প্রতিষ্ঠিত। বেসরকারি সংস্থায় ভালো চাকরি করেন। আর তার পাশে সর্বক্ষণ ছায়া সঙ্গী হয়ে রয়েছেন ভাই পার্থ দত্তগুপ্ত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *