বেঙ্গল ওয়াচ নিউজ ডেস্ক: লোকসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় দফায় রাজ্যের তিন কেন্দ্রে ভোটের আগে জোট বার্তা দিতে যৌথ সাংবাদিক সম্মেলন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু এবং প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর। দুই নেতাই এদিন তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে বোঝাপড়ার অভিযোগ করেছেন।
বিমান বসু বলেছেন, বাংলায় এবার ত্রিমুখী লড়াই হচ্ছে। অন্যদিকে বহরমপুরের কংগ্রেস প্রার্থী অধীর চৌধুরী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তীব্র নিশানা করেছেন।
সাংবাদিক সম্মেলনের শুরুটা করেন বহরমপুরের কংগ্রেস প্রার্থী তথা প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। তিনি বলেন, বামেরা সময়কে গুরুত্ব দেন।। তারা শৃঙ্খলা পরায়ন। তবে এই সমঝোতায় ভাল ফল করবে বলে তিনি দাবি করেন। বাংলাকে সন্ত্রাস আর দুর্নীতি মুক্ত করতে বাম আর কংগ্রেস একসঙ্গে লড়াই করবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
অধীর চৌধুরী অভিযোগ করেছেন, তৃণমূলের পুলিশ আর সন্ত্রাস অব্যাহত রয়েছে। তৃণমূল ও বিজেপি উভয়েই কংগ্রেস আর বামেদের ভয় পাচ্ছে। সাধারণ মানুষকে প্রলোভন দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি। তিনি বলেছেন, একটা বুথও লুট হতে দেবেন না। গত পঞ্চায়েত আর পুরসভা নির্বাচনে সাধারণ মানুষ ভোট দিতে পারেনি বলে অভিযোগ করে তিনি বলেছেন, সেই সন্ত্রাস ফেরাতে দেওয়া হবে না।
সাংবাদিক সম্মেলনে অধীর চৌধুরী তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিশানা করেন। তিনি প্রশ্ন করেন, ইন্ডিয়া ব্লকের নামকরণ করেও কেন হঠাৎ পাল্টিবাজি করলেন, কেন তিনি পাল্টিকুমারী হলেন, সেই প্রশ্ন করেন অধীর। তাঁর আরও প্রশ্ন কী এমন হল, তিনি পালিয়ে গেলেন?
অধীর চৌধুরী বলেছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বরাবরই তাঁর রাজনৈতিক বিরোধী। উনি কেন ইন্ডিয়া ব্লকের শরিক হওয়ার সময় বললেন না, অধীর চৌধুরী থাকলে তিনি থাকবেন না। আর এখন তিনি জোট না করে তাঁকে (অধীর) দায়ী করছেন। বাংলার সবুজ সাথী প্রকল্পের সাইকেল বাংলাদেশে পাচার হওয়া প্রসঙ্গে তিনি কটাক্ষ করে বলেন, দিদি আমাদের ভাল চোর দিয়েছেন। দিদি না থাকলে চাল, সাইকেল, ড্রাগ, মহিলা পাচার হবে কী করে?
বহরমপুরে তাঁর বিরুদ্ধে তৃণমূলের বিক্ষোভ প্রসঙ্গে অধীর চৌধুরী বলেছেন, ওরা পারবে না বহরমপুরে। যতই বিক্ষোভ দেখাক, কংগ্রেসের গড় আরও শক্ত হচ্ছে বলে দাবি করেছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি। তিনি চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বলেছেন, দিদি খোকাবাবুকে তাঁর (অধীর) বিরুদ্ধে দাঁড় করাক। আর বলে দিক বহরমপুরে হারলে ব্যক্তিগত হার!
অধীর চৌধুরী বলেন, নির্বাচনের পরে তৃণমূল তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়লে কিংবা তৃণমূল আর বিজেপি সরকার তৈরি করতে অবাক হবেন না। তিনি অভিযোগ করেছেন, ডায়মন্ড হারবারে ভাইপোকে জেতাতে তৃণমূল আর বিজেপির সেটিং হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী আর প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে সেটিং রাজভবনে হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন অধীর। তিনি কটাক্ষ করে বলেছেন, দিদি তাঁর খোকাবাবুকে তিহারে পাঠাতে রাজি নন। কেন্দ্রীয় এজেন্সির ভয়েই বিজেপির সঙ্গে সেটিং বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
প্রথম পর্যায়ে উত্তরবঙ্গের তিন কেন্দ্রে ভোট শেষে তৃণমূলের বিজয় মিছিল প্রসঙ্গে অধীর চৌধুরী বলেন, এখানে মাইন্ড গেমের খেলা হচ্ছে। মিজয় মিছিল করে মানুষকে বোঝাতে চাইছে ওরা জিতছে। বিষয়টিকে তিনি সাইকোলজিক্যাল গেম হিসেবেই বর্ণনা করেন। অন্যদিকে তিনি প্রশ্ন করেন, ৪০০ পার হলে মোদীকে কেন দৌড়তে হচ্ছে?
বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু বলেছেন, রাজ্যে কংগ্রেসের সঙ্গে বামেদের নির্বাচনী বোঝাপড়া হয়েছে। ইতিমধ্যেই এক সঙ্গে প্রচার হয়েছে কিংবা হচ্ছে এবং নির্বাচনের সবকটি দফার আগেই তা হবে।
রাজনীতিগত কারণে সর্ব ভারতীয় ক্ষেত্রে বাম-কংগ্রেস-এর আসন সমঝোতা হয়নি বলে জানিয়েছেন তিনি। প্রবীণ বাম নেতা বলেছেন, এবার যেমন একসঙ্গে বসা হয়েছে, আগে তা হয়নি। ফলে অতীতে যা হয়েছে, তা এবারও হবে এমন ভাবার কোনও কারণ নেই।
বিমান বসু বলেছেন, রাজ্যে বিজেপিকে হাতে ধরে নিয়ে এসেছে তৃণমূল কংগ্রেস। দুই দলের মধ্যে বোঝাপড়া রয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি। বিমান বসু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘বাংলার বিরোধীদের বিসর্জন’ স্লোগানের সমালোচনা করেন। তিনি অভিযোগ করেছেন, তৃণমূল চুরি করে ফাঁক করে দিচ্ছে। প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছেন টার্গেট করে লড়াইয়ে নামেননি।