বেঙ্গল ওয়াচ নিউজ ডেস্ক: গতকাল রাত ১২টায় বিদায় নিয়েছে ২০২৪। আজ শুরু নতুন বছর। কিন্তু এই নতুন বছর দেখা হলো না বাংলা তথা ভারতের স্মরণীয় কিছু মানুষের। রাজনীতি থেকে বিনোদন – সমস্ত জগতের অনেক মানুষকে আমরা হারিয়েছি ২০২৪ সালে।
বেদনার সঙ্গে তাঁদের স্মৃতিকে আজ আমরা স্মরণ করছি। যাঁদের আমরা ২০২৪ হারিয়েছি তাঁরা হলেন –
*পঙ্কজ উধাস– ২৬ ফেব্রুয়ারি প্রয়াত হন খ্যাতনামী গজল গায়ক পঙ্কজ উধাস। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৭২ বছর। অনুষ্ঠান, অ্যালবাম, ছবির গানে আশির দশককে মুগ্ধ করে রেখেছিলেন পঙ্কজ। শ্রোতারা ভুলবে না ‘চান্দি জ্যায়সা রঙ্গ’, ‘না কাজরে কি ধার’, ‘দিওয়ারোঁ সে মিল কর রোনা’, ‘আহিস্তা’, ‘থোড়ি থোড়ি প্যার করো’, নিকলো না বেনকাব’-এর মতো গজল। ‘নশা’, ‘পয়মানা’, ‘হসরত’, ‘হামসফর’-এর মতো বেশ কয়েকটি বিখ্যাত অ্যালবামও রয়েছে পঙ্কজ উধাসের।
*উস্তাদ রাশিদ খান– ৯ জানুয়ারি প্রয়াত হন ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের অন্যতম জনপ্রিয় শিল্পী উস্তাদ রাশিদ খান। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৫৬ বছর।
*রামোজি রাও– ৮ জুন প্রয়াত হন ভারতের অন্যতম ‘মিডিয়া ব্যারন’ তথা ইটিভি নেটওয়ার্ক এবং রামোজি ফিল্ম সিটির প্রধান রামোজি রাও-র। শুক্রবার রাতে হায়দরাবাদে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় তাঁর। বয়স হয়েছিল ৮৭। রামোজি, চেরুকুরি রামোজি রাও নামেও পরিচিত ছিলেন। তাঁর তৈরি ‘রামোজি ফিল্ম সিটি’ বিশ্বের বৃহত্তম সিনেমা সেট।
*বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য– ৮ অগাস্ট মহীরুহ পতন, চলে গেলেন পশ্চিমবঙ্গে ৩৪ বছরের বামফ্রন্ট শাসনের দ্বিতীয় এবং শেষ মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। ২০০০ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত টানা ১১ বছর রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন বুদ্ধদেব। বুদ্ধদেবের ১১ বছরের শাসনকালের শেষ পাঁচ বছর বাংলার রাজনীতিতে নানা দিক থেকেই এক সরগরম পর্ব। এই রাজনৈতিক উত্তাপের গোটাটাই ছিল তাঁর শিল্পায়ন-নীতিকে ঘিরে। যে শিল্পায়নকে বুদ্ধদেব বাজি ধরেছিলেন, সেই শিল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণের পদ্ধতিই বুদ্ধদেবের পায়ের তলার জমি সরিয়ে দিয়েছিল।
*সীতারাম ইয়েচুরি– ১২ সেপ্টেম্বর প্রয়াত হন সিপিএমের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। বয়স হয়েছিল ৭২ বছর। ১৯৫২ সালের ১২ অগস্ট ইয়েচুরির জন্ম মাদ্রাজে। পৈতৃক বাড়ি অন্ধ্রপ্রদেশের হায়দরাবাদে। স্কুলশিক্ষা প্রথমে সেখানেই। ১৯৬৯ সালে দিল্লির প্রেসিডেন্ট এস্টেট স্কুলে ভর্তি হন। সেখান থেকেই সিবিএসই দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষায় দেশের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করেন। অর্থনীতিতে স্নাতক হন দিল্লির সেন্ট স্টিফেন্স কলেজ থেকে। তার পর স্নাতকোত্তর কোর্সে ভর্তি হন জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় (জেএনইউ)-এ। জেএনইউয়েই ইয়েচুরির বামপন্থী ছাত্র রাজনীতিতে যোগ।
*রতন টাটা– ৯ অক্টোবর প্রয়াত শিল্পপতি রতন টাটা। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর। টাটা গোষ্ঠীকে আন্তর্জাতিক স্তরে নিয়ে যাওয়ার অন্যতম কারিগর ছিলেন রতন টাটা। তাঁর প্রপিতামহ প্রবাদপ্রতিম জামশেদজি টাটা হলেন এই শিল্পসংস্থার প্রাণপুরুষ। ২০১৬ সালের অক্টোবর থেকে ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত টাটা গ্রুপের অন্তর্বর্তিকালীন চেয়ারম্যান ছিলেন রতন টাটা। এই শিল্প সংস্থাকে পুরোপুরি আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডে রূপান্তরিত করেন তিনি।
*উস্তাদ জাকির হুসেন– ১৫ ডিসেম্বর সান ফ্রান্সিস্কোয় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন কিংবদন্তি তবলাবাদক, সঙ্গীতজ্ঞ, অভিনেতা উস্তাদ জাকির হুসেন। ১৯৫১ সালে মুম্বইয়ে জন্ম জাকির হুসেনের। তাঁর পিতা উস্তাদ আল্লা রাখাও ছিলেন প্রখ্যাত তবলাবাদক। ভারত সরকারের পদ্মশ্রী, পদ্মভূষণ, পদ্মবিভূষণ সম্মানে ভূষিত হয়েছেন তিনি।
*শ্যাম বেনেগাল– ২৩ ডিসেম্বর চলচ্চিত্র জগতে নক্ষত্রপতন, প্রয়াত হন পরিচালক শ্যাম বেনেগাল। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৯০। ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতে একাধিক সম্মানে ভূষিত হয়েছেন তিনি। ১৯৭৬ সালে পদ্মশ্রী ও ১৯৯১ সালে পদ্মভূষণ পেয়েছিলেন শ্যাম বেনেগাল। দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কারও পান। ১৯৩৪ সালের ১৪ ডিসেম্বর হায়দরাবাদে জন্ম শ্যাম বেনেগালের।
*মনমমোহন সিং– ২৬ ডিসেম্বর প্রয়াত হন মনমোহন সিং। ৯২ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর, যোজনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান পদের দায়িত্বভার সামলেছেন দক্ষ হাতে। তার পর হঠাৎই রাজনীতিতে প্রবেশ। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর পর টানা ১০ বছর ভারতের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তিনি। দেশের অর্থনৈতিক সংস্কারের রূপকারের প্রয়াণে শোকস্তব্ধ রাজনীতিক থেকে শাসক, বিরোধী নির্বিশেষে সকলে।