বেঙ্গল ওয়াচ নিউজ ডেস্ক: লাগে টাকা, দেবে গৌরী সেন – বাংলায় বহুল প্রচলিত এই প্রবাদ নিয়ে নানা আলোচনা হয়েছে। পরে পন্ডিতেরা এই প্রবাদের উৎস নিয়ে গবেষণা কম করেন নি। প্রথমেই জানিয়ে রাখি, প্রবাদপ্রতিম গৌরী কিন্তু কোনও মহিলার নাম নয়।

বাংলা প্রবাদের গঠন ও উৎসকথা’ গ্রন্থে কমল কুমার পাল লিখেছেন, ‘গৌরী সেন, যার মূল নাম গৌরীকান্ত সেন। সুবর্ণবণিক সম্প্রদায়ের সম্ভ্রান্ত ব্যবসায়ী তিনি। ১৫৮০ সালে হুগলিতে জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম নন্দরাম সেন। থাকতেন ৩৫ নম্বর কলুটোলা স্ট্রিটে। তাঁর আদি নিবাস সম্পর্কে দুটি ভিন্ন মত আছে। অধিক গ্রহণযোগ্য মত অনুযায়ী তিনি পশ্চিমবঙ্গের হুগলী জেলার বালী শহরের মানুষ। যা বর্তমানে হাওড়া জেলার অন্তর্গত। অন্য মত অনুযায়ী তিনি ছিলেন মুর্শিদাবাদ জেলার বহরমপুর শহরের মানুষ।’ সে যাই হোক, তাঁর যেমন অনেক টাকা ছিল, তেমনই তিনি সকলকে দুহাতে তা দান করতেন।

এশিয়াটিক সোসাইটি অব বাংলাদেশ প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক সমীক্ষামালা- ৯: প্রবাদ-প্রবচন’ গ্রন্থে বলা হয়েছে, গৌরী সেন হরেকৃষ্ণ মুরলীধর সেনের পুত্র। আমদানী- রফতানির পারিবারিক ব্যবসায় গৌরী সেন অনেক টাকা উপার্জন করে বণিকসমাজে প্রসিদ্ধ হন। দু-হাতে টাকা বিলিয়ে অনেক লোককে তিনি ঋণমুক্ত করেন অথবা বকেয়া রাজকর মেটাতে সাহায্য করেন। কেউ চাইলেই তিনি টাকা দিতেন। এ থেকেই ‘লাগে টাকা, দেবে গৌরী সেন’ প্রবাদের জন্ম।সেকালে দেনার দায়ে কারও জেল হলে ঋণ পরিশোধ না হওয়া পর্যন্ত তারা মুক্তি পেতেন না। অনেকের জেলেই মৃত্যু হতো। এ অবস্থায় গৌরী সেন ছিলেন তাদের ত্রাণকর্তা। তাঁর কাছে সাহায্য চাইলে তিনি অনেকের ঋণের টাকা পরিশোধ করে কারামুক্তির ব্যবস্থা করতেন। কলকাতার আহিরীটোলায় গৌরী সেনের বিশাল বাড়ি ছিল বলে জনশ্রুতি আছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *