বেঙ্গল ওয়াচ নিউজ ডেস্ক:আর মাত্র কয়েকটা দিনের অপেক্ষা। তাই মানুষের চোখ এখন চন্দননগর এবং কৃষ্ণনগরের দিকে। কারণ অবশ্যই জগদ্ধাত্রী পুজো। আর চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজো মানেই চাউলপট্টির ‘আদি মা’।
প্রায় সাড়ে তিনশো বছরের বেশি প্রাচীন চন্দননগরের আদি মায়ের ইতিহাস বেশ রঙিন। এই পুজো নিয়ে অসংখ্য জনশ্রুতি ও গল্পগাথা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে গোটা চন্দননগরে। তবে একটা বিষয়ে সকলেই একমত, কৃষ্ণনগরের জগদ্ধাত্রী পুজো দেখেই অনুপ্রানীত হয়ে এখানে পুজো শুরু হয়।
একটা সময় ছিল বাংলার শস্যভাণ্ডার ছিল চন্দননগর। অকসময় ফরাসিদের আধিপত্যে থাকা এই এলাকার নাম ছিল ফরাসডাঙা। এখানকার চাউলপট্টি এলাকা তখনকার দিনে বাণিজ্যের দিক থেকে ছিল দক্ষিণবঙ্গের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্থান। এখানেই জগদ্ধার্থী পুজো শুরু করেন ফরাসি দেওয়ান ইন্দ্রনারায়ণ চৌধুরী। জানা যায়, রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের ঘনিষ্ঠ ইন্দ্রনারায়ণ ছিলেন চন্দননগরের ফরাসি সরকারের দেওয়ান। কৃষ্ণনগর রাজবাড়ির পুজো দেখে মুগ্ধ হয়ে তিনি চন্দননগরের লক্ষ্মীগঞ্জ চাউলপট্টির নিচুপাটিতে জগদ্ধাত্রী পুজোর প্রচলন করেন তিনি। ফলে এটিই চন্দননগরের আদি পুজো, বর্তমানে যাকে আদি মা বলেই ডাকেন চন্দননগরবাসী। বর্তমানে এই পুজো বারোয়ারি হলেও আজও পুরুষানুক্রমে দেওয়ান চৌধুরীদের উত্তরপুরুষের নামে পুজোর সংকল্প হয়। প্রতিমার বৈশিষ্ট্য হল সনাতনরীতির প্রতিমায় সাদা সিংহ এবং বিপরীতমুখী অবস্থানে হাতি।
দেওয়ান ইন্দ্রনারায়ণ চৌধুরী তৎকালীন চন্দননগরের চাউলপট্টির সামান্য চাল ব্যবসায়ী থেকে নিজের বুদ্ধির জোরে হয়ে ওঠেন ফরাসি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দেওয়ান। তাঁর বড় ভাই রাজারাম মুর্শিদাবাদে নবাবের দরবারে হিসাবরক্ষকের কাজে নিযুক্ত ছিলেন। আর ইন্দ্রনারায়ণের সঙ্গে সখ্যতা ছিল রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের। চালের ব্যবসার সূত্রেই তিনি ফরাসি শাসকদের প্রিয়পাত্র হয়ে ওঠেন এবং পরবর্তীকালে দেওয়ান হিসেবে নিযুক্ত হন। তিনিই চাউলপট্টিতে জগদ্ধাত্রী পুজোর যে সূচনা করেন। সেই সময়কার রীতিনীতি মেনে আজও পুজো হয় এখানে। ষষ্ঠীর দিন মাকে শাড়ি ও প্রাচীন গয়না পরানো হয়। সপ্তমীর দিন সাতটি বিশাল বারকোষে হয় মায়ের নৈবেদ্যের আয়োজন। সপ্তমী থেকে নবমী প্রত্যেকদিন পাঁঠাবলি হয় এবং সেই সঙ্গে আখ, চালকুমড়ো বলি হয়। তবে আদি মায়ের পুজোতে বলিদান হলেও মায়ের ভোগ সম্পূর্ণ নিরামিষ হয়। নবমীর দিন মাকে ১০৮টি রক্তপদ্ম নিবেদন করার প্রথা রয়েছে। আর এই পুজোর মূল বৈশিষ্ট হল এখানে পুজোর সমস্ত আচার পালন করেন পুরুষরাই।