বেঙ্গল ওয়াচ নিউজ ডেস্ক: এমনই রীতি চলে আসছে হুগলী জেলার প্রসিদ্ধ সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দির অধিকারী বাড়ি তে,এখানের মা কালীর পুজোর আচার অনুষ্ঠান থেকে মায়ের বিগ্রহ সব টাই অবাক করা, হ্যাঁ ঠিক ই,এখানে মহাকালীর গায়ের রং টাই ভিন্ন ,একেবারে সবুজ,সেই কারনেই অধিকারী বাড়ির মহাকালী সবুজ কালী রূপে লোকমুখে সারা বাংলা ব্যাপী খ্যাতি ছড়িয়েছে,

 

এখানে পূজা হয় প্রাচীন তন্ত্র মতে,পূজা তে থাকে আমিষ ভোগ ।এই পরিবারের কথা অনুযায়ী মায়ের প্রিয় ইলিশ মাছ সেই কারনে মাকে ইলিশ মাছ ভোগ দেয়া হয়,মায়ের পছন্দ এখানে জবা নয় জুঁই।
মা কে পূজা করা হয় বাঁশি বাজিয়ে। দীপান্বিতা কালীপূজার রাতে রাত্রি তৃতীয় প্রহরে মাকে শোনাতে হয় বাঁশি,সেদিনের ভোগে থাকে ইলিশ মাছ ও কারণ,

এমন ভিন্ন এক কালী মায়ের কথা আসুন জেনে নিই এমন নিয়ম এর ইতিহাস

আসুন ৭৪ বছর পিছনে নিয়ে যাই আপনাদের,
হুগলী জেলার সুপ্রাচীন বর্ধিষ্ণু গ্রাম হরিপাল। এই অঞ্চলে একটি ছোট জনপদ শ্রীপতিপুর গ্রাম।

, এই গ্রামেরই এক দরিদ্র গোড়া বৈষ্ণব পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন বটকৃষ্ণ অধিকারী মহাশয়। বৈষ্ণব সুলভ আচরণ ছোট থেকেই জন্ম সূত্রে পেয়েছিলেন অধিকারী মশাই। তৎকালীন ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় পাশ করার পর কিছু বছর ভিন রাজ্যে চাকুরী করেন তিঁনি। তারপর ভাগ্যচক্রে আবারও গ্রামে এসে চাষাবাদ করতে শুরু করেন, সব ঠিকঠাক চলার পর এক প্রকার জোর করেই পরিবার সূত্রে আঙুরবালা দেবীর সাথে বিবাহ সূত্রে আবদ্ধ হোন তিনি, কিন্তু সংসারে তাঁর মতি ছিল না। মাঠে ঘাটে শ্মশানে ঘুরে বেড়াতেন, এরকম কিছু বছর চলার পর জানা যায় কোনো এক মাঠে তিনি গরুর খোটা বাঁধছিলেন সেই মুহূর্তে তাঁর পিছন থেকে এক সাদা বস্ত্র পরিহিত সন্ন্যাসী এসে বলেন অমুক স্থানে অমুক সময়ে তোমার দীক্ষা হবে, দীক্ষা সম্পূর্ন ও হয়।এর পরের ঘটনা সব টাই গুপ্ত।

তাঁর পর তিনি শ্মশানে সাধনা করতে করতে সিদ্ধি লাভ করেন, এবং স্বপ্নাদৃষ্ট হন মা কালীর মন্দির প্রতিষ্ঠা করার। কিন্তু কুলীন বৈষ্ণব পরিবারে জন্ম ,তাঁর বাড়িতে কেউ তিলক সেবা রাধা গোবিন্দের নাম না করে জল স্পর্শ করেন না, সেই বৈষ্ণব বাড়িতে কালী পুজো তৎকালীন সমাজের মাথারা বললেন নৈব নৈব চ, কিন্তু তিনি লুকিয়ে ঘরের মধ্যে ঘট স্থাপন করে সাধনা করতে শুরু করেন

পরে এক অমাবস্যা নিশি তে স্মশানে তিনি দর্শন পান স্বয়ং শ্রী কৃষ্ণ ও মা কালীর। উভয়ে সাধক বটকৃষ্ণ কে বলেন তোমরা যে আমাদের ভেদ জ্ঞান করছ আমরা আলাদা নই আমরা এক এবং অভিন্ন। দেখবে!!!!!?সাধক দেখেন শ্রীকৃষ্ণ ও মা কালীর মূর্তি একই অঙ্গে মিলেমিশে গিয়ে এক নারী মূর্তি তে পরিবর্তিত হল কিন্তু এ কি! এত কালো বা নীল নয়, এত নব দুর্বার ওপর শ্যাম ও শ্যামা এক সাথে, দেবীর গায়ের রং একেবারে সবুজ। দেবী বলেন এই রূপেই তুমি আমাদের প্রতিষ্ঠা কর আমরা উভয় থাকব তোমার কাছে।এবং কৃষ্ণ ও কালীর আদেশে বটকৃষ্ণ ঠাকুর রটন্তী কালীপূজার দিন প্রতিষ্ঠা করেন এই সবুজ কালিমাতাকে। এখানে মা পরম বৈষ্ণব …..রটন্তী কালীর পুরনো নিয়ম অনুযায়ী শ্রীকৃষ্ণ ও রাধিকা যখন লীলা করছিলেন সেই খবর গিয়ে পৌছায় রাধিকার স্বামী আয়ন ঘোষের কাছে। রাধিকার স্বামী আয়ন ঘোষ এসে দেখেন রাধিকা কালী পুজো করছেন, প্রেমিকাকে অপমানের হাত থেকে বাঁচাবার জন্য স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ কালীর রূপ ধরেন, যা কৃষ্ণকালী নামে পরিচিত, রাধিকার কালী পূজার এই কথা রটে গিয়েছিল বলে এই তিথিতে কালী পূজাকে রটন্তী কালী পূজা বলা হয়, এখন বটকৃষ্ণ ঠাকুরের সুযোগ্য পুত্র কালিপদ অধিকারী (পণ্ডিত শিবানন্দপুরী) এই পঞ্চমুন্ডীর মন্দিরে সাধনা করেন। আর সারা বছর এই বৈষ্ণব বাড়িতে পূজিতা হোন মা সবুজ কালী। যেহেতু কৃষ্ণকালের রূপ সেজন্য এখানে প্রতিদিন মাকে মাসি বাজিয়ে শোনাতে হয়।
প্রতিদিন দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসেন সাধারণ মানুষেরা এই সবুজ কালী দেখতে। বাৎসরিক প্রতিষ্ঠা দিবস পালিত হয় রটন্তী কালী পুজো তিথিতে সেই দিনই প্রথমে হয় নরনারায়ন সেবা তারপরে হয় দেবীর ভোগ এমনি নীতি চলে আসছে এখানে। পূজার বর্তমান আহবায়ক দেবজ্যোতি অধিকারীর কথায়, মানব সেবাই তো পরম ধর্ম তাই আমরা মনে করি মানুষকে অভক্ত রেখে দেবীকে ভোগ দিলে দেবী অসন্তুষ্টই হন আর যদি আমরা আগে মানুষের সেবা করি মানুষকে খাওয়াই আমাদের মনে হয় যে দেবী তাকে সন্তুষ্ট হবে। সেই কারণে এই রীতি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *