বেঙ্গল ওয়াচ নিউজ ডেস্ক: হাসপাতাল এবং তার স্বাস্থ্য পরিষেবা নিয়ে ধূপগুড়িবাসীর অভিযোগের অন্ত ছিল না, আজ তাকে ঘিরেই প্রশংসার জোয়ার শহরজুড়ে ।
সামান্য কিছু হলেই যেখানে রেফার করাটা ছিল রেওয়াজ সেখানে টানা তিন ঘণ্টার টানটান লড়াইয়ে প্রাণ ফেরাল বছর বারোর এক নাবালকের। পুরো ঘটনার সূত্রধারের কাজ করলেন নবনিযুক্ত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অ্যানাস্থেটিস্ট প্রশান্ত মণ্ডল।
মহকুমা হাসপাতালের ব্যানার লাগানো হলেও কার্যত কয়েকজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ ছাড়া এখনও পরিকাঠামো বলতে কিছুই নেই সেভাবে। সেই বিশাল প্রতিবন্ধকতা সরিয়ে অনেকটা সিনেমার ঢঙে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে নাবালকের প্রাণ ফেরালেন ডাঃ মণ্ডল ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। তাঁর কথায়, ‘অবস্থাটা সত্যিই সংকটজনক ছিল। প্রয়োজনীয় কিছু ইনজেকশন আশপাশে না মেলায় সমস্যা চরমে তোলে। হাসপাতালের এক কর্মী ইনজেকশন জোটাতে ছোটেন বিন্নাগুড়ি৷ টানা ঘণ্টা তিনেকের দলগত লড়াই শেষ পর্যন্ত নাবালককে বাঁচানো গিয়েছে এটাই আনন্দের।’
শহরের বিবেকানন্দপাড়া এলাকার বাসিন্দা ওই নাবালক রবিবার রাত থেকেই জ্বরে আক্রান্ত ছিল। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সে কফি এবং পপকর্ন খায়৷ এরপর তার বমি শুরু হয়। কিছুক্ষণ পরে শৌচালয়ে গেলে তার শরীর খারাপ হতে শুরু করে এবং কোনওমতে ঘরে ফিরেই সে সংজ্ঞা হারায়। সেই সঙ্গে চরম খিঁচুনি দেয় কিশোরের। অজ্ঞান অবস্থায় তাকে রাত সাড়ে আটটা নাগাদ নিয়ে যাওয়া হয় ধূপগুড়ি হাসপাতালের ইমার্জেন্সিতে। সেই সময় ডিউটিতে ছিলেন অ্যানাস্থেটিস্ট ডাঃ মণ্ডল। চরম সংকটে থাকা নাবালককে রেফার করেও ছাড়তে চাননি তিনি। শুরু হয় মৃত্যুর সঙ্গে এক অসম লড়াই। অ্যাম্বু ব্যাগ লাগিয়ে কৃত্রিমভাবে শ্বাস দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় খিঁচুনি আটকে স্বাভাবিক করার লড়াই। নাবালকের পরিবারের তরফে ততক্ষণে জলপাইগুড়ি থেকে আইসিইউ অ্যাম্বুল্যান্স আনার তোড়জোড় শুরু হয়েছে। এদিকে কিশোরের হৃৎস্পন্দন, নাড়ির গতি এবং শরীরে অক্সিজেনের জোগানের মাত্রা নেমে গেছে পঞ্চাশের নীচে৷ চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় ‘চোক’ বা ‘অ্যারেস্ট’ হওয়ার পর্যায়ে প্রায় মৃত্যু ছুঁয়ে ফেলেছিল একরত্তি ছেলেটাকে। হাল ছাড়েননি তরুণ অ্যানাস্থেটিস্টি এবং তাঁর সহযোগীরা। অবশেষে রাত সাড়ে এগারোটা নাগাদ খিঁচুনি থেমে যায় কিশোরের। চল্লিশ ছুঁইছুঁই হৃৎস্পন্দন বেড়ে ৯৫ দাঁড়ায়, সঙ্গে নাড়ির গতি এবং অক্সিজেনের জোগানও বাড়ে শরীরে। এদিকে এসে পৌঁছায় বিশেষ অ্যাম্বুল্যান্স। অবশেষে রাত ১২টা নাগাদ বিশেষ লাইফ সাপোর্ট দিয়ে তাকে শিলিগুড়ি পাঠানো হয়। রাত দুটো নাগাদ শিলিগুড়ি প্রধাননগরের এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত গায়ে হালকা জ্বর থাকলেও আপাতত একদম স্বাভাবিক রয়েছে কিশোর। সকলের সঙ্গে কথাও বলছে সে। কিশোরের মা পেশায় স্বাস্থ্যকর্মী রূপা আইচের কথায়, ‘ওই তিন ঘণ্টা ছিল আমাদের কাছে এক চরম পরীক্ষা। ভগবান আমাদের সহায় ছিলেন তাই আমরা পরীক্ষায় ভালোভাবে উত্তীর্ণ হয়েছি জানালেন তিনি। অনেক ধন্যবাদ ঐ ডাক্তারকে এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের যাদের চেষ্টায় আমি ফিরে পেলাম আমার সন্তানকে।