বেঙ্গল ওয়াচ নিউজ ডেস্ক: আর জি কর কাণ্ডের পরে প্রাক্তন প্রিন্সিপাল সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে দুর্নীতি সহ যেসব অভিযোগ উঠতে শুরু করে, তার মধ্যে একটি হলো ‘থ্রেট কালচার’। অর্থাৎ গুন্ডা বাহিনীকে কাজে লাগিয়ে হসপিটালের অভ্যন্তরে নানাভাবে তোলাবাজি করা।
এটা এখন জলের মতো স্বচ্ছ যে আর জি করে সন্দীপ ঘোষের নেতৃত্বে একটা বিরাট বাহিনী ছিল যারা ‘থ্রেট কালচার’ চালিয়ে যাচ্ছিলো। কিন্তু সত্যিই কি এই কালচারের প্রবক্তা সন্দীপ ঘোষ এবং তার বাহিনী? এখানেই একবার ইতিহাসের দিকে ফিরে তাকালে দেখা যাবে, এর জন্ম কিন্তু বাম আমলে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে। তৎকালীন বাম সরকার সিদ্ধান্ত নিল, সেখানে এবং এসএসকেএমে ক্যাপিটেশন ফি নিয়ে পড়ুয়া ভর্তি হবে। সরকারি হাসপাতালে এ ভাবে টাকা নিয়ে ভর্তির বিরুদ্ধে গর্জে উঠল ছাত্র সমাজ। শুরু হলো আন্দোলন। অভিযোগ, সেই আন্দোলণে যে ছাত্রনেতারা তৎপর হয়ে উঠেছিলেন,তাদের উপর নেমে এসেছিলো প্রচুর হুমকি। ক্যাপিটেশন ফি-এর বিরুদ্ধে সেই আন্দোলন আজকের মতোই গড়িয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত। মুখ পুড়েছিল বাম-সরকারের। তবে একথা ঠিক যে, সেটা সীমাবদ্ধ ছিল দু’একটি কলেজের মধ্যে। আর এখন সেই রোগ সংক্রামিত হয়েছে সারা বাংলায়।
থ্রেট কালচারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে ফেটে পড়ার পরে আর জি করে গঠন করা হয় এক তদন্ত কমিটি, যারা থ্রেট কালচার নিয়ে তদন্ত করছে। প্রথম দিন ১২জনকে তলব করা হলেও, হাজির হলেন মাত্র পাঁচজন। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, ১৩জন অধ্যাপকের বিরুদ্ধেও হুমকি দেওয়ার অভিযোগ তুলেছে আর জি কর রেসিডেন্ট ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন। অন্যদিকে, মেডিক্যাল কলেজগুলিতে থ্রেট কালচারের অপসংস্কৃতি। শুরু হল অভিযুক্তদের জিজ্ঞাসাবাদ। আর তাঁদের দেখেই ক্ষোভে ফেটে পড়লেন আন্দোলরত জুনিয়র ডাক্তাররা। অন্যদিকে, কলকাতার এসএসকেএম, আরজি কর-ই হোক বা শিলিগুড়ির উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ। গত কয়েক দিনে, থ্রেট কালচার নিয়ে একের পর এক বিস্ফোরক বক্তব্য, অডিও ক্লিপ সামনে এসেছে। আর গতকাল, আরজি কর মেডিক্যালে হুমকি দেওয়ায় অভিযুক্ত ১২ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে এই হাসপাতালেরই বিশেষ তদন্ত কমিটি।
এবার এই থ্রেট কালচারের অভিযোগ আসছে বিভিন্ন জায়গা থেকে – আর এটাও ঠিক সর্বত্র অভিযুক্ত শাসক দলের নেতা কর্মীরা। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে থ্রেট কালচারের অভিযোগ ৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্নালিজম ও মাস কমিউনিকেশন বিভাগের প্রধানের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ এনেছে ছাত্রছাত্রীদের একাংশ।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্নালিজম ও মাস কমিউনিকেশন বিভাগের প্রাক্তন প্রধান সান্ত্বন চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে ছাত্রছাত্রীদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজের সিন্ডিকেট চালান ওই অধ্যাপক। এর সঙ্গে নম্বর হেরফের করারও অভিযোগ করা রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। এমনকি ছাত্রছাত্রীদের ধমকানোর অভিযোগও তুলেছেন আন্দোলনকারীরা।
সামনে এসেছে CESC -র থ্রেট কালচার। বেসরকারি বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা সিইএসসি-তেও নাকি রয়েছে থ্রেট কালচার! যা নিয়ে মঙ্গলবারই সংবাদমাধ্যমে সরব হয়েছিলেন এক মহিলা। আর বুধবার, প্রকাশ্যে আসা একটি ভিডিয়ো সেই জল্পনা আরও উস্কে দিল। সম্প্রচারিত খবরে সিইএসসি-র এক মহিলা কর্মী দাবি করেন, হুগলি জেলায় কর্মরত থাকাকালীন লাগাতার তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মী সংগঠনের এক নেতার হুমকির মুখে পড়তে হয়েছে তাঁকে। তাঁর দাবি ছিল, ওই তৃণমূল নেতার নাম সমীর পাঁজা। মহিলার দাবি ছিল, সমীর পাঁজার অত্যাচারে অতীষ্ট হয়েই তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দ্বারস্থ হন এবং তাদের হস্তক্ষেপে কলকাতার শ্যামবাজার কার্যালয়ে বদলি হয়ে চলে আসেন। কিন্তু, সেখানেও তাঁকে কাজে যোগ দিতে বাধা দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। এর জন্য সমীর পাঁজার অনুগামীদেরই কাঠগড়ায় তোলেন ওই মহিলা। পাশাপাশি, পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। সবটা মিলিয়ে তৃণমূল আমলে ‘থ্রেট কালচার’ শব্দটা বেশ আভিধানিক হয়ে উঠেছে।