বেঙ্গল ওয়াচ নিউজ ডেস্ক:সম্প্রতি মোদী সরকারের মুখে ‘এক দেশ, এক নির্বাচন’ খন্ড বাক্যটি বার বার করে সামনে এসেছে। এই প্রস্তাবের শুরু হয় বহু বছর আগে, যখন নরেন্দ্র মোদী গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন।

 

২০১৪ সালে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময়ই তিনি এই প্রস্তাব দিয়েছিলেন। ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে, বিজেপির ইস্তেহারেও এই ব্যবস্থা চালুর কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু বিরোধীদের কাছ থেকে প্রবল সমালোচনা আসে। যার জেরে সেই সময় এই পরিবর্তন নিয়ে আলোচনা বন্ধ হয়ে যায়।

প্রশ্ন উঠেছে, কী এই ‘এক দেশ, এক নির্বাচন?’- সোজা কথায়, এর অর্থ হল সমস্ত ভারতীয় লোকসভা এবং বিধানসভা নির্বাচনে একসঙ্গে ভোট দেবেন। যদি একেবারে একই সময়ে নাও হয়, তাহলেও একই বছরের মধ্যে হবে লোকসভা এবং সকল বিধানসভাগুলির ভোট। বর্তমানে, দেশে নতুন কেন্দ্রীয় সরকার নির্বাচন করার সঙ্গে হাতে গোনা কয়েকটি রাজ্যের বিধানসভা ভোট হয়। এর মধ্যে আছে – অন্ধ্র প্রদেশ, সিকিম এবং ওড়িশা।

কেন বিজেপি এই প্রস্তাব আনছেন? মোদী সরকার ‘এক দেশ, এক নির্বাচন’ চাইছে মূলত সময়, অর্থ ও সম্পদ বাঁচানোর লক্ষ্যে। ঘন ঘন নির্বাচন হলে অনেক অর্থ খরচ হয়। তার পাশাপাশি, নির্বাচন কমিশনকে নির্বাচন কর্মী, নিরাপত্তা বাহিনী এবং অন্যান্য সংস্থান মোতায়েন করতে হয়। মোদী সরকারের যুক্তি হল, একসঙ্গে নির্বাচন করা হলে অর্থের পাশাপাশি এই মানব সম্পদ ও অন্যান্য সংস্থানও কার্যকরভাবে ব্যবহার করা যাবে। একযোগে নির্বাচন পরিচালনার ফলে সরকারের তো বটেই, রাজনৈতিক দলগুলিরও আর্থিক সাশ্রয় হতে পারে।

কেন এর বিরোধিতা করা হচ্ছে? – বিরোধীরা বলছেন, এটি কার্যকর করতে গেলে সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন হবে। বিশেষ করে সংবিধানের ৮৩ এবং ১৭২ নম্বর অনুচ্ছেদ। এই দুই অনুচ্ছেদে সংসদ এবং রাজ্য বিধানসভাগুলির মেয়াদ কতদিনের হবে, তা বলা আছে।এই প্রস্তাবের সমালোচকরা আরেকটি যুক্তিও দিয়েছে। তাদের দাবি, যদি রাজ্যর এবং দেশের নির্বাচন একইসঙ্গে করা হয়, তাহলে জাতীয় উদ্বেগের বিষয়গুলির আড়ালে চলে যেতে পারে আঞ্চলিক সমস্যাগুলি।উপরন্তু, সব রাজনৈতিক দলের মধ্যে ঐকমত্য অর্জন করাটাও একটা বড় চ্যালেঞ্জ। সংবিধান বিশেষজ্ঞ এবং বিরোধী দলগুলি ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর উপর এর প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

রামনাথ কোবিন্দের কমিটির প্রস্তাব – সোমবারই, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছিলেন, মোদী সরকারের তৃতীয় মেয়াদেই ‘এক দেশ, এক নির্বাচন’ কার্যকর করা হবে। তার একদিন পরই বড় পদক্ষেপ করল মোদী মন্ত্রিসভা। বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর), প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের নেতৃত্বাধীন কমিটির প্রস্তাব অনুমোদন করল কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। মন্ত্রিসভার এই পদক্ষেপে ‘এক দেশ এক নির্বাচন’ প্রস্তাব কার্যকর হওয়ার দিকে আরও এক কদম এগিয়ে গেল বলে মনে করা হচ্ছে। এরপর, রামনাথ কোবিন্দ কমিটির এই প্রস্তাবটি, সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে একটি বিল আকারে পেশ করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। রামনাথ কোবিন্দের কমিটি সর্বসম্মতভাবে একযোগে নির্বাচন করার পক্ষেই মত দিয়েছে। তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,দুই ধাপে এই ব্যবস্থা কার্যকর করা যেতে পারে। প্রথমে একযোগে হবে লোকসভা এবং বিধানসভাগুলির নির্বাচন। তার ১০০ দিনের মধ্যে করা হবে স্থানীয় প্রশাসন, অর্থাৎ, দেশের সকল পৌরসভা এবং গ্রাম পঞ্চায়েতগুলির নির্বাচন। তবে, এই প্রস্তাব বাস্তবায়নের জন্য সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন। সংসদ ও রাজ্য বিধানসভাগুলির মেয়াদ, লোকসভা ও রাজ্য বিধানসভা ভেঙে দেওয়া এবং রাষ্ট্রপতির শাসন জারি সংক্রান্ত বিষয়গুলি সংশোধন করতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *