বেঙ্গল ওয়াচ নিউজ ডেস্ক:ভারতীয় পুরান শুধুই কয়েকটা টুকরো গল্পের সমাহার নয়, এই পুরান হলো ভারতীয় প্রাচীন আর্থ-সামাজিক অবস্থার একটা আয়না। অমরা কমবেশি সকলেই জানি দুর্গা পুজোর অপরিহার্য অঙ্গ যৌনপল্লীর মাটি। কিন্তু কেন? তা নিয়ে ব্যাখ্যা আছে আমাদের পুরানে। এই মুহূর্তে মাতৃবন্দনার প্রস্তুতি চার দিকে।
প্রতিমা গড়ার কাজে শেষ মুহূর্তের ব্যস্ততা। প্রথমে কাঠামো, তার পরে একমেটে, দোমেটে, ক্রমে ধাপে ধাপে প্রাণবন্ত ওঠে মায়ের মৃন্ময়ী রূপ।
প্রতিমা তৈরিতে গঙ্গা জল, ধানের শীষ, গোবর, গাভীর মূত্র ছাড়া আরও একটি উপকরণ হল যৌনপল্লীর মাটি। হ্যাঁ, দুর্গাপ্রতিমা তৈরিতে সমাজের তথাকথিত অপবিত্র পাড়ার মাটিই অপরিহার্য। স্বাভাবিক কারণেই প্রশ্ন কেন এই রীতি অনন্তকাল ধরে পালিত হচ্ছে!
আশ্চর্যের বিষয় হলো পৃথিবীর প্রাচীনতম ব্যবসা হিসাবে এই দেহ ব্যবসাকেই ধরা হয়। কিন্তু তথাকথির সভ্য সমাজের কাছে তারা ব্রাত্য। এ পাড়ার বাসিন্দাদের প্রতি সমাজের অবজ্ঞা, বঞ্চনা প্রতিনিয়ত। যে যৌনপল্লীকে সমাজ ব্রাত্য করে রাখে, সেখানকারই মাটি কেন ব্যবহার হয় উমাকে গড়ে তুলতে? বলা হয়, শাস্ত্র মেনেই এই প্রথা চলে আসছে যুগ যুগ ধরে। বলা হয়, যৌনকর্মীর বাড়ির দরজায় পুরুষরা নিজেদের সঞ্চিত সমস্ত পুণ্য বিসর্জন দিয়ে আসে। সে কারণেই ওই মাটি পবিত্র হয়ে ওঠে। আর তা দিয়ে গড়া হয় মাতৃমূর্তি। এই সময়ে মহামায়া নয় রূপে পূজিত হন। নর্তকী বা অভিনেত্রী, কাপালিক, ধোপানী, নাপিতানী, ব্রাহ্মণী, শূদ্রাণী, গোয়ালিনী, মালিনী ও পতিতা। নবম কন্যা যৌনপল্লীরই প্রতিনিধি। মনে করা হয়, এই কারণেও এই প্রথার জন্ম হয়ে থাকতে পারে। আসল কথা হলো সমাজে সর্বস্তরের মানুষের সমন্বয়েই গড়ে ওঠে হিন্দুদের এই জাতীয় উৎসব।