বেঙ্গল ওয়াচ নিউজ ডেস্ক: প্রত্যাশা থেকে অনেকটা এগিয়ে তৃণমূল আর অনেকটা পিছিয়ে বামশক্তি।
যে বাম শক্তি ৩৪ বছর বাংলায় ছিল অপরাজেয়, তাদের কি এমন ঘটনা ঘটলো যে মানুষ সরাসরি তাদের প্রত্যাখ্যান করলো? আরেকটু স্পষ্ট করে বলে যায়, মানুষ নিজের চোখে দেখেছে তৃণমূলের দূর্নীতি – কয়লা থেকে নিয়োগ দূর্নীতি, রেশন থেকে আবাস দূর্নীতি। তবুও মানুষ উজাড় করে ভোট দিয়েছে তৃণমূলকে। মানুষ সবটা জেনেও বাম শক্তিকে প্রত্যাখ্যান করে কেন উজাড় করে ভোট দিয়েছে তৃণমূলকে? এমন অনেক প্রশ্ন সামনে এসেছে। উত্তর খুঁজেছেন সমাজ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।
প্রথমে দেখে নেওয়া যাক এই কেন্দ্রগুলোর প্রাপ্ত ভোটের পরিসংখ্যান।
* কোচবিহারের সিতাই কেন্দ্রে ফরোয়ার্ড ব্লকের প্রার্থী অরুণ কুমার বর্মা পেয়েছেন মাত্র ৩ হাজার ৩১৯ ভোট।
* মাদারিহাট কেন্দ্রে আরএসপির পাদম ওঁরাওয়ের প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যাও কাছাকাছিই। তিনি পেয়েছেন ৩ হাজার ৪১২ ভোট।
* মেদিনীপুর কেন্দ্রে সিপিএম প্রার্থী মণিকুন্তল খামরুই পেয়েছেন ১১ হাজার ৮৯২টি ভোট।
* বাঁকুড়ার তালড্যাংরা কেন্দ্র থেকে সিপিএমের প্রার্থী দেবকান্তি মোহান্তি পেয়েছেন ১৯ হাজার ৪৩০টি ভোট।
* নৈহাটি কেন্দ্র থেকে সিপিএম (এমএল) প্রার্থী দেবজ্যোতি মজুমদারও পেয়েছেন ৭ হাজার ৫৯৩ ভোট।
এই পাঁচ আসনেই প্রার্থীদের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে।
এবার প্রশ্ন যে বামেদের এই বিপর্যয় ও তৃণমূলের এই বিপুল ভোটপ্রাপ্তির প্রধান কারণ কি? ২০১১ সালে সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম সহ একাধিক আন্দোলকে কেন্দ্র করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলার মসনদে বসেন। তারপর ক্রমাগত তৃণমূলের ভোট যেমন বেড়ে চলেছে তেমনই কমে চলেছে বামেদের ভোট। বামেরা যে হারিয়ে যাচ্ছে না তা কিন্তু প্রমাণ করেছে কেরালা। সম্প্রতি বিহার ও ঝাড়খন্ডে বামেরা কয়েকটি আসন পেয়েছে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে এসেই থমকে দাঁড়িয়েছেন তারা।
সমাজ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করেন এর অন্যতম কারণ -‘লক্ষ্মীর ভান্ডার।’ কোনো পরিবারে মহিলাদের হাতে কিছু টাকা তুলে দেওয়া গেল তার প্রভাব পড়ে ভোটে।
এছাড়াও বাংলায় কোনো সবল বিরোধী শক্তি নেই। বিরোধী হিসাবে বিজেপি বিধানসভায় থাকলেও তারাও অনেকটা ক্ষয়িষ্ণু। মানুষ এই মুহূর্তে বামেদের বিরোধী হিসাবে ভাবতে পারছে না। অন্যদিকে তৃণমূল বিরোধী যে বামের ভোট রামের গিয়েছিল সেই ভোট ফিরিয়ে আনার জন্য মাঠে ময়দানে নেমে লড়াই করতে পারছে না বামেরা। বামেদের প্রধান কোনো মুখ নেই, যাকে দেখে মানুষ উজ্জীবিত হবে। নতুন প্রজন্মের কাছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য। তৃণমূলার অন্তত এক ডজন নেতার বিরুদ্ধে বিস্তর দুর্নীতির অভিযোগ থাকলেও স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীর সম্পূর্ণ কলুষমুক্ত। এখন পর্যন্ত মানুষ মুখ্যমন্ত্রীকে দেখেই ভোট দেন। তাই মানুষ টিভিতে দেখেছেন যে অন্তত হাফ ডজন নেতা-মন্ত্রী হাত পেতে ঘুষ নিয়েছেন। তবুও মানুষ তাদের ভোট দিয়েছেন। কারণ তারা ভোট দিয়েছেন সেই নেতা-মন্ত্রীদের নয়, ভোট দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। যদিও এবারের প্রার্থী তালিকায় তেমন কোনো প্রার্থী তৃণমূলের ছিল না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর একাধিক সামাজিক প্রকল্প মানুষকে ‘হাতে গরম’ কিছু পাইয়ে দিয়েছে। আর মানুষ সেই কৃতজ্ঞতায় মমতাকে উজাড় করে ভোট দিচ্ছেন।