বেঙ্গল ওয়াচ নিউজ ডেস্ক:তৃণমূলের সঙ্গে প্রায় ২৩ বছরের সম্পর্ক ছিন্ন করলেন তাপস রায়! নিয়োগ দুর্নীতিতে তাঁর বাড়িতে হানা দেয় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টর। বিবি গাঙ্গুলি স্ট্রিটের বাড়িতে এই দীর্ঘ তল্লাশি চলে। স্বচ্ছ রাজনীতিবিদ হিসাবেই পরিচিতি রয়েছে তাপস রায়ের। আর তাঁর বাড়িতে কিনা তদন্তকারী সংস্থা! এই ঘটনায় রীতিমত অপমানিত হন প্রাক্তন এই তৃণমূল নেতা।
এমনকি তা প্রকাশ্যেও জানিয়েছেন তিনি। যদিও এই বিষয়ে তাপস রায়ের পাশে দাঁড়ায়নি। একটা কথাও বলেননি খোদ তৃণমূল সুপ্রিমোও। আর সেই ক্ষোভ-অভিমান থেকেই তৃণমূল ছাড়লেন বরাহনগরের বিধায়ক। শুধু দল নয়, বিধায়ক পদ থেকেও ইস্তফা দিয়েছেন তিনি। লোকসভা ভোটের আগে তাপসের (Tapas Roy) এই সিদ্ধান্ত অবশ্যই শাসকদল তৃণমূলের কাছে বড় ধাক্কা বলেই মনে করা হচ্ছে।
সোমেন মিত্রের হাত ধরে রাজনীতি
তথ্য বলছে সত্তরের দশক থেকে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত তাপস রায় (Tapas Roy)। তরুণ বয়সেই সোমন মিত্রের হাত ধরে কংগ্রেসে যোগদান। অনেকেই বলতেন খুব অল্প সময়েই ‘ছোড়দা’র ( পড়ুন- সোমেন মিত্র) কাছের লোক হয়ে উঠেছিলেন ডাকাবুকো তাপস রায়।
ছাত্র রাজনীতিম করলেও দক্ষ রাজনীতিবিদ হিসাবেই নিজেকে প্রমাণ দিয়েছিলেন তিনি। বাম জমানায় উত্তর কলকাতার মতো শক্ত জায়গায় চোখে চোখ রেখে রাজনীতি করে এসেছেন। এমনকি সেই সময়ে প্রভাবশালী বাম নেতা লক্ষ্মী দে’কেও চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন তাপস।
তৃণমূলে যোগদান
কংগ্রেসে থাকাকালীন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ। যদিও সোমেন মিত্রের সঙ্গে সংঘাতে কংগ্রেস ছাড়েন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৈরি করেন তৃণমূল কংগ্রেস। দল গঠনের পরেই তাপসকে (Tapas Roy) ডেকে নেন নেত্রী। এরপর থেকে প্রায় ২৩ বছর ধরে তৃণমূলের সঙ্গেই যুক্ত রয়েছেন এই রাজনীতিবিদ। দীর্ঘ এই সময়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একাধিক রাজনৈতিক আন্দোলন থেকে শুরু করে কর্মসূচির সাক্ষী থেকেছেন তাপস রায়।
বিধায়ক হন বড়বাজার বিধানসভা থেকে
উইকিপিডার তথ্য অনুযায়ী, তাপস রায় ২০০১ সালে বড়বাজার বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক (Tapas Roy) হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। এরপর যদিও বরাহনগর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছিলেন তাপস রায়। ২০১১, ২০১৬ এবং ২১ এর বিধানসভা নির্বাচনেও ওই কেন্দ্র থেকে জয় পেয়েছেন প্রাক্তন এই তৃণমূল নেতা।
হয়েছিলেন প্রতিমন্ত্রী
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দ্বিতীয় সরকারের সময় প্রতিমন্ত্রী হয়েছিলেন তাপস রায় (Tapas Roy)। যদিও তা অল্প কিছু দিনের জন্য। যদিও তৃতীয় সরকারে মন্ত্রিসভায় আর জায়গা পাননি তাপস রায়। যদিও তৃণমূলের উপমুখ্য সচেতক পদে দীর্ঘদিন কাজ সামলেছেন তিনি। এমনকি দমদম-ব্যারাকপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি হিসবেও কাজ সামলেছেন।
সুদীপের সঙ্গে সংঘাত চরমে
তৃণমূলে থাকাকালীনই সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সংঘাত চরমে ওঠে। প্রকাশ্যে তাঁকে আক্রমণ শানিয়েছেন তাপস রায় (Tapas Roy)। সুদীপকে সরিয়ে উত্তর কলকাতা জেলা তৃণমূলের সভাপতি করা হয়েছিল তাপসকে। যদিও পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাপসকে সরিয়ে দেন। এবং ওই পদে ফের সুদীপকে ফিরিয়ে আনেন।
যা নিয়ে আক্রমণ করতে দেখা যায় তাপস রায়কে। কার্যত সেই সময় থেকেই ক্ষোভ চরমে ওঠে। সম্প্রতি তাঁর বাড়িতে ইডির তল্লাশির পিছনে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় রয়েছে বলেও তোপ দেগেছেন। আর এই সংঘাতের আবহেই তৃণমূল ছাড়লেন তাপস রায়।