বেঙ্গল ওয়াচ নিউজ ডেস্ক: বছর কয়েক আগে পিছিয়ে যাওয়া যাক। লক্ষ্মীপুজোর দুপুর, পাড়ার মোড়ের মাথায় টানটান উত্তেজনা। বড়সড়ো কিছু একটা ঘটবে ঘটবে ভাব। আচমকা সেখানে এসে পড়া কারও জায়গাটাকে যুদ্ধক্ষেত্র বলে ভুল হলেও খানিকক্ষণ পরেই উদ্ঘাটন হবে আসল রহস্য।
হঠাৎ যখন গলির মাথা থেকে শোনা যাবে পুরোহিত ভট্টাচার্যমশাই বা ঝাবাবুর সাইকেলের ঘণ্টীর শব্দ। মুহূর্তে মোড়ের মাথায় এতক্ষণ অপেক্ষা করা লোকগুলো শিকারি বাঘের মতো সাইকেল ধরে টানাটানি শুরু করবে। কেউ বা আবার বেগতিক বুঝে হয়তো পুরুতমশাইকে কাঁধে তুলেই দৌড় দেবে।
একসময় লক্ষ্মীপুজোর দিনে বিভিন্ন জায়গায় অত্যন্ত পরিচিত ছিল এসব দৃশ্য। কিন্তু সময়ের সঙ্গে পরিবর্তন এসেছে সবকিছুতেই। অনলাইনে এক ক্লিকের মাধ্যমে জিরে থেকে হিরে, সহজে পাওয়া যায় এখন সমস্ত কিছুই। ব্যতিক্রম নেই পুরোহিতের ক্ষেত্রেও। তার প্রমাণ পাওয়া গেল এবার জলপাইগুড়ি শহরেও। যেমন- মালতী বাড়ুই, থাকেন কলকাতায়। এবছর জলপাইগুড়ির বাড়িতে পুজো করার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু বাদ সাধে পুরোহিতের অভাব। তখনই সিদ্ধান্ত নেন সামাজিকমাধ্যমে পুরোহিত খোঁজার। আর অল্প সময়ে খোঁজ পেয়েও যান পুরোহিতের। বৃহস্পতিবার তাঁকে দিয়েই লক্ষ্মীপুজো সারবেন তিনি। এবিষয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা আরেক মহিলা তপতী গুহ রায় বলেন, ‘প্রতিবছর যিনি আমাদের বাড়িতে পুজো করেন তিনি অসুস্থ হওয়ায় দিগবিদিকশূন্য হয়ে পড়ে আমিও সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করি এবং মা লক্ষ্মীর কৃপায় পুরোহিতও পেয়ে যাই।’
অন্যদিকে, এইভাবে সামাজিক মাধ্যমের দৌলতে চারটি নতুন জায়গায় পুজোর খোঁজ পেয়ে বেজায় খুশি পুরোহিত সঞ্জয় চক্রবর্তীও। উচ্ছ্বসিত গলায় তিনি বলেন, ‘দু’দিনে চারটি জায়গার সময় ফাঁকা ছিল। অনেকেই সকাল থেকে ফোন করেছেন। তার মধ্যে চারজনকে সময় দিতে পেরেছি।’ সামাজিক মাধ্যমে এরকম পোস্ট দেখে নিজের নম্বর দিয়েছিলেন পুরোহিত উত্তম ভট্টাচার্যও। এখনও সেখান থেকে কেউ পুজোর জন্য যোগাযোগ না করলেও তিনি এই সমগ্র প্রক্রিয়াটিকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। এবিষয়ে তাঁর বক্তব্য, ‘এদিন অনেকেই চেষ্টা করেন সন্ধ্যায় বাড়িতে কোজাগরি লক্ষ্মীপুজো করার, কিন্তু অনেক সময় পুরোহিতের সঙ্গে সময় না মেলায় সেই আশা পূরণ হয় না। সেইজন্য পোস্টের মাধ্যমে এইভাবে পুরোহিতের নম্বর পাওয়ায় তাঁদের যেমন সুবিধা হয়, আমাদেরও কাজ করতে সুবিধা হয়।’
যদিও এই আমূল পরিবর্তনকে সাদরে গ্রহণ করতে পারেননি অনেকেই। শহরে এখনও এমন অনেক পুরোহিত আছেন যাঁরা সামাজিক মাধ্যম কেন স্মার্টফোন ব্যবহারেই বিশেষ স্বচ্ছন্দ নন। তাঁদের জন্য এই প্রক্রিয়া যথেষ্ট বিড়ম্বনার সৃষ্টি করেছে। যেমন- শহরের প্রবীণ পুরোহিত ষাটোর্ধ্ব বিশু চট্টোপাধ্যায়ের আক্ষেপ, ‘আমার কি-প্যাড ফোনই ভরসা। আগাগোড়াই যে সমস্ত বাড়িতে পুজো করতাম তাঁরা ফোন করে পুজোর জন্য যোগাযোগ করে নেন। অনলাইনে খাবার, জামাকাপড় পর্যন্ত ঠিক আছে, কিন্তু তাই বলে শেষপর্যন্ত পুরোহিত!’ হ্যা তাই এটাই সত্যি।