বেঙ্গল ওয়াচ নিউজ ডেস্ক: কোটা’ আন্দোলন দিয়ে শেখ হাসিনা বিরোধী আন্দোলন শুরু। তার পরে এক মাসের মধ্যে পদ্মা-মেঘনায় কিছু জল প্রবাহিত হতে না হতেই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কাঁদতে কাঁদতে দেশ থেকে পালিয়ে চলে আসতে হলো ভারতে। কিন্তু কেন? তাঁর বিরুদ্ধে এই তীব্র জন বিদ্রোহ কি তিনি জানতে পারেন নি? হয়তো তাই!

এই শেখ হাসিনার জন্ম ১৯৪৭ সালে। বাবা মুজিবর রহমানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় থেকেই তিনি ১৯৬০ এর সময়কালে রাজনীতিতে পা রাখেন। বাবা মুজিব জেলে থাকা অবস্থাতে বাবার দেখানো রাজনীতিকে দেশে ধরে রাখতে লড়াই চালান হাসিনা। এরপর দীর্ঘ লড়াইয়ের পর ১৯৭১ সালে পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। বঙ্গবন্ধু মুজিবর রহমান হন সেদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী। এরপর ১৯৭৫ সালে মুজিবর, তাঁর স্ত্রী ও তিন সন্তানকে হত্যা করে সেনা। শুরু হয় হাসিনার জীবনের নতুন লড়াই। সেই মুহূর্তে তাঁদের দুই বোনের বেঁচে থাকার লড়াই। আত্মরক্ষার লড়াই।

ঘটনাচক্রে মুজিবর হত্যার সময় হাসিনা ও তাঁর বোন রেহানা ছিলেন বিদেশে। তখন থেকেই তাঁদের হত্যার চেষ্টা শুরু। সেই সময়কালে ১৯৭৫ থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত হাসিনা গা ঢাকা দিয়ে দিল্লিতে ছিলেন। ৬ বছর ভারতে পরিচয় গোপন করে থাকার পর দেশে ফেরেন হাসিনা। হাল ধরেন বাবার প্রতিষ্ঠিত পার্টি আওয়ামি লিগের। ১৯৮১ তে দেশে ফিরে তিনি সেনা শাসিত বাংলাদেশে গণতন্ত্রের পক্ষে সওয়াল করতে থাকেন। তখন থেকেই তিনি চক্ষুশুল হয়ে ওঠেন সেনা বাহিনীর। বার বার তাঁকে হত্যার চেষ্টা হয়।

এর পরেই আসে ১৯৯১ সালের নির্বাচন। শেখ হাসিনার আওয়ামি লিগ পরাজিত হয়। মসনদে বসেন বিএনপির খালেদা জিয়া। শেখ হাসিনা থাকেন বিরোধী দলে। কিন্তু তার পরে ১৯৯৬ সালে জিতে মসনদে বসলেও আবার হেরে যান ২০০১ সালে। ২০০৮ সালে বিএনপির থেকে মসনদ ছিনিয়ে নিয়ে দাপুটে জয়ে ক্ষমতায় ফেরেন মুজিবকন্যা ও তাঁর দল। এরপর ৫ অগস্ট ২০২৪ এর আগে তাঁর গদি কেউ টলাতে পারেনি। আর যখন গদি হারালো তখন তাঁকে এক রকম পালিয়ে যেতে হলো চোখে জল নিয়ে।

শেখ হাসিনাকে আয়রণ লেডি বলার মূল কারণ তার কতগুলো বড়ো সিদ্ধান্ত। সমস্ত সিদ্ধান্ত যে গণতন্ত্রের নিয়ম মেনে হয়েছে তা নয়। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় ফিরে ১৯৭১ সালে মুক্তি যুদ্ধের অপরাদীদের সাজা দেওয়ার পথ নেয় হাসিনা সরকার। বিপক্ষের প্রধান খালেদা জিয়ার ১৭ বছরের জেল হয়। বহু বিপক্ষের তাবড় নেতাকে এই সময় সাজা দেওয়া হয়। ২০১৩ সালে জামাত এ ইসলামিকে নির্বাচনে অংশ নেওয়া থেকে নিষিদ্ধ করা হয়। ফলে ক্ষোভ বাড়তে থাকে দেশের অভ্যন্তরে এক শ্রেণীর মানুষের। এরপর ২০২৪ সাধারণ নির্বাচন। এই ভোটও বিএনপি বয়কট করে। তাঁদের প্রশ্ন ছিল, হাসিনা সরকারের আমলে স্বচ্ছ্ব ভোট পর্ব হবে কি না তা নিয়ে। এই ভোটে দাপুটে জয় ছিনিয়ে মসনদে আসেন হাসিনা। কিন্তু সত্যিই কি এই ভোটে গণতন্ত্রের প্রতিফলন ঘটেছিল। একটা মাত্র উদাহরণ দিলে বিষয়টা স্পষ্ট হবে। চতুর্থবারের জন্য জিতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হন তিনি। সেই নির্বাচনে তিনি ২ লাখ ৪৯ হাজার ৯৬৫ ভোট পেয়েছিলেন, আর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী পান মাত্র ৪৬৯টি ভোট। স্বাভাবিক কারণেই প্রশ্ন উঠেছে নির্বাচনের নিরপেক্ষতা নিয়ে। আর সেই হাসিনা ও রেহানা এখন মাথা গোঁজার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কাছে আবেদন করে যাচ্ছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *