মে মাসের একেবারে শেষে বর্ষা প্রবেশ করেছে কেরলে। তারপর থেকে জুন মাসের অর্ধেকের বেশি অতিক্রান্ত। এই সময়ের মধ্যে অধিকাংশ দিনই উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম ভারত তাপপ্রবাহ থেকে তীব্র তাপপ্রবাহের সম্মুখীন হয়েছে।
অন্যদিকে মে মাসের শেষে কেরলে প্রবেশ করা বর্ষা আপাতত মহারাষ্ট্র পর্যন্ত এগিয়েছে। যে কারণে উত্তর ভারতের সমতলভূমির সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৫-৪৭ ডিগ্রির আশপাশের রয়ে গিয়েছে। কোনও কোনও দিন হিমাচল প্রদেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা হারিয়ে দিয়েছে বিকানেরকে।
ভারতে সাধারণভাবে বর্ষাকাল হল জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাস। দেশের বার্ষিক বৃষ্টিপাতের ৭০ শতাংশ এই বর্ষার বৃষ্টিই পূরণ করে। সাধারণভাবে বর্ষা ভারত মহাসাগর থেকে মে মাসের তৃতীয় সপ্তাহ নাগাদ আন্দামানে প্রবেশ করে। আর মূল ভূখণ্ডে তথা কেরলে প্রবেশ করে মে মাসের একেবারে শেষের দিকে কিংবা জুনের একেবারে প্রথমে।
এরপর বর্ষার মধ্যভারত পর্যন্ত দ্রুতগতিতে অগ্রসর হয়। তারপর গতি ধীর হয়ে যায়। জুন মাসের শেষ নাগাদ তা উত্তর প্রদেশ, দিল্লি এবং আশপাশের এলাকায় পৌঁছয়। আর ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে সারা দেশে বিস্তার লাভ করে।
একদিকে বর্ষা আগে ঢুকলে তা যেমন সারা দেশে ভাল বৃষ্টির নিশ্চয়তা দেয় না, অন্যদিকে বর্ষার দেরিতে আগমনে যে কম বৃষ্টি হবে, তাও নয়। জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশে ক্রমবর্ধমান বৃষ্টিপাত একাধিক কারণের ওপরে নির্ভর করে। এটা প্রাকৃতিক পরিবর্তনশীলতার ওপরেও নির্ভর করে। যার ওপরে নির্ভর করে প্রতিটি বর্ষা আলাদ হয়। বৃষ্টিপাতের পাশাপাশি এর বন্টন ও আলাদা হয়।
আবহাওয়া দফতরের তরফে এবার স্বাভাবিকের থেকে বেশি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। পরিমাণগতভাবে তা ১৯৭১-২০০০ সালের গড়ের ১০৬ শতাংশ হবে বলেই অনুমান করছেন তাঁরা। লা নিনার কারণে তা হবে বলেও জানিয়েছেন আবহবিদরা।
গত ১৯ মে বর্ষা আন্দামানে প্রবেশ করে। আর কেরল উপকূলে আসে ৩০ মে। দিন কয়েক আগে তা উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলিতে পৌঁছয়। ৩০ মের পরে বর্ষা লাক্ষাদ্বীপ, মাহে, তামিলনাড়ু, পুদুচেরি, কর্নাটক, তেলেঙ্গানা, অন্ধ্রপ্রদেশ ও মহারাষ্ট্রের একটা বড় অংশে পৌঁছে গিয়েছে।
তবে ১১ জুনের পর থেকে বর্ষা স্থির হয়ে রয়েছে। যে কারণে শুষ্ক এবং গরম ফিরে এসেছে দক্ষিণের রাজ্যগুলিতে। একসপ্তাহ ধরে সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে গড়ের থেকে কম বৃষ্টি হয়েছে। মঙ্গলবার পর্যন্ত যা ছিল মাইনাস ২০ শতাংশ।
এখনও পর্যন্ত যেসব রাজ্যে কম বৃষ্টি হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে ওড়িশায় মাইনাস ৪৭ শতাংশ, বাংলায় মাইনাস ১১ শতাংশ, বিহারে মাইনাস ৭২ শতাংশ এবং ঝাড়খণ্ডে মাইনাস ৬৮ শতাংশ। সঙ্গে যেসব জায়গায় ইতিমধ্যেই বর্ষা প্রবেশ করেছে, সেইসব জায়গায়ও শুষ্ক অবস্থা ফেরত আসায় বৃষ্টিতে ঘাটতি তৈরি হয়েছে।
আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে মৌসুমী বায়ু বর্তমানে অরুণাচল প্রদেশ, অসম, মেঘালয়, সিমিক, নাগাল্যান্ড, মণিপুর, মিজোরাম, ত্রিপুরা, হিমালয় সংলগ্ন পশ্চিমবঙ্গে সক্রিয় রয়েছে। আর এই সপ্তাহের শেষ নাগাদ কোঙ্কন এবং উত্তর কর্নাটকে বৃষ্টিপাত বৃদ্ধি পাবে। দক্ষিণবঙ্গের কিছু অংশে বর্ষার প্রবেশ চহবে বলেও পূর্বাভাস আবহাওয়া দফতরের। তবে জুন মাসে সারা দেশে বৃষ্টিপাত স্বাভাবিকের থেকে কম হতে পারে বলেও পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া দফতর।