জামাইষষ্ঠী – একটি প্রতিবেদন
বেঙ্গল ওয়াচ নিউজ ডেস্ক: আজ ২৯ জ্যৈষ্ঠ, ১২ জুন বাঙালির ঘরে ঘরে পালিত হচ্ছে জামাইষষ্ঠী উৎসব। এটা একেবারেই একটি পারিবারিক উৎসব। এই উৎসবের সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাংলার সামন্ততান্ত্রিক যুগের এক বিশেষ ধৰ্মীয় সংস্কৃতি। জামাইষষ্ঠী উৎসবের উৎস সম্পর্কে দুটি প্রচলিত লৌকিক কথা আছে। প্রথমত, সামন্ততান্ত্রিক যুগে একটি প্রচলিত নিয়ম ছিল যে, কন্যার বিয়ে দেওয়ার পরে সে সন্তানবতি হওয়ার আগে আর পিতৃগৃহে আসতে পারবে না। একেবারে সন্তান কোলে নিয়েই তাকে পিতৃগৃহে পা রাখতে হবে। এতে যেমন বাবা-মা কন্যাকে দেখার জন্য উতলা হয়ে উঠতেন, তেমনই কন্যা পিতৃগৃহে যাওয়ার জন্য কান্নাকাটি শুরু করতো। এই সমস্যা মেটানোর জন্যই জ্যৈষ্ঠ মাসের ষষ্ঠ তিথিতে ‘জামাই ষষ্ঠী’ উৎসবের আয়োজন। দ্বিতীয় কাহিনীটি হলো, নানা কারণে কন্যা গর্ভবতি না হলে চিন্তিত হতো তার বাবা মায়েরা। তাই এই দিন সন্তানের দেবী মা ষষ্ঠীর কাছে কন্যার মেয়েরা প্রার্থনা করেন তার মেয়ে যাতে গর্ভবতি হয়।
এ তো গেলো প্রচলিত লৌকিক কাহিনী। আসল কথা হলো জ্যৈষ্ঠ মাসে বাংলায় সৃষ্টি হয় আম, জাম, কাঁঠাল, কলা, লিচু, তরমুজ, করমচা ইত্যাদি প্রচুর সুস্বাদু ফল। কৃষি নির্ভর বাংলায় সেই ফল দিয়েই আপ্যায়ন করা হয় জামাইকে।
জামাইষষ্ঠীর দিন জামাইয়ের হাতে হলুদ মাখানো সুতো বেঁধে দেন শাশুড়ি মা। এরপর মঙ্গল কামনায় তেল-হলুদের ফোঁটা কপালে দিয়ে তালপাতার পাখা দিয়ে হাওয়া দিয়ে বলতে হয় ‘ষাট-ষাট-ষাট’। এরপর জামাইকে মাথায় ধান- দূর্বা দিয়ে আশীর্বাদ করেন মেয়ের মা। সেই সঙ্গে থালায় সাজিয়ে দেওয়া হয় পাঁচ রকমের গোটা ফল। যদিও বর্তমানে সকলের ব্যস্ততার কারণে বহু রেস্তরাঁতে আয়োজন হচ্ছে, বিশেষ জামাইষষ্ঠী। আর সকলে সেখানেই আদরে- যত্নে আপ্যায়ন করেন আদরের জামাইকে।
তবে বাঙালি ধৰ্মীয় সংস্কৃতির প্রথা অনুযায়ী, নতুন বস্ত্র, ফল- ফলাদি (আম, জাম, কলা, লিচু, কাঁঠাল বা গ্রীষ্মকালীন ফল), পান- সুপারি, ধান- ১০৮ দূর্বা, বাঁশের করুল, করমচা ফল, তালের পাখা, উপহার দিয়ে শাশুড়ি মায়েরা উদযাপন করেন জামাইষষ্ঠী। বাংলার ‘বারো মাসে তেরো পার্বন’ এর একটি অন্যতম পারিবারিক পার্বন জামাই ষষ্ঠী।