বেঙ্গল ওয়াচ নিউজ ডেস্ক: সাম্প্রতিক সময়ে পশ্চিমবঙ্গে সাড়া জাগানো দুর্নীতি বিরোধী মামলার শুনানির দায়িত্বে ছিলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। ফলে তাঁর বিরুদ্ধে শাসক তৃণমূলের তরফে অভিযোগ উঠেছে বারে বারে। অন্যদিকে বিরোধীরা তাঁর রায়ের প্রশংসা করেছেন। অন্যদিকে নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় ভুক্তভোগীরাও তাঁর প্রশংসা করেছেন।
এহেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের চাকরি জীবনের আর মাস পাঁচেক বাকি ছিল। সেই পরিস্থিতিতে তিনি নিজের পদে ইস্তফা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ৫ মার্চ মঙ্গলবার তিনি ইস্তফা দেবেন বলে জানিয়েছেন। পাশাপাশি তিনি রাজনীতিতে যোগদানেরও ইঙ্গিত দিয়েছেন। একনজরে দেখে নেওয়া যাক তাঁর ফেলে আসা জীবনের নানা ঘটনাবহুল অধ্যায়।
ডব্লুবিসিএস অফিসার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেছিলেন অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর প্রথম পোস্টিং ছিল উত্তর দিনাজপুরে। কিন্তু সেখানে ইস্তফা দিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে আইনজীবী হিসেবে কাজ শুরু করেন তিনি। নিজের সেই কর্মজীবনে অনিন্দ্য মিত্র, বিকাশ ভট্টাচার্যের মতো আইনজীবীদের কাছ থেকে যে অনেক কিছু শিখেছেন, তা নিজেই জানিয়েছেন অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।
অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের বাবাও ছিলেন আইনজীবী। তাঁর পড়াশোনা মিত্র ইনস্টিটিউশন মেইন-এ। স্কুল থেকে পাশ করে ১৯৭৯ সালে। কলেজ জীবনে তিনি বাংলা থিয়েটারে অভিনয় করেছেন।
২০১৮-র দোসরা মে হাইকোর্টে অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে যোগদান করেন। এবং ২০২০-র ৩০ জুলাই তিনি হাইকোর্টের স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিযুক্ত হন। কর্মজীবনে তিনি স্কুল সার্ভিস কমিশনের আইনজীবী হিসেবেও কাজ করেছেন।
সাম্প্রতিক সময়ে অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় সবার নজরে আসেন ২০২১ সালের নভেম্বর থেকে। স্কুল সার্ভিস কমিশনে নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় তিনি একাধিক ক্ষেত্রে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেন। তাঁর বেশ কিছু নির্দেশ নিয়ে প্রশ্ন তোলে রাজ্যের শাসক দল।
অন্যদিকে, অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় স্কুল সার্ভিস কমিশনে নিয়োগে অনিয়মের ক্ষেত্রে ডিভিশন বেঞ্চের পদক্ষেপ নিয়ে দেশের প্রধান বিচারপতির হস্তক্ষেপ চেয়ে চিঠি লেখেন। ২০২২-এর ১৩ এপ্রিল কলকাতা হাইকোর্টের বার অ্যাসোসিয়েশন অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের আদালত বয়কট করতে চেয়ে একটি প্রস্তাব আনে। তৃণমূলের কংগ্রেসের আইনজীবী সেল তার আদালতের বাইরে প্রতিবাদ করে।
ওই বছরের ১৭ মে তিনি পরেশ অধিকারী ও তাঁর মেয়ে অঙ্কিতা অধিকারীকে বেআইনি নিয়োগের অভিযোগে সিবিআইয়ের সামনে উপস্থিত হতে নির্দেশ দেন। ১৮ মে তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে শিক্ষক নিয়োগ কেলেঙ্কারির তদন্তের জন্য সিবিআইয়ের সামনে হাজিরার নির্দেশ দেন।
২০২২-এর সেপ্টেম্বরে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় অবৈধ উপায়ে নিযুক্ত হওয়া শিক্ষকদের সরিয়ে স্কুল সার্ভিস কমিশনে যোগ্য অপেক্ষমানদের তালিকা প্রকাশের নির্দেশ দেন। পরবর্তী সময়ে ২০২৩-এর জুলাইয়ে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে অবৈধ উপায়ে নিযুক্ত হওয়া ৯০৭ জন শিক্ষক-শিক্ষিতার তালিকা প্রকাশ করতে এসএসসিকে তিনি নির্দেশ দেন।
টিভিতে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের সাক্ষাৎকারের বিতর্কের জেরে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তাঁর এজলাস থেকে নিয়োগ দুর্নীতির মামলা সরানো হয় বিচারপতি অমৃতা সিনহার বেঞ্চে। এরপর ২০২৪-এর শুরুতে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাস থেকে সরানো হয় প্রাথমিকে নিয়োগ সংক্রান্ত মামলাও। সেই মামলায় পাঠানো হয় বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার এজলাসে। অন্যদিকে শ্রম ও শিল্প আইন সংক্রান্ত মামলা পাঠানো হয় তাঁর এজলাসে।
বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় সর্বশেষ যে বিষয়ে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন তা হল মেডিক্যাল কলেজে ভর্তিতে দুর্নীতির অভিযোগ মামলা। কিন্তু সেই নির্দেশের ওপরে স্থগিতাদেশ দেয় ডিভিশন বেঞ্চ।