বেঙ্গল ওয়াচ নিউজ ডেস্ক ::

 

এক ব্যক্তি তখন সেতুর উপর থেকে ঝাঁপ দেবেন। মানসিকভাবে তিনি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। পুলিশ কর্মীদের মনেও তখন প্রবল চাপ। যে কোনও ভাবে ওই ব্যক্তির জীবন রক্ষা করতে হবে। মাথায় আসে বিরিয়ানির প্রসঙ্গ। তখন ওই ব্যক্তিকে বিরিয়ানি খাওয়ানোর প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। অব্যর্থ ওষুধের মতো যেন কাজ করে এক প্যাকেট বিরিয়ানির নিমন্ত্রণ।

নিজের জীবনের প্রতি যেন বিতৃষ্ণা তৈরি হয়েছিল ওই ব্যক্তির। নীচে রেললাইন। উপরের সেতু থেকে তিনি তখন ঝাঁপ দেবেন। এমনই ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। সেই সময় তাকে এক প্যাকেট বিরিয়ানি খাওয়ার নিমন্ত্রণ করা হয়। এরপরেই শুরু হয় কথোপকথন। আর ওই ব্যক্তি আত্মহত্যার পথে যাননি।

মৃত্যুর মুখ থেকে এক ব্যক্তিকে বাঁচিয়ে নিয়ে এল কলকাতা পুলিশ। কেবল তাৎক্ষণিকতা ও উপস্থিত বুদ্ধির মাধ্যমে প্রাণ বাঁচানো গেল এক আত্মহণকারী ব্যক্তির। কলকাতার কড়েয়া থানা এলাকায় এই ঘটনা ঘটেছে সোমবার দুপুরের পরে। ওই ব্যক্তি আত্মহত্যা করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন।

সোমবার দুপুর আড়াইটের পরের ঘটনা। কলকাতার সায়েন্স সিটির কাছের একটি সেতু থেকে এক ব্যক্তি ঝাঁপ দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। সেই ঘটনা দেখে হইচই শুরু হয়ে যায়। উপস্থিত লোকজনের মধ্যে ওই ব্যক্তিকে ঝাঁপ দিতে বারণ করা হয়। কাছেই কড়েয়া পুলিশ থানা। সেখানেও খবর যায়।
কিন্তু কেন ওই ব্যক্তি নিজেকে শেষ করতে চাইছিলেন? জানা গিয়েছে, বছর ৪০ বয়সের ওই ব্যক্তির মানসিক অবস্থা একাধিক কারণে ভেঙে পড়েছিল। তার স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়েছে। ব্যবসাতেও আর্থিক ক্ষতি হয়েছিল। একাধিক সমস্যার মধ্যে দিয়ে ওই ব্যক্তি যাচ্ছেন। সে কারণেই আর নিজের জীবন সম্পর্কে হঠাৎ করেই উদাসীন হয়ে পড়েছিলেন তিনি।

নিজের বড় মেয়েকে বাইকে চাপিয়ে সায়েন্স সিটি যাচ্ছিলেন তিনি। ব্রিজের কাছে তিনি বাইক থামান। মেয়েকে বলেন, তার মোবাইল ফোনটি পড়ে গিয়েছে। তিনি ফোনটি নিয়ে আসছেন। মেয়ে যেন ওখানেই অপেক্ষা করে। মেয়েকে দাঁড় করিয়ে রেখে তিনি ব্রিজের কাছে পৌঁছে যান। সেখান থেকে ঝাঁপ মারার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।

কলকাতা পুলিশের দুর্যোগ মোকাবিলা দফতরের দল ও দমকল কর্মীরা সেখানে পৌঁছন। তিনি তখনও ব্রিজ থেকে লাফানোর জন্য ইচ্ছাপ্রকাশ করে চলেছেন। পুলিশ ও দমকল কর্মীরা ওই ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলতে শুরু করেন। তার মেয়ের সঙ্গেও প্রথমে কথা বলা হয়। কী কারণে সমস্যা হয়েছে? তা জানার চেষ্টা করেন। দমকল ও পুলিশ কর্মীরা মেয়ের থেকে কথা শুনে প্রস্তুতি নেন।

এরপর ওই ব্যক্তির সঙ্গে কথোপকথন শুরু হয়। তাকে কাজের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। এছাড়াও তিনি ব্রিজের থেকে নেমে এলে তাকে বিরিয়ানি খাওয়ানো হবে। এই বার্তাও পাঠানো হয়েছিল। কথোপকথনে মন গলে ওই ব্যক্তির। এরপর তিনি ধীরে ধীরে ব্রিজের উপর থেকে নেমে আসতে শুরু করেন। হাঁফ ছাড়েন উপস্থিত সকলে।

ব্যস্ত রাস্তায় প্রায় আধ ঘন্টাখানেক ওই ঘটনা চলছিল। যানজট হয়ে গিয়েছিল সেতুর উপরে। পুলিশ ওই ব্যক্তিকে বুঝিয়ে সাজিয়ে নিরস্ত করেছেন। তাকে মেয়ের সঙ্গে বাড়ি পাঠানো হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *