বেঙ্গল ওয়াচ নিউজ ডেস্ক ::
জম্মু-কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা বাতিলকে চ্যালেঞ্জ করে আবেদনের উপর রায় শোনাল সুপ্রিম কোর্ট! বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রশেখর চূড়ের নেতৃত্বে গঠিত পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ এই নির্দেশ শোনায়।
জম্মু ও কাশ্মীরের একীকরণের প্রস্তাবে স্বাক্ষর থেকে শুরু করে 370 ধারা বিলোপ। আদালতই বা কি (Article 370 Verdict) জানাল? কীভাবে গড়াল পরিস্থিতি। এক নজরে দেখে নেওয়া যাক –
জম্মু ও কাশ্মীরের একীকরণ
এসসি অবজারভারের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ১৯৪৭ সালের ২৬ শে অক্টোবর শেষ শাসক মহারাজা হরি সিং জম্মু ও কাশ্মীরকে ভারতে পক্ষে আনার ক্ষেত্রে একটি চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করেছিলেন। ঠিক পরের দিন অর্থাৎ ২৭ অক্টোবর, তৎকালীন গভর্নর জেনারেল লর্ড মাউন্টব্যাটেন সে চুক্তি অনুমোদন করেন। পুরো বিষয়টি কয়েকটি ক্ষেত্রের মধ্যেই সীমাবন্ধ ছিল।
তৈরি হয় ভারতের সংবিধান
সে সময় আলাদা একটা সংবিধান ছিল সে রাজ্যের। কিন্তু ১৯৫০, ২৬ জানুয়ারি, আলাদা সংবিধান ভারতের লাঘু হল। অনুচ্ছেদ 370 ধারা অনুযায়ী, সরকারের সম্মতি ছাড়া জম্মু ও কাশ্মীরের জন্যে নির্ধারিত সুযোগের বাইরে কোনও আইন তৈরি করবে না। কিছু ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতিকে বেশ কিছু সুবিধা দেওয়া হয়। কিন্তু চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে রাজ্যগুলির সঙ্গে আলোচনার কথা বলা হয়। জম্মু ও কাশ্মীরের গণপরিষদ সম্মত না হলে 370 ধারা সংশোধন বা বাতিল করা যাবে না বলেও উল্লেখ রয়েছে।
370 অনুচ্ছেদ, রাষ্ট্রপতির প্রথম সাংবিধানিক আদেশ
১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি, তৎকালীন রাষ্ট্রপতি রাজেন্দ্র প্রসাদ অনুচ্ছেদ ৩৭০ অনুযায়ী, প্রথম আদেশ জারি করেন। যা ছিল জম্মু এবং কাশ্মীরের জন্যে। যার মাধ্যমে বেশ কিছু বিষয় স্পষ্ট করা হয়। যা সুচিবন্ধ করা হয়।
সংবিধান সভা গঠন
১৯৫১ সালের, ৩১ অক্টোবর, ৭৫ সংসদীয় জম্মুকাশ্মীর সংবিধান সভা গঠন করা হয়। সমস্ত সদস্য সেই সময় শ্রীনগরে একত্রিত হয়য়। সকল সদস্যই জম্মু ও কাশ্মীরের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ আবদুল্লাহর নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল কনফারেন্স পার্টির। উদ্দেশ্য ছিল জম্মু ও কাশ্মীরের জন্য একটি সংবিধান প্রণয়ন করা।
দিল্লি চুক্তি
এরপর কেন্দ্র সরকার এবং জম্মু-কাশ্মীর সরকারের মধ্যে দিল্লি চুক্তি হয়। আর তা হয় ১৯৫২ সালে। জম্মু ও কাশ্মীরকে বিশেষ রাজ্যের মর্যাদা দেওয়া হয়। আর সেই চুক্তি অনুযায়ী, জম্মু-কাশ্মীর সরকারের হাতে বেশ কিছু ক্ষমতা দেওয়া হয়। দিল্লি চুক্তিটি ভারতীয় সংবিধানের কিছু বিধান, যেমন মৌলিক অধিকার, নাগরিকত্ব, ব্যবসা-বাণিজ্য, ইউনিয়ন নির্বাচন এবং আইন প্রণয়ন ক্ষমতার কথা উল্লেখ করে। ১৯৫৪ সালে দিল্লি সমঝোতা লাগু হয়। যেখানে জম্মু এবং কাশ্মীরের আঞ্চলিক অখন্ডতার গ্যারেন্টির কথা বলা। সে রাজ্যের স্থায়ী নাগরিকদের বিশেষ অধিকারের কথা বলা হয়।
১৯৫৬ সালে জম্মু-কাশ্মীরের সংবিধান
পাঁচ বছর প্রক্রিয়ার পর, ১৭ নভেম্বর, ১৯৫৬ সালে জম্মু-কাশ্মীরের সংবিধান হয়। ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল এবং থাকবে সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যদিও সেদিন সংবিধান সভা অবলুপ্ত করে দেওয়া হয়। এরপর দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়া, সংবিধানিক সংশোধন ঘটে।
রদ হয় ৩৭০ ধারা
২০১৯ সাল, ৫ অগাস্ট। বড় সিদ্ধান্ত নেয় মোদী সরকার। জম্মু-কাশ্মীর থেকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয় ৩৭০ ধারা। জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা লোপ পায় তাতে। আনা হয় সংশোধন। আর সেই মতো পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল তৈরি করা হয় জম্মু এবং কাশ্মীরকে ভেঙে। মোদী সরকারের এহেন সাহসী সিদ্ধান্ত ঘিরে প্রশ্ন ওঠে। আইনগত এবং সংবিধানিক ভাবে এই সিদ্ধান্ত কতটা বৈধ তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
আগুন জ্বলে ওঠে কাশ্মীরে
মোদী সরকারের এহেন সিদ্ধান্তের পর বিক্ষোভের আগুন জ্বলতে দেখা যায় কাশ্মীরজুড়ে। পরিস্থিতি সামাল দিতে মাসের পর পর ইন্টারনেট বন্ধ থাকে। বাহিনীকে ধরে চলে ইটবৃষ্টি। ঘটনার পিছনে পাকিস্তানের হাত রয়েছে বলে বারবার অভিযোগ করে ভারত। যদিও অতীত ভুলে কাশ্মীর এখন অনেক শান্ত। মোদী সরকারের দাবি, ৩৭০ ধারা রদ করতেই সেখানে শান্তি ফিরে এসেছে। কমেছে জঙ্গি হামলা। কিন্তু ৩৭০ ধারা রদ কি সঠিক ছিল।
মামলা হয় সুপ্রিম কোর্টে
মোদী সরকারের এহেন সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে মামলা হয়। একাধিক মামলা হয়। তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বে গঠিত বেঞ্চে মামলা হয়। দীর্ঘ শুনানি শেষে আদালত বলল, ৩৭০ ধারা ছিল অস্থায়ী। জম্মু ও কাশ্মীর ভারতের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পরে তাদের সার্বভৌমত্ব ভারতের কাছে সমর্পণ করেছে। কাশ্মীর ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ বলেই জানিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত।