গঙ্গা দূষন বন্ধে সরকারী ভাবে  নেওয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ । কিন্তু দামোদরের  দূষন ঠেকাতে তেমন কোন কর্মসূচি কোন কালেই নেওয়া হয়েছে বলে কারুরই জানানেই । শুধু অবৈজ্ঞানিক ভাবে  দামোদর থেকে বালি তোলার কারনেই নয় । প্রতিমা বিসর্জন থেকে শুরু করে পিকনিক ।

 

নিত্যদিন এমনই সব নানা কারণে বেড়ে চলেছে  দামোদরের  দূষন ।  দূষনের হাত থেকে  দামোদরকে বাঁচাতে বর্ষ শুরুর দিনে এক  অভিনব  উদ্যোগ নিল পূর্ব বর্ধমানের মেমারির পাল্লারোড পল্লীমঙ্গল সমিতি ও মেমারি থানার  পুলিশ ।  এদিন দামোদরের চড়ে পিকনিক করতে আসা কাউকেই প্লাস্টিক সরঞ্জাম ও থার্মোকলের তৈরি থালা ব্যবহার  করতে দেওয়া হয়নি ।  সেই সব সামগ্রী পুলিশ ও ক্লাব সদস্যরা বাজেয়াপ্ত করেনেয় ।  পরবর্তে  পিকনিক করতে আসা মানুষজনের  হাতে  তুলে দেওয়া হল শালপাতার থালা ও মাটির থালা । পুলিশ ও পল্লীমঙ্গল সমিতির এই কর্মকাণ্ডের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন  জেলার সকল পরিবেশ প্রেমী মানুষজন ।

পূর্ব বর্ধমান জেলার বিস্তির্ণ এলাকা জুড়ে বয়ে গেছে দামোদর নদ । রাজ্যের শষ্যগোলা বলে পরিচিত পূর্ব বর্ধমান জেলায় চাষের জমিতে সেজের জলের যোগান মেলে এই  দামোদরের  থেকেই । ধর্মীয়  ভাবেও দামোদরে একটা আলাদা গুরুত্ব রয়েছে ।  বর্ণ হিন্দু  সম্প্রদায়ের মানুষজন গঙ্কাকে পবিত্র জলাশয় হিসাবে যেমন মনেকরেন  তেমনই দামোদরকেই  পবিপত্র জলাশয় হিসাবে মনেকরেন  আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষজন । পিতৃ পুরুষের উদ্দেশ্যে তর্পন সারা থেকে শুরু করে  সমস্ত ধর্মীয় ক্রিয়া কলাপ সবই আদিবাসীরা সারেন দামোদরের পবিত্র জলেই । জেলার বাসিন্দাদের অভিযোগ “ দিনের পর দিন সেই দামোদরের দূষন নানাভাবে বেডে চলেছে । কল কারখানার বর্জই শুধু  দামোদরে নিস্কাশন করা হচ্ছেনা ।  প্রতিমা বিসর্জন  থেকে শুরুকরে  পিকনিক করতে আসা মানুষজনের ফেলা থার্মকলের পাতা , প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ, আর মদের বোতল সবই পড়ছে দামোদরে । আগে শীতের মরশুমে দামোদরের জলে  পরিযায়ী পখির   বিচরন দেখা গেলেও এখন দূষন বাড়ার সাথে সাথে দামোদর থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছে পরিযায়ী পাখিরা । ”এসব নিয়ে  পরিবেশ বিদরা উদবেগ প্রকাশ করলেও তানিয়ে অবশ্য কোন মহল থেকে তেমন হেলদোল দেখাযায়ি । অবশেষে মেমারি থানার  পুলিশ ও পাল্লারোড পল্লীমঙ্গল সমিতি দামোদরকে দূষনের হাত থেকে বাঁচাতে অগ্রণী ভূমিকা নেওয়ায় খুশি পরিবেশ প্রেমীরা ।

প্রতি বছরের মত  এবছরও   ১ জানুয়ারী পাল্লারোড এলাকায় দামোদরের বালির চড় সহ দামোদরের পাড় ঢাকা পড়েছিল পিকনিক করতে আসা মানুষ জনের ভিড়ে। এদিন সকালেই পিকনিক করতে আসা মানুষজনের কাছে পৌছেযাম  মেমারি থানার পুলিশ ও পাল্লারোড পল্লীমঙ্গল সমিতির সদস্যরা । প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ ,থার্মোকলের থালা  , গ্লাস  ও অন্যান বর্জ দামোদরে ফেলার কারণে দামোদর যে দূষিত হচ্ছে সেকথা তারা পিকনিক করতে আসা সকল মানুষজনকে বোঝান । এর পর পুলিশকে সঙ্গে নিয়েই সমিতির সদস্যরা  পিকনিক করতে আসা মানুষজনের কাছ থেকে থার্মকলের থালা ও প্লাসটিক ক্যারিব্যাগ  সংগ্রহ করেনিয়ে তাদের কারুর হাতে শালপাতার থালা আবার কারুর হাতে মাটির তৈরি থালা তুলে দেন । দামোদরকে দূষণ মুক্ত করার আবেদন এনারা রাখেন  পিকনিক করতে আসা সকল মানুষজনের কাছে ।সকলেই বুঝতে পারেন  মহৎ উদ্দেশ্যেই পুলিশ ও পল্লিমঙ্গল সমিতির সদস্যরা এই কর্মকাণ্ডে সামিল হয়েছেন । তাই পিকনিক করতে আসা মানুষজনের কেউ  কোন প্রতিবাদের রাস্তায় না গিয়ে  থার্মকলের থালা ও প্লাসটিক ক্যারিব্যাগ নিজেরাই  সমিতির সদস্যদের হাতে তুলেদেন । তারাও সকলেই বললেন,আমরাও চাই  দূষণ মুক্ত হোক পবিত্র জলাশয় দামোদর ।

পল্লীমঙ্গল সমিতির সম্পাদক সন্দীপন সরকার জানিয়েছেন , প্রতি  বছর বড় দিন ও ১ জানুয়ারী লাখো মানুষ  পাল্লারোড সহ সংলগ্ন এলাকার দামোদরের চড়ে  পিকনিক করতে আসেন ।  পিকনিক সেরে তারা থার্মকলের থালা , প্লাসটিকের  গেলাস , বাটি , ক্যারিব্যাগ সহ সমস্ত বর্জ দামোদরে ফেলেদিয়ে চলেযান । এসবের কারনে দামোদর যেমন  দূষিত হয় তেমনই দূষিত হয় এলাকর পরিবেশও ।  বছর বছর ধরে এমনটাই চলে আসছিল । সন্দীপন বাবু বলেন , দামোদরে বেড়েচলা দূষন দেখে তারা সমিতির সকল সদস্যরাও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলেন । এর প্রতিকারের জন্য  কিছু একটা করার ভাবনা নিয়ে তারা সকলে পৌছেছিলেন  মেমারি থানার ওসি দীপঙ্কর সরকারের কাছে ।সন্দীপন বাবু জানান ওসি  আমাদের সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দেন । যতটা সম্ভব হয়েছে এদিন পিকনিক করতে আসা সকল মানুষ জনের  হাতে সমিতির সকল সদস্য মিলে শালপাতার থালা তুলেদিয়েছেন । একই  সঙ্গে দামোদরকে দূষনের হাতথেকে রক্ষা করার জন্য  সকলের কাছে অনুরোধ রেখেছেন  বলে তিনি জানান ।

ওসি দীপঙ্কর সরকার জানিয়েছেন , পল্লীমঙ্গল সমিতির এই উদ্যোগ প্রশংসার দাবিরাখে । আমারা তাদের পাশেথেকে সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছি । দামোরেকে দূষন মুক্ত করতে সবাই এগিয়ে আসুক এটা আমরাও চাই ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here