সূর্য চট্ট্যোপাধ্যায়, নদীয়া: গত শনিবার দুপুর ১.৩০-২.০০ নাগাদ শান্তিপুরের বাবলা এলাকার আমবাগানে দুই বৃদ্ধ দম্পতিকে উদ্দ্যেশ্যহীনভাবে এদিক ওদিক ঘুরতে দেখে শান্তিপুরের কিছু সমাজসেবী সংগঠনের কর্মীরা।
সন্দেহ হওয়ায় তাঁরা বৃদ্ধ দম্পতিকে জিজ্ঞাসা করতেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন ওই বৃদ্ধ দম্পতি। তখনই জানা যায় আসল কারণ- কী বললেন সেই বৃদ্ধ দম্পতি? শুনলে গা শিউরে উঠবে।
বৃদ্ধ দম্পতির নাম অশোকরঞ্জন বিশ্বাস ও মহূয়া বিশ্বাস। অশোকবাবু পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সেলস্ ট্যাক্স ডিপার্টমেন্টের আ্যডিশনাল্ কমিশনার ছিলেন। ২০১৫ সালের ৩১ শে জানুয়ারী তিনি অবসর গ্রহন করেন।
অশোকবাবু এবং মহূয়াদেবী জানান যে – তাঁদের একমাত্র ছেলে ও ছেলের বউ এবং ছেলের শ্বাশুড়ী দীর্ঘদিন ধরে তাঁদের ওপর অমানবিক শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার চালিয়ে যাচ্ছে, শেষ পর্যন্ত আর সহ্য করতে না পেরে তাঁরা বাধ্য হয়ে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়েছেন আত্মহত্যা করবেন বলে ।
তাঁরা আরও জানান যে- অশোকবাবু এই মূহূর্তে প্রতিমাসে প্রায় ৪৬,০০০ টাকা রাজ্য সরকারের পেনশন্ পেয়ে থাকেন। তাঁর পেনশনের সব টাকা প্রতিমাসে তাঁর ছেলে ও ছেলের বউ জোর করে হাতিয়ে নেয়, ১০০ টাকাও তাঁদেরকে দেয় না।
অশোকবাবুর পেনশন আ্যকাউন্টের এ টি এম কার্ডটিও তাঁর ছেলে জোর করে নিজের কাছে রেখে দিয়েছে। এই প্রসঙ্গে আরও জানা যায় যে- একদা সোদপুরে নিজের দোতলা বাড়ী ছিল বিশ্বাস দম্পতির, ছেলের আ্যক্সিডেন্টের চিকিৎসা করাতে গিয়ে সেই সাধের বাড়ীটিকে বিক্রি করতে হয় অশোকবাবুকে।
অশোকবাবুর ছেলে তেমন কাজকর্ম কিছুই করেন না। এইসব শুনে শান্তিপুরের সমাজসেবী সংগঠনের কর্মীরা বৃদ্ধ দম্পতিকে তৎক্ষণাৎ কিছু খেতে দেয় এবং তাঁদেরকে মানসিকভাবে উদ্বুদ্ধ করে এছাড়াও তাঁরা যে সবসময় তাঁদের সাথে আছে এও জানায়।
সমাজসেবী সংগঠনের কর্মীরাই শান্তিপুর থানার সাথে যোগাযোগ করে বৃদ্ধ দম্পতিকে তাঁদের হাতে তুলে দেয়। শান্তিপুর থানার ভূমিকাও এক্ষেত্রে প্রশংসনীয়। এরপর নদীয়া জেলা প্রশাসন বিষয়টাকে হাতে নেয়। এই মুহূর্তে অশোকবাবু এবং মহুয়াদেবী দুজনেই নদীয়া জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে আছেন।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানা গেছে তাঁরাই অশোকবাবুর বিষয়টা খুবই গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন। পরবর্তীকালে অশোকবাবুর ইচ্ছানুসারে নদীয়া জেলা প্রশাসন যাবতীয় আইনী ব্যবস্থাও তাঁর হয়ে করবে। আপাততঃ শেষ খবর পাওয়া অবধি বিশ্বাস দম্পতি নদীয়া জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে ভালোই আছেন। এক্ষেত্রে নদীয়া জেলা প্রশাসনের মানবিক মুখ অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখে। আগামী দিনে বিশ্বাস দম্পতি যেন স্বাভাবিকভাবে জীবনযাপন করতে পারে সেই দিকেই সবার সাথে আমাদেরও নজর থাকবে।