শ্রীজিৎ চট্টরাজ : শনিবার বিকেলে মধ্য কোলকাতার এক পাঁচতারা হোটেলে এক সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করে ট্রাভেল এজেন্টস সোসাইটি অফ কাশ্মীর ( টাস্ক) ।
সংগঠনের পক্ষে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে সংগঠনের সম্পাদক ওয়াসিম গুসানি জানান ,সংগঠনের শুরু ১৯৬৭ সালে। কাশ্মীরের প্রশাসনের সহযোগিতায় সংগঠন কাশ্মীরের পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে কাজ করে আসছে। ভূস্বর্গ কাশ্মীর কে বলা হয় দি ক্রাউন অফ ইনক্রেডিবল ইন্ডিয়া। নিঃসন্দেহে ভারতের মুকুট কাশ্মীর ভারতের গর্ব। প্রকৃতির অকৃপণ আশীর্বাদে স্রোতস্বিনী নদী, স্নিগ্ধ লেক, ফুলে ফলে ভরা বাগান ও পাহাড়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য স্বর্গের অনুভূতি এনে দেয়। তাইতো ভ্রমণ প্রিয় মানুষ দেশ বিদেশ থেকে বাড়ে বারে বারে হৃদয়ের টানে আসেন কাশ্মীরে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, মিনিস্ট্রি অফ হোম এফেয়ার্স গভর্মেন্ট অফ ইন্ডিয়া ও ন্যাশনাল ক্রাইমে রেকর্ডস ব্যুরোর রিপোর্টে বলা হয়েছে, কাশ্মীর এখন সম্পূর্ণ অপরাধ ও আতঙ্ক মুক্ত।একজন একাকী ও দলবদ্ধ মহিলারা নিজেরাই কাশ্মীর ভ্রমণ করতে পারেন নির্ভয়ে। এই দুই সংস্থার পক্ষে বলা হয়েছে , কিছু স্বার্থান্বেষী মহল অপপ্রচার চালালেও মিডিয়া ও কাশ্মীরের জনগণের প্রচারে সেই অপবাদ খারিজ হয়ে গেছে । অবশ্যই গত দুবছর করোনা পরিস্থিতিতে কাশ্মীরের পর্যটন ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হয় ভয়ানক রকম। কিন্তু আনন্দের কথা, গত বছর অক্টোবর মাস থেকে বছরের শেষপর্যন্ত প্রায় দু কোটি মানুষ কাশ্মীর ভ্রমণ করেছেন। যা কাশ্মীরের আগের সব রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। দেশ বিদেশের মানুষের ভিন্ন ভিন্ন ভাষা, ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতি, তবু পর্যটন শিল্প সেই ভিন্ন সংস্কৃতিকে জুড়তে পারে। বলতে দ্বিধা নেই, আমরা পশ্চিমবঙ্গ তথা সিটি ওফ জয় কলকাতার মানুষদের কাছে কৃতজ্ঞ। আমাদের পর্যটকদের প্রায় ৫০শতাংশ পশ্চিমবঙ্গের নাগরিক।
সংগঠনের পক্ষে প্রবীণ ব্যক্তিত্ব নাসির শাহ বলেন, কাশ্মীরের স্থায়ী দর্শনীয় স্থানের পাশাপাশি আমরা নতুন কিছু দর্শনীয় স্থান খুঁজে বার করেছি।যেমন গুরেজ, বাঙাস , লোলাব আহরবাল প্রভৃতি।এখানকার সৌন্দর্য উপভোগ করে প্রকৃতিপ্রেমী পর্যটকরা আপ্লুত হবেন। ইতিহাস বলছে, বাঙালির সঙ্গে কাশ্মীরের এক নাড়ির টান আছে। বহু বাঙালি চাষী শ্রমিক রুটি রুজির টানে কাশ্মীরের আপেল বাগান পরিচর্যার কাজে কাশ্মীরে যান। আগে দিন প্রতি মজুরি ছিল ৫০০ টাকা। এখন প্রায় ৮০০ টাকা পর্যন্ত পান। সঙ্গে বিনা খরচায় থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা। শ্রমিক মালিকের এমন সম্পর্ক,যে বাগান মালিকদের সন্তানরা শ্রমিকদের চাচা বলে সম্বোধন করেন। কেউ কেউ বাংলায় শ্রমিকদের বাড়িতে অতিথি হয়েও ঘুরে যান।
লোককথা ,ব্রহ্মার পুত্র কাশ্যপের নামেই কাশ্মীর কথার উৎপত্তি। এই প্রাচীন উপত্যকার এক জলাশয় বা হ্রদের পাশে আশ্রম ছিল ঋষি কাশ্যপের। এক রাক্ষসের ( অনার্য?)আক্রমণ প্রতিহত করে উপত্যকার রক্ষাকর্তা হন কাশ্যপ। তাঁর নামেই কাশ্যপ+ মীর বা মার হয়ে ওঠে কাশ্মীর। মীর শব্দের অর্থ জল। সেই হ্রদ অবশ্য আজ আর নেই। এখন কাশ্মীরের গর্ব ডাল লেক। শ্রীনগরের প্রতিষ্ঠাতা রাজা প্রভাকর সেন। সম্রাট অশোকের আগের ঘটনা।এরপর বৌদ্ধ ধর্মের আগমন। এরপর কুষাণ বংশের মিহিরকুলের হাতে বৌদ্ধদের নিধন। মুষ্টিমেয় কিছু বৌদ্ধ প্রাণ বাঁচাতে আশ্রয় নেন তিব্বতে ও লাদাখে। এরপর কাশ্মীরে শৈব যুগ। তারপর ইসলাম যুগ।
বাংলায় ছিল কাশ্মীরি শাল বিক্রেতাদের অবাধ যাতায়াত। চলতি বছরের টাকা তাঁরা পরম বিশ্বাসে পরের বছর এসে নিতেন । সেই সম্পর্কে ইদানিং ভাঁটা পড়েছে কর্পোরেট ছোবলে।bতবে বাঙালি কাশ্মীরি মধুর সম্পর্ক আজও অমলিন । বাঙালির ধুতি পাঞ্জাবির সঙ্গে আজও রাজযোটক কাশ্মীরি শাল। টাস্ক সংগঠনের পক্ষে এই প্রতিবেদকের প্রশ্নের উত্তরে জানানো হয়,আসন্ন জি ২০ সম্মেলনে অন্যতম অংশীদার কাশ্মীর। সুতরাং শুধু পর্যটন শিল্প নয়, কাশ্মীরের ফলন, কুটির শিল্প বিশ্বের দরবারে নতুন করে প্রকাশিত হওয়ার সুযোগ পাবে। আসন্ন গ্রীষ্মে পশ্চিমবাংলা থেকে রেকর্ড সংখ্যক মানুষ এবার কাশ্মীর ভ্রমণে যাবেন বলে তাঁরা আশা করছেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জম্মু ও কাশ্মীরের ট্যুরিজম বিভাগের কলকাতস্থিত কেন্দ্রীয় মুখ্য আধিকারিক ড: আহসান উল হক, ট্রাভেল এজেন্টস্ এসোসিয়েশন অফ বেঙ্গলের সভাপতি কৌশিক কর সহ কাশ্মীরের ১৫০ সদস্যের টাস্ক সংগঠনের বহু পর্যটন সংস্থার আধিকারিকেরা।