বেঙ্গল ওয়াচ ডিজিটাল ডেস্কঃ জমির খতিয়ান প্রদান অনুষ্ঠানের মঞ্চে উঠে মন্ত্রীকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললেন ছিটমহল আন্দোলনের অন্যতম মুখ মনসুর আলী।
বৃহস্পতিবার জেলার বিভিন্ন জায়গায় ক্যাম্প করে সাবেক ছিটমহলের বাসিন্দাদের হাতে তাঁদের জমির খতিয়ান তুলে দেওয়া হয়। তুফানগঞ্জ, শালমারার ক্যাম্পের পর দিনহাটা ২ নম্বর ব্লকের নয়ারহাট ক্যাম্পে হাজির হন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ।
সেখানে মঞ্চে উঠেই মনসুর আলীকে ডেকে নেন তিনি। সামনের আসনে বসিয়ে ছিটমহল আন্দোলন প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। পরে তাঁর হাতে জমির খতিয়ান তুলে দেওয়ার সময় মন্ত্রীকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলেন মনসুর আলী।
জানান, সেই রাজ আমলে দাদুর নামে জমির কাগজ ছিল। কিন্তু তাঁর বাবার নামে কোন কাগজ হয় নি। এখন তাঁর বয়স আশি ছুঁই ছুঁই। এই শেষ বেলায় এসে তিনি নিজের নামে জমির কাগজ পেলেন। বলতে বলতে ডুকরে কাঁদতে শুরু করেন মনসুর আলী। দিনহাটার পোয়াতির কুঠি সাবেক ছিটমহলের বাসিন্দা তিনি।
বিনিময়ের দাবী নিয়ে যখন উত্তাল ভারত-বাংলাদেশ। তখন যে কয়েকজন আন্দোলনকারীর নাম শোনা যেত, তাঁর মধ্যে অন্যতম মনসুর আলী। এদিন মঞ্চে তাঁর সেই আন্দোলনের কথা জানান মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ নিজে।
নৌছিটমহল বিনিময়ের দাবী জানাতে মনসুর আলীদের নিয়ে কোচবিহার শহর দেওয়াল লিখেছেন রবীন্দ্রনাথ বাবু। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেল মন্ত্রী থাকা কালীন মনসুর আলী সহ একটি প্রতিনিধি দল নিয়ে কোলকাতায় গিয়ে দেখা করে বিনিময়ের দাবির কথা জানিয়ে এসেছেন।
তৎকালীন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রমোদ মহাজনকে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। তাঁরপর মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে এই সীমান্ত এলাকায় এসে ছিটমহলের বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে গিয়েছেন। বাংলাদেশে গিয়ে সেখানকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে কথা বলেছেন।
শেষ পর্যন্ত ২০১৫ সালের ৩১ জুলাই মধ্য রাতে বিনিময়ের দাবী পূরণ হয়। তারপর ভোটার তালিকায় নাম, জব কার্ড, এলাকার সামগ্রীক উন্নয়ন সব হয়েছে। কিন্তু জমির মালিকনা পাচ্ছিলেন না। মাস দুয়েকও হয় নি মুখ্যমন্ত্রী কোচবিহারে এসে সাবেক ছিটমহলের বাসিন্দাদের জমির অধিকার দিয়ে দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেন। তারপরেই তৎপরতা শুরু হয়ে যায়। এবং শেষ পর্যন্ত আজ সেই সমস্যাও মিটে গেল।
এখন সাবেক ছিটমহলের বাসিন্দারা চাষের জন্য কৃষক বন্ধু প্রকল্পে সরকারি টাকা পাবেন, ফসলের ক্ষতি হলেও টাকা পাবেন, ইন্দিরা আবাসন প্রকল্পে বাড়ী নির্মাণ সহ নানা ধরনের সরকারি সুবিধা মিলবে, জমি কেনাবচা করতে সুবিধা হবে, বাইরে গিয়ে কোথাও আইনি সমস্যা হলে জমির কাগজ দেখাতে পারবেন। শেষে মনসুর আলীকে জড়িয়ে ধরে তাঁকে মন্ত্রী বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সব কিছু করে দিল মনসুর দা, তাঁর জন্য দোয়া করবেন।” আর মনসুর আলী কান্না জড়ানো গলায় দোয়া করার আশ্বাস দিলেন। এরপর আরও কয়েকজনের হাতে জমির খতিয়ান তুলে দিয়ে দ্রুত আরেকটি ক্যাম্পের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে যান মন্ত্রী। আর মঞ্চের একপাশে দাঁড়িয়ে মন্ত্রীর দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলেন তিনি। কাছে গিয়ে মনসুর আলীর বক্তব্য জানতে চাইলে বলেন, “রবি দা আমাদের কথা মনে রেখেছেন। মঞ্চে উঠেই আমাকে ডেকে নিয়েছেন। এই সম্মান দেওয়ার কথাও আমি কোনদিন ভুলবো না।”