তুহিন শুভ্র আগুয়ান;কাঁথিঃসত্যেন্দ্রনাথ দত্তের উত্তম ও অধম কবিতায় রয়েছে “কুকুরের কাজ কুকুর করেছে কামড় দিয়েছে পায়,তা বলে কুকুরে কামড়ানো কিরে মানুষের শোভা পায়?”সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের এই কবিতার উত্তরে আজ কিন্তু বলা যায় কুকুরে কামড়ানো মানুষের শোভা পায়।
কারণ এনআরএসে যেভাবে নির্মমভাবে ১৬টি কুকুরকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে তা সত্যিই মানুষের পাশবিকতার পরিচয়।
পৃথিবীর বাস্তুতন্ত্র রক্ষার জন্য যেমন প্রয়োজন মানুষের তেমনই প্রয়োজন আছে বিভিন্ন পশুদেরও।তাই এনআরএসে কুকুর হত্যার প্রতিবাদে যখন গোটা রাজ্যজুড়ে তোলপাড় তখন দিদিবাড়িতে বসে নিজের শিল্পসত্তার মাধ্যমে নির্মম ভাবে কুকুর হত্যার প্রতিবাদ জানালেন কেশপুরের প্রসেনজিৎ।
মঙ্গলবার নিজের ব্যক্তিগত কাজে কেশপুরের খেতুয়া গ্রাম থেকে পূর্ব মেদিনীপুরের কন্টাইয়ে দিদিবাড়িতে এসেছিলেন বছর পঁচিশের যুবক প্রসেনজিৎ কর।
সেখানে টেলিভিশনের পর্দায় তিনি এনআরএসে কুকুর হত্যার যাবতীয় দৃশ্য দেখেন।এরপর শিউরে ওঠে শিল্পী প্রসেনজিতের শৈল্পিক মন।থেমে থাকতে পারেননি প্রসেনজিৎ।তাই প্রসেনজিৎ হাতে একটুকরো পেনসিল ও একটি সুঁচ নিয়ে বসে পড়ে শিল্পের মাধ্যমে কুকুর হত্যার প্রতিবাদ জানাতে।মঙ্গলবার ও বুধবার দুই দিন ধরে পেনসিলের ডোগায় সুঁচের স্পর্শে প্রসেনজিৎ ফুটিয়ে তোলে এনআরএসে কুকুর হত্যার সেই দৃশ্য।যা দেখে এখন দিদিবাড়ির সকলের কাছে রিয়েল হিরো প্রসেনজিৎ।
এরা আগেও প্রসেনজিৎ বহু শিল্পকর্ম নিজের হাতে ফুঁটিয়ে তুলেছেন।চকের ওপর স্বামী বিবেকানন্দ,বিশ্বের সবচেয়ে ছোটো দুর্গা,পালকের মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি,মুসুর কলাই দিয়ে বিশ্ব বাংলার লোগোর মতো নানাধরনের শিল্পকর্ম প্রসেনজিৎ নিজের হাতেই গড়েছেন।
ছোটোবেলায় প্রসেনজিৎ পাঠ্য বইতে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর,রামকিঙ্কর বেইজের মতো ভাস্কর্য শিল্পীদের কথা পড়েছেন।তা থেকেই উদ্বুদ্ধ হয়ে প্রসেনজিতের এই সকল শিল্পকর্মের হাতে খড়ি বলা যায়।প্রসেনজিৎ ইংরেজিতে স্নাতক ও আইটিআই কোর্স করেছেন।এখন তিনি নিজের বাড়িতেই বাবার মোটরসাইকেল গ্যারেজে কাজ করেন।গ্যারেজে কাজের ফাঁকে তিনি ছোটোছোটো ছেলেমেয়েদের আঁকাও শেখান।তাদের আবদারে কখনও কখনও নিজেও রং-তুলি নিয়ে আঁকতে শুরু করে দেন।যা দেখে বেজায় খুশি বাবা মুক্তিপদ কর ও মা ছন্দা কর।তারা চান ছেলে তার শিল্পকর্ম নিয়ে একদিন গিনেস বুকে নাম তুলুক।মুক্তিপদবাবু ও ছন্দাদেবীর এই স্বপ্ন হয়তো কোনো একদিন বাস্তবাইত করতে পারবে ছেলে প্রসেনজিৎ।কারণ যে ছেলে বিশ্বের ছোটো দুর্গা,মুসুর কলাইয়ের ওপর বিশ্ব বাংলা,এনআরএসের কুকুর হত্যার প্রতিবাদ নিজের শিল্পকর্মের ওপর ফুটিয়ে তুলতে পারে সে ছেলে আগামীদিনে আরও বড় কিছু সৃষ্টি করতে পারবেনা কে বা বলতে পারে।কিন্তু কুকুর হত্যার প্রতিবাদ এমনভাবে পেনসিল ও সুঁচের মধ্যে!কথাটি একটু অস্বাভাবিক শুনতে লাগলেও অস্বাভাবিকতার কারণ জানালেন শিল্পী প্রসেনজিৎ নিজেই।তিনি জানান,“পেনসিল যেমন ভঙ্গুর মানুষের মনও তেমনি বর্তমানে ভঙ্গুর হয়ে যাচ্ছে।তাই আমি এই শিল্পে মানুষের এই ভঙ্গুর মনকে পেনসিলের সঙ্গে ও কুকুর হত্যার প্রতিবাদে হত্যার দৃশ্যকে আমি পেনসিলের ডোগায় ফুঁটিয়ে তুলেছি।”
প্রসেনজিতের এইধরনের শিল্প যেমন এক প্রতিবাদী মানসিকতার পরিচয়,তেমনি এক শিল্পসত্তার পরিচয়ও।আগামী দিনে আরও এগিয়ে চলুক প্রসেনজিৎ এটাই চান প্রসেনজিতের আত্মীয়-স্বজন পরিবার-পরিজনেরা।
ছবি:-প্রসেনজিতের প্রতিবাদী শিল্পকর্ম।
—