নিজস্ব সংবাদদাতা, নদিয়া : পেটের জ্বালা বড় জ্বালা” আর এই জ্বালা মেটাতে পেটের দায়ে সমাজে পুরুষদের সাথে কর্মজীবনের নিরিখে নিজেদের স্বনির্ভর ও সমকক্ষ করে তুলতে পথে নেমেছে মহিলারাও।

বাস্তব জীবনে বিভিন্ন ধরনের জীবিকার মধ্যে এমন কিছু কিছু জীবিকা আছে যা শুধুমাত্র পুরুষকেন্দ্রিক। সামাজিক ভাবে বা কায়িক পরিশ্রমের দিক থেকে বিচার করতে গেলে সেই সব জীবিকায় মহিলাদের অংশগ্রহণ প্রায় নগণ্যই বলা যেতে পারে।

সেই রকমই একটি জীবিকা হল ঢাকি, অর্থাৎ ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে হিন্দু সমাজে ঢাকের শুষ্ক চামড়ার ওপর যাদের কাঠির ছোঁয়ায় সুস্পষ্ট ছন্দের মাধ্যমে উৎসবের আগমনী বার্তা বহন করে আনে এই ঢাকি সম্প্রদায়।
এটি গ্রাম বাংলার একটি সুপ্রাচীন জীবিকা যেখানে শুধুমাত্র পুরুষদেরই প্রাধান্যতা লক্ষ্য করা যায়। বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপূজার থেকে শুরু করে বিভিন্ন রকম পূজার্চনায় ঢাক নামক এই প্রাচীন বাধ্য টির মাহাত্ম্য অপরিসীম।
এইবার পুরুষকেন্দ্রিক এই জীবিকা তে মহিলাদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের বাস্তব ছবি ফ্রেমবন্দী হলো আমাদের ক্যামেরায়।

নদীয়ার হরিণঘাটায় সপ্তদশ বঙ্গ সংস্কৃতি উৎসব উপলক্ষে দশ জন মহিলার একযোগে ঢাকের বাদ্য স্পর্শ করে গেল সাধারন মানুষের হৃদয় গভীরে। পুরুষকেন্দ্রিক এই জীবিকায় আজ মহিলারাও যে সমপরিমাণ দক্ষ হয়ে উঠতে পারে তার জ্বলজ্যান্ত প্রমাণ দেখালেন বর্ধমানের কাটোয়া থেকে আগত ঢাকি মিঠু দাস, ফুলটুসি দাস সহ অন্যান্য মহিলা ঢাকিরা।

হঠাৎ এই জীবিকাই কেন বেছে নিলেন? এই প্রশ্নে ঢাকি ফুলটুসি, ও মিঠু দেবী বললেন, শুধুমাত্র পেটের দায় হতদরিদ্র পরিবারের সন্তানাদিদের দুবেলা দুমুঠো অন্ন মুখে তুলে দিতে একজন গৃহবধূ থেকে কর্মজীবনে ঢাকি হিসেবে পথে নামতে বাধ্য হয়েছেন তারা।

তিনি আরো বলেন যে, রাজ্য সরকারের দ্বারা প্রাপ্ত অনুষ্ঠান যখন থাকে তখন উপার্জন ভালো হওয়ার কারণে সাংসারিক স্বচ্ছলতা ফিরে আসে। কিন্তু যখন সরকারের তরফে অনুষ্ঠানের কোন ডাক পান না সেই সময় পুনরায় দারিদ্রতার কালো মেঘ নেমে আসে সংসারের উপর। রাজ্য সরকারের থেকে তারা যেন বেশি করে অনুষ্ঠানে ডাক পান সেই অনুরোধ বারবার জানাতে থাকেন মিঠু ও ফুলটুসি দেবীরা।

ঢাক বাদ্য কে জীবিকা করে পেটের টানে দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ঘুরে বেড়ান ফুলটুসি ও মিঠু দেবীর মতন দশ জন মহিলা ও তিনজন পুরুষ সহ এই ঢাকিদের দলটি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here