বেঙ্গল ওয়াচ নিউজ ডেস্ক:আরপাঁচটা সাধারণ ছেলের মতো যে ভর্তি করা হয়েছিল পাড়ার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সেই ছেলেটি আজ ডব্লিউবিসিএস পরীক্ষায় চূড়ান্তভাবে সফল হয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অধীনে সমস্টি উন্নয়ন আধীকারিক পদে নিয়োগ হতে চলেছে।

বহরমপুর ব্লকের সাহাজাদপুর  অঞ্চলের নিশ্চিন্তপুরের ইয়ামিন সেখ  সমস্ত বাধা অতিক্রম করে সে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ডব্লিউবিসিএস পরীক্ষায় ১২তম রাঙ্ক করে এক নজীর সৃষ্টি করেছে। ইয়ামিন শেখ ২০০৪ সালে বাড়ির কাছে অবস্থিত ৩৪ নিশ্চিন্তপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সে ভর্তি হয়। তারপর যথাক্রমে ২০১৪ ও ২০১৬ সালে স্থানীয় সাহাজাদপুর সারবাগান উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে।
তারপর ২০১৯ সালে জিয়াগঞ্জ শ্রীপৎ সিং কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করে। তারপর সে চাকরির পরীক্ষার জন্য নিজেকে তৈরি করতে থাকে। হার না মানা জিদ আর প্রচন্ড পরিশ্রম করে অবশেষে সে ডব্লিউবিসিএস পরীক্ষায় চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হয়েছে।
সম্প্রতি তাকে সংবর্ধনা দেওয়া হল নিশ্চিন্ত পুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এই বিদ্যালয়ের বর্তমান প্রধান শিক্ষক মহব্বত আলী মোল্লা ছিলেন তার প্রথম জীবনের শিক্ষক। আজ ইয়ামিন সেখ কে সংবর্ধনা দিতে গিয়ে তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। তিনি বলেন সেদিনের সেই পাতলা লিকলিকে ছেলেটি আজ তাঁর বিদ্যালয় তথা জেলার গর্ব। ভাবতে অবাক লাগছে যে সমস্ত রকম সামাজিক আর্থিক প্রতিকুলতাকে পরাজিত করে সে আজ নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছে। সে আজ এলাকার আবেগ, বর্তমান অনিশ্চয়তার সময়ে আশাহত শিক্ষিত যুবক যুবতীদের কাছে অনুপ্রেরণা,আশার আলোকবর্তিকা। ইয়ামিন সেখকে সংবর্ধনা দেওয়ার এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সদর দক্ষিণ চক্রের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক সম্মাননীয় ইফতিখার হোসেন বিস্বাস, সাহাজাদপুর সারবাগান উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আরশাদুর রহমান মন্ডল,অত্র বিদ্যালয়ের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক শিক্ষারত্ন গোলাম মোস্তফা মোল্লা,বিশিষ্ট শিক্ষক আনারুদ্দিন খান, শিক্ষানুরাগী গিয়াসউদ্দিন সেখ , শিক্ষানুরাগী এনামুল হক এবং বিভিন্ন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকগণ।
বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ও বর্তমান ছাত্র ছাত্রী, শিক্ষক শিক্ষিকা এবং উপস্থিত সকল সূধীজনের সামনে নিজের জীবনের কথা বলতে গিয়ে ইয়ামিন নস্টালজিক হয়ে পড়ে।
তাঁর সাফল্যের জন্য সে প্রথমে তার আব্বা নুর ইসলাম ও মা সার্জিনা বিবির সহযোগিতার কথা স্মরণ করে। পাশাপাশি সে তার দাদা ও ভাইদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা জানায় ।
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য হজ কমিটির উদ্যোগে পরিচালিত কোচিং সেন্টার থেকে কোচিং নিয়ে ইয়ামিন ২০২১সালে ডব্লিউবিসিএস পরীক্ষায় পাশ করে কিন্ত ইন্টারভিউতে সফল হতে পারে নি। তবু ভেঙে না পড়ে পূনরায় প্রস্তুতি নিয়ে ২০২২সালে ইন্টারভিউ দিয়ে আজকে সে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছে। তাঁর কথায় বারবার উঠে আসছিল সরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কথা। কিভাবে সাধারণ দুঃস্থ, প্রান্তিক ছেলে মেয়েরা সরকারী প্রতিষ্ঠান থেকে সফল হতে পারে তার বাস্তব দিক সে তার বক্তব্যে তুলে ধরেছে। গাদা গাদা বেতন দেওয়া ঝাঁ চকচকে বেসরকারী প্রতিষ্ঠান নয় বিনা বেতনের সরকারী প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষা লাভ করে সফলতার কাহিনী সে আলোচনা করেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *