বেঙ্গল ওয়াচ নিউজ ডেস্ক: গ্রামের শ্মশান যাবার রাস্তা হাঁটু সমান কাদা। তাই এক হাঁটু কাঁদা পেরিয়ে মৃতদেহকে শ্মশানে নিয়ে যেতে হিমশিম খাচ্ছে গ্রামবাসীরা। এমনই ছবি সামনে এলো পূর্ব বর্ধমান জেলার খণ্ডঘোষ ব্লকের গোপাল বেড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের ইন্দুটিগ্রামে।
এই গ্রামে সাড়ে পাঁচ হাজার মানুষের বসবাস। প্রায় ৩৫০ পরিবার এই শ্মশান ব্যবহার করেন। গ্রামের মূল রাস্তা পাকা অথচ শ্মশান যাওয়ার রাস্তা পঞ্চায়েতের কাছে বারবার আবেদন করেও হয়নি বলে অভিযোগ গ্রামবাসীদের।
ইতিমধ্যেই এই রাস্তা পেরিয়ে মৃতদেহ শ্মশানে নিয়ে যাওয়ার একটি ভিডিও ভাইরাল হতেই আলোড়ন তৈরি হয়েছে বিভিন্ন মহলে। মৃতদেহ সৎকারের জন্য শ্মশান যেতে শোকার্ত পরিবারকে অনেক ঝুঁকি নিতে হচ্ছে। মূলত রায়পাড়া থেকে চাপরার পার পর্যন্ত শ্মশানঘাটের এই রাস্তা। এমনিতেই এই কাঁদা পেরিয়েই তাদের দৈনন্দিন কাজের জন্য হাঁটাচলা করতে হয়। তার ওপর গ্রামে যদি কেউ মারা যান তাহলে তো আর তাদের চিন্তার শেষ থাকে না। কিভাবে সেই দেহকে শ্মশানে নিয়ে গিয়ে সদকার করবেন তা নিয়ে চিন্তায় পড়েন গ্রামবাসীরা এবং পরিবার। একদিকে প্রিয়জনের মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ পরিবার, অন্যদিকে শ্মশানযাত্রার সময় রাস্তার এই দুরবস্থা যেন বেদনাকে আরও বাড়িয়ে তুলছে।
এলাকাবাসীরা বারবার কংক্রিটের রাস্তার দাবী জানিও পাইনি। আর এখানেই বিরোধীদের সুর চরা হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিজেপির জেলা সহ-সভাপতি মৃত্যুঞ্জয়চন্দ্রের অভিযোগ, এই এলাকাটি বিজেপির সংগঠন মজবুত । পঞ্চায়েত ভোটে এই বুথে তাদের জয় লাভ হয়েছে। তাই তৃণমূলকে ভোট না দেওয়ার ফল বোঝাতেই অমানবিকতার পরিচয় দিয়েছে স্থানীয় তৃণমূলের পঞ্চায়েত। তারা ইচ্ছাকৃতভাবে এই রাস্তা করেনি। পাশাপাশি দ্বারা আরো অভিযোগ রাস্তার নামে কাঠ মানি খেয়ে নেতারা কোটি টাকার মালিক হয়েছে। অবিলম্বে এই রাস্তা সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন তিনি।
অন্যদিকে সিপিআইএমের পূর্ব বর্ধমান জেলা কমিটির সদস্য বিনোদ ঘোষের অভিযোগ , গ্রামে কোন উন্নয়নই হয়নি। রাস্তা না হওয়াই গ্রামবাসীরা কষ্টে রয়েছে তাই কংক্রিটের রাস্তার দাবী জানিয়েছেন তিনিও।
এই ঘটনা পরিপ্রেক্ষিতে পূর্ব বর্ধমান জেলা তৃণমূলের মুখপাত্র প্রসেনজিৎ দাস দুঃখ প্রকাশ করেছেন। জানিয়েছেন, জেলা পরিষদ কে জানানো উচিত ছিল পঞ্চায়েতের । যারা পঞ্চায়েতে রয়েছে, এটা তাদের দায়িত্ব । পঞ্চায়েতের কোন ফান্ড নেই রাস্তা করার। রাস্তা করবে জেলা পরিষদ । তাই দ্রুততার সাথে যাতে রাস্তা হয় সেই দিকটি তারা দেখবে বলে জানিয়েছেন। পাশাপাশি এই ঘটনার জন্য তিনি ক্ষমা চেয়েও নিয়েছেন।
তবে গ্রামে রাস্তার বেহাল দশার এমন ছবি নিয়ে রীতিমতো আলোড়ন তৈরি হয়েছে। সকলের প্রশ্ন চারিদিকে উন্নয়নের বন্যা বইলেও কেন গ্রাম তার থেকে বঞ্চিত রইল? সর্বত্র কংক্রিট কিংবা পাকা রাস্তা হলেও কেন গ্রামে শ্মশান যাওয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ এই রাস্তা কাঁচাই রয়ে গেল? কবে এই রাস্তার কাদা সরিয়ে কংক্রিটের রাস্তা হবে সেদিকেই তাকিয়ে রয়েছেন গ্রামবাসীরা …….
