বেঙ্গল ওয়াচ নিউজ ডেস্ক :: ইংরেজি বছরের প্রথম মাস জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহেই গঙ্গাসাগর মেলার প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে সাগরদ্বীপে যেতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সব ঠিকঠাক থাকলে ৩ ও ৪ জানুয়ারি তাঁর এই গঙ্গাসাগর সফরের জোর সম্ভাবনা। মকর সংক্রান্তির দিন সারা দেশ থেকে গঙ্গাসাগরে কয়েক লক্ষ পুণ্যার্থী ভিড় জমান।
তাঁদের যাতে কোনওরকম সমস্যা না-হয় সেটা নিশ্চিত করতে প্রতি বছরই সরেজমিনে পরিদর্শনে যান মুখ্যমন্ত্রী। এবারও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না বলেই সূত্রের খবর। তবে তার আগে, ২৭ ডিসেম্বর রাজ্যের সকল মন্ত্রী এবং আধিকারিককে নিয়ে নবান্ন সভাঘরে বৈঠকে বসবেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে তার আগে মুখ্যমন্ত্রী ২৮ ডিসেম্বর যাচ্ছেন উত্তর ২৪ পরগনা জেলার চাকলায়। একগুচ্ছ কর্মসূচি নিয়েই জেলায় পা রাখতে চলেছে মুখ্যমন্ত্রী।
মুখ্যমন্ত্রীর গঙ্গাসাগর সফর উপলক্ষ্যে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসনে ব্যস্ততা এখন তুঙ্গে উঠেছে। প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, গঙ্গাসাগরে মুখ্যমন্ত্রী সাংবাদিক বৈঠক করতে পারেন। এই মেলা যাতে জাতীয় মেলার স্বীকৃতি পায় তার জন্য মুখ্যমন্ত্রী একাধিকবার সরব হয়েছেন। কিন্তু এখনও পর্যন্ত এই মেলাকে সেই স্বীকৃতি দেয়নি কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন নরেন্দ্র মোদির সরকার। এমনকি এই মেলা আয়োজনের জন্য কেন্দ্র সরকার ১টাকাও বরাদ্দ করে না। মেলা আয়োজনের যাবতীয় খরচ রাজ্য সরকারকেই বহণ করতে হয়। বাম জমানায় এই মেলায় আয়োজনের ক্ষেত্রে চরম অব্যবস্থা লেগে থাকত। রাজ্য সরকার কলকাতা থেকে গঙ্গাসাগর যাওয়ার জন্য হাতেগোনা কিছু বাসের ব্যবস্থা করত মাত্র। কিন্তু মমতার জমানায় সেই ছবি বদলেছে। কলকাতার বাবুঘাটে এখন গঙ্গাসাগর মেলা যাওয়ার জন্য প্রভূত সরকারি ও বেসরকারি বাসের ব্যবস্থা রাখা হয়। এক টিকিটেই যাতে কলকাতা থেকে গঙ্গাসাগর যাওয়া যায় তার ব্যবস্থাও করেছে রাজ্য সরকার। এমনকি মেলায় আসা যাত্রীদের জন্য বিমার ব্যবস্থাও করেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার।
মুখ্যমন্ত্রী সঙ্গাসাগরে যাওয়ার আগে গত সপ্তাহের বৃহস্পতিবার মুড়িগঙ্গায় ড্রেজিং থেকে শুরু করে গঙ্গাসাগর মেলা সংক্রান্ত সেচ দফতরের হাতে থাকা সমস্ত কাজের অগ্রগতি খতিয়ে দেখতে সাগরদ্বীপে পরিদর্শনে গিয়েছিলেন রাজ্যের সেচমন্ত্রী পার্থ ভৌমিক। তারপর তিনি জানিয়েছেন, লট এইটের অদূরে ২ এবং ৩ নম্বর পোলের মাঝে নতুন করে একটি চর দেখা গিয়েছে। ড্রেজিংয়ের বাকি কাজ হয়ে গেলেও নতুন করে দেখতে পাওয়া এই চর কাটাই এখন প্রশাসনের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। এই চর কাটতে ড্রেজার নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ফরাক্কা থেকে। চেষ্টা করা হচ্ছে মুখ্যমন্ত্রীর গঙ্গাসাগর সফরের আগেই সেই চর কেটে ফেলার। জানা গিয়েছে, এবারে মেলায় সাংবাদিক বৈঠক করে মুখ্যমন্ত্রী ফের গঙ্গাসাগরকে জাতীয় মেলার স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য দাবি তুলবেন। সেই সঙ্গে মেলায় বাড়তি কিছু সুবিধাপ্রধান নিয়েও কিছু ঘোষণা করতে পারেন। সেই সঙ্গে পুজো দেবেন কপিল মুনির আশ্রমে এবং দেখা করবেন ভারত সেবাশ্রম সংঘের সাধুদের সঙ্গেও।
তবে তার আগে ২৮ ডিসেম্বর মুখ্যমন্ত্রী যাচ্ছেন চাকলায়। সেখানে তিনি লোকনাথ মন্দিরে পুজো দেবেন। তারপর একগুচ্ছ সরকারি প্রকল্পের উদ্বোধন বা শিলান্যাসের কথা রয়েছে তাঁর। এরপর দুপুরে দলের কর্মীদের নিয়ে সভা করবেন তিনি। তবে সেই সভা হবে দেগঙ্গায়। চাকলার লোকনাথ মন্দিরে একাধিক উন্নয়ন হয়েছে এই সরকারের আমলে। তৈরি হয়েছে দুটি তোরণ, ভোগ বিতরণের জন্য বড় ঘর। তার পাশে টিকিট কাউন্টার, ২৮টি ফুলের দোকান। মন্দিরে পুজো দেওয়ার পর সেই সব কাজ খতিয়ে দেখার কথা রয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর। এরপর তিনি সরকারিভাবে সহায়তা প্রদান কিংবা একগুচ্ছ প্রকল্পের উদ্বোধন করতে পারেন। এরপর দেগঙ্গা ব্লকে জেলার বিধানসভা স্তরের নেতাদের নিয়ে বৈঠক করার কথা রয়েছে।