বেঙ্গল ওয়াচ নিউজ ডেস্ক: ঝাড়গ্রাম: পেটের তাগিদে ভিনরাজ্যে গিয়ে কাজ করতে গিয়ে অকালে প্রাণ হারালেন ঝাড়গ্রামের এক পরিযায়ী শ্রমিক। মৃত শ্রমিকের নাম গৌরাঙ্গ রানা (৩০)। বাড়ি ঝাড়গ্রাম জেলার গোপীবল্লভপুর ২ নম্বর ব্লকের বড় আসনবনি গ্রামে। পরিবারের একমাত্র ভরসা ছিলেন তিনি। তাঁর অকাল প্রয়াণে শোকের ছায়া নেমে এসেছে সমগ্র গ্রামে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি মাসের মাঝামাঝি সপ্তাহে গৌরাঙ্গ চেন্নাইয়ের একটি বেসরকারি কোম্পানিতে কাজে যোগ দিতে যান। গত রবিবার সন্ধ্যায় কাজ সেরে রুমে ফেরার পথে হঠাৎই এক বাইক আরোহীর ধাক্কায় গুরুতর জখম হন তিনি। প্রথমে তামিলনাড়ুর চেঙ্গালপট্টুর একটি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। পরে মাথায় মারাত্মক আঘাত থাকায় তাঁকে একটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। কিন্তু সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার রাতে মৃত্যু হয় গৌরাঙ্গ রানার। পরিবারের অভিযোগ, চিকিৎসায় গাফিলতি ও প্রশাসনিক হেনস্থার জেরেই অকালে প্রাণ হারাতে হল তাঁকে। মৃত্যুর পরও নাকি একাধিক দফায় অর্থ দাবি করেছে তামিলনাড়ুর পুলিশ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। অভিযোগ, জানানো সত্ত্বেও সরকারি হাসপাতালে সাধারণ বেডে ফেলে রাখা হয়েছিল বাংলার এই শ্রমিককে। এদিকে মৃত্যুর খবর গ্রামে পৌঁছাতেই ভেঙে পড়েছেন পরিবারের সদস্যরা। বাড়িতে রয়েছেন বৃদ্ধা মা, দাদা, স্ত্রী এবং মাত্র তিন বছরের এক কন্যা। কয়েক বছর আগে বাবার মৃত্যু হয়েছিল। সংসারের যাবতীয় দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে পেটের তাগিদেই তামিলনাড়ুতে পাড়ি দিয়েছিলেন গৌরাঙ্গ। পরিবারের পাশে দাঁড়াতে ব্যক্তিগতভাবে উদ্যোগী হয়েছেন গোপীবল্লভপুরের বিধায়ক ডাঃ খগেন্দ্রনাথ মাহাতো। মৃতের বাড়িতে গিয়ে শোকাহত পরিবারের সঙ্গে দেখা করে আশ্বাস দেন সর্বতোভাবে পাশে থাকার। এছাড়াও ব্লকের বিডিও নীলোৎপল চক্রবর্তী, থানার ওসি নিলু মন্ডল ও জেলাশাসক সুনীল আগরওয়াল নিজেই বিষয়টি নজরে রাখেন। এছাড়াও জেলার লেবার কমিশন নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হয়েছে পরিবারের সাথে। পাশাপশি বাংলা জাগো থেকে নিয়মিত প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করা হয়। যাতে দ্রুত এই কাজ সফল হয়। অবশেষে প্রশাসনিক তত্ত্বাবধানে বৃহস্পতিবার বিকেলে বিমানে কলকাতা বিমানবন্দরে আনা হয় গৌরাঙ্গর নিথর দেহ। সেখান থেকে জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় অ্যাম্বুলেন্সে করে পৌঁছে দেওয়া হয় তাঁর বাড়িতে। বিকেলে বিধায়ক স্বয়ং উপস্থিত থেকে সমস্ত প্রক্রিয়া তদারকি করেন। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মৃত শ্রমিকের পরিবারের জন্য পরিযায়ী শ্রমিক কার্ড তৈরি করে দেওয়া হয়েছে, যাতে তাঁরা সরকারি সাহায্য পান। তবে স্থানীয় বাসিন্দা ও পরিবারের দাবি, সংসারের একমাত্র ভরসা ছিলেন গৌরাঙ্গ। তাঁর স্ত্রী ও ছোট্ট মেয়ের জন্য অবিলম্বে চাকরির ব্যবস্থা করা হোক সরকারের পক্ষ থেকে। গ্রামে এখন শুধু একটাই দৃশ্য, সর্বত্র শোকের ছায়া।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *