বেঙ্গল ওয়াচ নিউজ ডেস্ক: ভিড় আছে, কিন্তু চেনা ছবিটা নেই। পুজোর দিনগুলিতে পাহাড়কে অচেনাই ঠেকেছে, যা দেখে অনেকেরই মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল। ব্যবসায়িক লাভক্ষতির হিসেব কষতে গিয়ে চিন্তায় দিন কেটেছে পর্যটন ব্যবসায়ীদের।

 

কয়েক বছর ধরে বিজনবাড়ির প্রত্যন্ত এলাকা থেকে ব্রিটিশ শাসনের ইতিহাস ধরে রাখা তাকদায় পর্যটকদের যে ভিড়টা হত, তাও কমছে। তাহলে কি মানুষের মন থেকে ধীরে ধীরে বেড়ানোর ইচ্ছেটা হারিয়ে যাচ্ছে? অরুণাচলপ্রদেশের বোমডিলা অথবা মেঘালয়ের ডাউকির ভিড় কিন্তু এই সম্ভাবনাকে নস্যাৎ করে দেয়। ১৫-১৬ নভেম্বর শিলংয়ে অনুষ্ঠিত চেরি ব্লসম ফেস্টিভালে তো প্রায় ৫০ হাজার পর্যটকের সমাগম ঘটেছিল।

পুজোর সময় দার্জিলিং পাহাড় নিয়ে পর্যটকদের এই অনীহার মূলে বেহাল ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক, প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন রয়েছে, তেমনই রয়েছে নতুন ডেস্টিনেশন গড়ে না ওঠা এবং অবশ্যই হোমস্টের স্বতন্ত্রতা হারিয়ে যাওয়া ও খরচ বেড়ে যাওয়া। গ্রামীণ পর্যটনে পর্যটকের আগ্রহ বাড়তেই খেয়ালখুশিমতো হোমস্টেগুলি দর বাড়িয়েছে, বলছেন পর্যটন ব্যবসায়ীরাই। সিজন তো বটেই, অফসিজনেও এখন হোমস্টেতে থাকাখাওয়ার খরচ অনেকটাই আয়ত্তের বাইরে। হোটেল ব্যবসায়ী কল্পক দে’র বক্তব্য, ‘হোটেলে দুজনের থাকতে যে খরচ হয়, তার থেকে অনেক বেশি খরচ হয় হোমস্টেতে। অল্টারনেটিভ চয়েস না থাকাতেই পর্যটকরা গ্রামীণ এলাকায় পৌঁছে বাড়তি খরচ করতে বাধ্য হন।’

বাড়তি খরচের বিষয়টি প্রথমদিকে তেমন আমল না পেলেও, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পর্যটকদের নজর পড়েছে বলে মনে করেন পর্যটন ব্যবসায়ীদের বড় অংশ। পর্যটন ব্যবসায়ী পার্থ গুহ বিষয়টি মেনে নিয়েও বলছেন, ‘কালিম্পংয়ে তাও কিছু নতুন স্পট হচ্ছে। কিন্তু দার্জিলিং পাহাড়ে সেই অর্থে নতুন ডেস্টিনেশন নেই। পর্যটকরা এক জায়গায় বারবার যেতে চান না। সেখানে উত্তর-পূর্ব ভারতে প্রচুর নতুন ডেস্টিনেশন তৈরি হয়েছে। ফলে সেখানে ছুটছেন অনেকেই।’ এখান থেকে অরুণাচলপ্রদেশ, অসম এবং মেঘালয়ে যে খরচ অনেকটাই কম, সেটাও মনে করিয়ে দিচ্ছেন পর্যটন ব্যবসায়ী দেবাশিস মৈত্র। তাঁর কথায়, ‘শুধু গাড়িভাড়া নয়, থাকা-খাওয়ার ক্ষেত্রেও ওখানে খরচ অনেক কম।’

দার্জিলিং পাহাড়ের পর্যটনের স্বার্থে বা ভবিষ্যতের জন্য ‘দরে’ লাগাম পরানো কি যায় না? রাজ্য পর্যটন দপ্তরের এক আধিকারিকের বক্তব্য, ‘পরিষেবা দেওয়ার ওপর নির্ভর করে তার মূল্য। তবে সুনির্দিষ্টভাবে অভিযোগ এলে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট হোমস্টের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।’

অবৈধ হলেও লিজ প্রথার জন্য যে দর বাড়ছে এবং স্থানীয় কৃষ্টি-সংস্কৃতি থেকে পর্যটকরা বঞ্চিত হচ্ছেন, তা পাহাড়ে পা রেখেই বুঝতে পেরেছেন পর্যটনমন্ত্রকের অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর (কলকাতা) জ্যোতির্ময় বিশ্বাস।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *