বেঙ্গল ওয়াচ নিউজ ডেস্ক:পরিবেশের উপযোগী করেই সৃষ্টি হয়েছে বিভিন্ন প্রাণী ও উদ্ভিদ। এটা প্রকৃতির খেলা। আফ্রিকায় জলের খুব অভাব। তাই প্রকৃতি সেখানে সৃষ্টি করেছেন বাওবার গাছ,যাকে বলা হয় ‘ ট্রি অফ লাইফ’।
সেই গাছ বিপন্ন হতে চলেছে। একটা বাওবার গাছ ৩ থেকে ৫ হাজার বছর পর্যন্ত বাঁচতে পারে। মহীরুহ বলতে যা বোঝায় তা এই বাওবাব। গোটা আফ্রিকা মহাদেশের আইডেন্টিটি। আফ্রিকার মানুষের সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িয়ে আছে এ গাছ। ১০০ মিটার লম্বা হয়। পরিধির কথা না হয় ছেড়েই দিলাম। কারণ, হাতিও এই গাছের ছায়ায় বিশ্রাম নেয়। এই বাওবাবের গুঁড়ি ধরে রাখতে পারে ১ লক্ষ লিটার জল। এই গাছই আজ বিপন্ন। আফ্রিকার বুক থেকে হারিয়ে যাচ্ছে বাওবাব। দক্ষিণ আফ্রিকার একদল গবেষক সম্প্রতি আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ ঘুরে একথা জানিয়েছেন। চিন্তার বিষয় হল বাওবাব নিশ্চিহ্ন হয়ে গেলে ভেঙে পড়বে আফ্রিকার বাস্তুতন্ত্র। এই গাছ বিপন্ন হলে মানুষ সহ বহু প্রাণী বিপদের মুখে পড়বে। বিপন্ন হতে পারে তাদের অস্তিত্ব।
একটা মাত্র বাওবাব গাছকে ঘিরে বেঁচে থাকে অসংখ্য পাখি, বাঁদর, বাদুড়, সরীসৃপ এমনকি হাতিও। গরমকালে যখন জল পাওয়া যায় না, তখন বাওবাবের আর্দ্র ছাল চিবিয়ে জল তেষ্টা মেটায় হাতি। মানুষও উপকৃত হয় এই গাছের দ্বারা। বাওবাবের ফল অত্যন্ত পুষ্টিকর। স্থানীয় মানুষেরা এই ফল খেয়ে বেঁচে থাকেন। ফল বিক্রি করে রোজগার করেন। বাওবাবের পাতাও সেদ্ধ করে খাওয়া হয়। পুষ্টিগুণ আছে তাতেও। এই গাছের ফুলের পরাগ থেকে তৈরি হয় আঠা। ছাল থেকে তৈরি হয় দড়ি, মাদুর, ঝুড়ি-সহ আরও নানা জিনিস। আফ্রিকার আদিবাসীরা এই গাছের পাতা, ফল, বীজ, ছাল ও কাণ্ডকে ওষুধ হিসাবে ব্যবহার করেন। এইজন্যই বাওবাবকে বলা হয় ট্রি অফ লাইফ। কিছুদিন আগে নেচার পত্রিকায় একটা প্রবন্ধ বেরোয়। তাতে বলা হয়েছে কোনও অসুখ বা মড়ক নয়। জলবায়ু বদলে যাওয়ায় বদলে যাচ্ছে আফ্রিকার সাভানা তৃণভূমির পরিবেশ। সুপ্রাচীন এই গাছগুলি নতুন পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে না পেরে হারিয়ে যাচ্ছে। আশার খবর বলতে একটা। আফ্রিকার দেশগুলোর নিজেদের মধ্যে ঝগড়া-মারামারি লেগেই আছে। তবে বাওবাব বাঁচাতে বিরোধ ভুলে একজোট হয়েছে তারা। তৈরি হয়েছে আফ্রিকান বাওবাব অ্যালায়েন্স। এখন দেখার তারা পারে কিনা এই গাছকে বাঁচিয়ে রাখতে, বাংশবিস্তার করাতে।