বেঙ্গল ওয়াচ নিউজ ডেস্ক: গুগলের হিসেব বলছে, কোচবিহার থেকে উত্তরপ্রদেশের বেনারসের দূরত্ব ৮২৯ কিলোমিটার। তবে মহারাজাদের সৌজন্যে সেই দূরত্ব ঘুচে দুই ঐতিহ্যের শহর এক সুতোয় বাঁধা পড়েছে।

 

অমাবস্যা তিথিতে মদনমোহনবাড়িতে যখন পূজিত হচ্ছেন বড়তারা, তখন কয়েকশো কিলোমিটার দূরে বেনারসে কোচবিহারের রাজরীতি মেনে করুণাময়ী ও দয়াময়ী কালীর পুজো হল। দুই জায়গাতেই কোচবিহারের মহারাজারা এই পুজোর প্রচলন করেছিলেন। রাজার শহরের সেই ঐতিহ্য মেনে এখনও পুজো হয় উত্তরপ্রদেশে। দেবত্র ট্রাস্ট বোর্ড সেই পুজোর দায়িত্বে রয়েছে। বোর্ডের সচিব কৃষ্ণগোপাল ধাড়ার কথায়, ‘তিথি মেনে নিয়মনিষ্ঠা সহকারে একদিকে যেমন মদনমোহনবাড়িতে বড়তারার পুজো হচ্ছে, তেমনই উত্তরপ্রদেশেও আমাদের কালীপুজো হয়েছে।’

ইতিহাসবিদরা জানান, মহারাজা হরেন্দ্রনারায়ণ কালীসাধক ছিলেন। কোচবিহারের বিভিন্ন জায়গায় তিনি কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। তবে শুধু তৎকালীন কোচবিহার রাজ্যে নয়, তার বিস্তার ঘটেছিল উত্তরপ্রদেশেও। হরেন্দ্রনারায়ণ তীর্থ করতে গিয়ে উত্তরপ্রদেশের বেনারসে কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করার ইচ্ছে প্রকাশ করেন। সেই কাজ শুরুও হয়। কিন্তু তা শেষ হওয়ার আগেই হরেন্দ্রনারায়ণ প্রয়াত হন। তাঁর অপূর্ণ কাজ শেষ করেন ছেলে শিবেন্দ্রনারায়ণ।

মহারাজা শিবেন্দ্রনারায়ণের আমলে ১৮৪৬ সালে অক্ষয় তৃতীয়া তিথিতে বেনারসের সোনারপুরে কালী মন্দির স্থাপিত হয়। সেখানে প্রতিদিন করুণাময়ী ও দয়াময়ীর পুজো চলে। প্রতি অমাবস্যায় বিশেষ ভোগ হয়। মন্দিরের পাশাপাশি মহারাজা সেখানে বসতবাড়ি ও সত্র তৈরি করেছিলেন। সেখানকার খরচ রাজপরিবারই বহন করত। বর্তমানে মন্দিরটি দেবত্র ট্রাস্ট বোর্ড পরিচালনা করে। বেনারসে থাকা বোর্ডের এক কর্মী বীরেন ঝা টেলিফোনে বললেন, ‘নিয়মনিষ্ঠা মেনে দুই কালীর পুজো হয়। পুজো উপলক্ষ্যে মন্দির সাজানো হয়েছে।’

সেখানে করুণাময়ীর পুজো করেন পুরোহিত প্রদীপকুমার মুখোপাধ্যায় ও দয়াময়ীর পুজোর দায়িত্বে রয়েছেন দীননাথ তেওয়ারি। তাঁরা জানালেন, সন্ধে থেকেই পুজো শুরু হয়েছে। পুজো শেষ হতে শেষরাত হয়ে যায়। এভাবেই চলছে আমাদের দিনের পর দিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *