বেঙ্গল ওয়াচ নিউজ ডেস্ক: সুন্দরবন মানেই ‘জলে কুমির, ডাঙায় বাঘ।’ তার সঙ্গে লড়াই করে বাঁচতে হয় ওই অঞ্চলের মানুষকে। মধু, কাঠ, মাছ ইত্যাদি সংগ্রহ সুন্দরবনের মানুষের একটা অন্যতম জীবিকা। আর এই জীবিকার কারণেই সুন্দরবন অঞ্চলের বহু পুরুষকে প্রাণ দিতে হয় ।
ফলে মানুষের মনে তৈরী হয় তীব্র ভয় এবং সেই ভয় থেকেই সৃষ্টি সুন্দরবনের দেবতা বনবিবির । দক্ষিণরায় হলো সাক্ষাৎ মৃত্যু অর্থাৎ বাঘ। আর তার থেকে মানুষকে বাঁচায় দেবী বনবিবি। সুন্দরবনের জঙ্গলে বা বিভিন্ন খাঁড়িতে গেলে বেশ কিছু জায়গায় দেখা মেলে বনবিবি মন্দিরের। তবে সুন্দরবনের জলা জঙ্গলে এই বনবিবিকে পুজো করার পিছনে এক কিংবদন্তি লুকিয়ে আছে।
কিংবদন্তি অনুযায়ী, সুন্দরবনের এক প্রত্যন্ত গ্ৰামে এক বিধবা মহিলা তাঁর ছেলে দুখি কে নিয়ে বাস করত। দুখির দুই জ্ঞাতি কাকা ছিল পাশের গ্ৰামের ধনা ও মনা। একবার ধনা ও মনা সুন্দরবনে মধু সংগ্রহ করতে যাওয়ার সময় দুখিকে নিয়ে যায়। জঙ্গলে যাওয়ার আগে দুখিকে তার মা জানিয়ে দেয়, ‘বনে আমার মতো তোর আরেক মা আছেন। কোনো বিপদে পড়লে তাঁকে ডাকবি।’ সেকথা দুখি মনে রাখে।
প্রচলিত গল্প অনুযায়ী এক রাতে দক্ষিণ রায় ধনা ও মনাকে স্বপ্ন দেখায়, দুখিকে তার কাছে দিয়ে গেলে তারা প্রচুর মধু পাবে। আর সেই মধুর লোভে তারা দুখিকে ওই গভীর বনে রেখে বাড়ি ফিরে যায়। এদিকে সবটা বুঝতে পেরে দুখি তার মায়ের কথা স্মরণ করে বন বিবিকে ডাকতে শুরু করে। দেবী বনবিবি দুখির ডাকে সারা দিয়ে তাকে দেখা দেয়। আর তিনি নিজে একটা কুমিরের পিঠে দুখিকে চাপিয়ে তাকে তার মায়ের কাছে পৌঁছে দেয়। এভাবেই বনবিবির মাধ্যমে জঙ্গলে দক্ষিণরায় অর্থাৎ বাঘের থেকে রক্ষা পাওয়ায় জন্য আজও জঙ্গলজীবী মানুষের কাছে বনবিবি জঙ্গলের আরাধ্যা দেবী হয়ে আছেন। এখনও জঙ্গলে প্রবেশ করার আগে সকলে বনবিবির পুজো দিয়ে তার পরে রওনা হন।