বেঙ্গল ওয়াচ নিউজ ডেস্ক,:লোকসভা নির্বাচনে রেশ কাটতে না কাটতেই ফের একটা নির্বাচন বাংলায়! আগামী ১০ জুলাই বাংলার চার বিধানসভা কেন্দ্রে উপ নির্বাচন হবে। ভোট হবে রায়গঞ্জ, রানাঘাট দক্ষিণ, বাগদা এবং মানিকতলা কেন্দ্রে। রায়গঞ্জে কৃষ্ণ কল্যাণী, রানাঘাট দক্ষিণে মুকুটমণি অধিকারী, বাগদায় বিশ্বজিৎ দাস ইস্তফা দেওয়ায় এই কেন্দ্রগুলিতে উপনির্বাচন হবে।

অন্যদিকে বিধায়ক সাধন পাণ্ডের মৃত্যুতে দীর্ঘদিন মানিকতলা কেন্দ্রটি খালি ছিল। সেখানেও ভোট (Maniktala Assembly By Elections 2024) হবে। যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর সেই কেন্দ্রে এবারও বিজেপির তাস বিজেপি নেতা কল্যাণ চৌবে ভট্টাচার্য (Kalyan Chaubey)। খোলামেলা আড্ডায় আজ সাংবাদিকদের মুখোমুখি তিনি। কী বলছেন প্রাক্তন ফুটবলার? জেতার ব্যাপারে কতটাই বা আত্মবিশ্বাসী তিনি?

কল্যাণবাবু জানান, লোকসভা নির্বাচনের পর আরেকটা নির্বাচন আসা একটি প্রতিকূল পরিস্থিতি। দল আমার ভরসা এবং বিশ্বাস রেখেছে এটা আমার কাছে গর্বে। মানিকতলা বিধানসভা উপ নির্বাচনের জন্য ভারতীয় জনতা পার্টি প্রস্তুত রয়েছে। জেতার জন্য লড়াই করবে। তবে মানিকতলায় দীর্ঘদিন বিধায়ক ছিলেন সাধন পান্ডে।

সেই আসনে কীভাবে রণকৌশল সাজাচ্ছেন বিজেপি প্রার্থী? এই প্রশ্নে কল্যাণ চৌবে জানান, কয়েকদশক ধরে সাধনবাবু মানিকতলার প্রতিনিধিত্ব করেছেন। সব শুরুর একটা শেষ থাকে। এটা দুঃখজনক যে তিনি মারা গিয়েছেন। তবে তাঁর পরিবারের প্রতি আমার সমবেদনা রয়েছে।

কিন্তু এই নির্বাচনে মানিকতলার মানুষ যদি মনে করেন এবার তাঁরা পরিবর্তন চান, একজন বিকল্প বিধায়ককে চান, জন প্রতিনিধিকে চান, তাহলে আমি বিশ্বাস দিতে চাই স্বচ্ছ ভাবমূর্তির একটি দল ভারতীয় জনতা পার্টি বা প্রার্থী বিধানসভায় গিয়ে মানিকতলার মানুষের উন্নয়নের কথা তুলে ধরবে।

শুধু তাই নয়, এই প্রসঙ্গে প্রাক্তন এই ফুলবলার জানান, আমরা সবসময় তোলাবাজির কথা শুনতে থাকি। তা সে রাস্তার হকার হোক কিংবা অটো চালক, ব্যাপক ভাবে তোলাবাজি চলে এই মানিকতলা এলাকায়। আর সেটা আমি বন্ধ করাই লক্ষ্য বলে একান্ত সাক্ষাৎকারে জানান।

অন্যদিকে সাধন-আবেগকে কাজে লাগিয়ে এবার স্ত্রীকে প্রার্থী করেছে তৃণমূল, সেই আবেগ কাটাবেন কী করে? এই প্রশ্নে মানিকতলার বিজেপি প্রার্থী জানান, তিনি একজন নারী এবং বয়সজেষ্ঠা! ব্যক্তি হিসাবে তাঁর প্রতি আমার কোনও অভিমত নেই। ভারতীয় জনতা পার্টির বিচার এবং ভাবনাকে মানুষের সামনে তুলে ধরতে যে যে বিষয় এবং কথা তুলতে হবে তা আমি তুলতে চাই। সাধন পত্নী তথা তৃণমূল প্রার্থী সুপ্তি পাণ্ডেকে নিয়ে আমি কোনও মন্তব্য করছি না।

কিন্তু সুপ্তি পাণ্ডের প্রার্থী হওয়াতে কিছুটা হলেও মেয়ে শ্রেয়া ক্ষুব্ধ হয়েছেন। প্রকাশ্যে এসেছে পারিবারিক দ্বন্দ্ব। এই প্রসঙ্গে বিজেপি নেতার মন্তব্য, আমি মিডিয়া এবং লোকজনের কাছে শুনেছি শ্রেয়ার প্রার্থী হওয়া প্রবল ছিল। তিনি এই বিধানসভায় অনেক সময় দিয়েছেন। তিনি টিকিট পেলে এই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা কিছুটা অন্যরকম হতো। তবে এখন তিনি টিকিট পাননি। তবে মা না মেয়ে কে টিকিট নেবে সেটা তাঁর পারিবারিক সিদ্ধান্ত বলেই দাবি বিজেপি প্রার্থীর।

মানিকতলায় তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দল প্রকট! নেতৃত্বকে বার্তা দিতে হচ্ছে পরিস্থিতি সামলাতে। এই প্রসঙ্গে কল্যাণবাবুর দাবি, বিষয়টি আমার দলের বিষয় নয়। আমি আমার দলের রাজনৈতিক প্রচার কীভাবে হবে, লড়াইয়ের দিকে বিশেষ নজর দিতে চাই। শাসকদলের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক ভাবে লড়াই হবে।

অন্যদিকে উল্টোডাঙ্গার একটি আবাসনে অটোর দাপাদাপি নিয়েও শাসকদলকে বার্তা দেন বিজেপি নেতা। তাঁর কথায়, এই ঘটনা খুবই লজ্জাজনক একটা ঘটনা। ভোট না দিলে আমার ক্ষমতাকে ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে ভয় দেখাবেন, ভয়ের পরিবেশ তৈরি করবেন তা ভদ্র সমাজে হয় না। ঘটনাকে মধ্যযুগীয় বর্বরতা বলেই উল্লেখ করছেন বিজেপি নেতা। তাঁর স্পষ্ট বার্তা, এমন সমাজ ব্যবস্থা মানুষ চায় না। আরও বেশি উদার এবং স্পোর্টি হওয়া উচিত। নির্বাচন সব সময় কাজের ভিত্তিতে হওয়া উচিৎ।

গত বিধানসভা নির্বাচনে শাসকদলের বিরুদ্ধে ভোট প্রভাবিত করার অভিযোগে সরব হয়েছিলেন কল্যাণ চৌবে ভট্টাচার্য। এবার সেই আশঙ্কা কার্যত উড়িয়ে দিতে পারছেন না। তাঁর কথায়, পঞ্চায়েত ভোট হোক কিংবা সমবায় নির্বাচন হলেই দেখা যাচ্ছে বিরোধীদের প্রার্থীদের উপর হামলা হচ্ছে, গাড়ি ভেঙে দেওয়া হচ্ছে। একবিংশ শতাব্দীতে এসে এমন নির্বাচন আমরা চাই? প্রশ্ন বিজেপি নেতার।

বাংলা সংস্কৃতি, রুচি নিয়ে অনেক বেশি আলোচনা করতে ভালোবাসে। এই জায়গা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। একটা সিস্টেম-অভ্যাসের মতো আসতে হবে। গণতান্ত্রিক ভাবে রক্তপাতহীন ভাবে বাংলায় যাতে ভোট হয় সেই বার্তা দেন। কিন্তু মনের অমিত কিংবা মতের অমিল হলেই ভত দেখানো হচ্ছে এই সংকীর্ণ মনোভাব থেকে বেরিয়ে আসার কথা বলে বিজেপি নেতা।

অন্যদিকে গত কয়েক বছরে মানিকতলায় কোনও কাজ হয়নি বলেও একান্ত সাক্ষাৎকারে জানান বিজেপি প্রার্থী কল্যাণ চৌবে ভট্টাচার্য। তাঁর দাবি, অবিলম্বে মানিকতলার তোলার অভ্যাসটাকে বন্ধ করতে হবে। খাল সংস্কার, জল নিকাশি নিয়েও মানুষের অভিযোগ রয়েছে। রাজনৈতিক রঙ না দেখে আরও উদার হওয়ার কথা বলেন।

তবে চারদশক ধরে একজন বিধায়ক ছিলেন। মানিকতলার মানুষের কী সুবিধা এবং অসুবিধা সেদিকেই বিশেষ নজর দেওয়ার কথা জানান বিজেপি প্রার্থী। তবে সাধন পাণ্ডের পরিবারের প্রতি অনেক আর্থিক দুর্নীতি, তোলাবাজির অভিযোগ রয়েছে। যা খুবই চিন্তার বিষয়। পুলিশের বিরুদ্ধেও তোলাবাজির অভিযোগ উঠছে। এই প্রসঙ্গে কল্যাণবাবু জানান, পুলিশের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ রয়েছে। বিশ্বাস তাদের ধরে রাখা উচিৎ।

সম্প্রতি বিজেপি নেতা কল্যাণ চৌবে তাঁর পদবীর সঙ্গে ভট্টাচার্য যুক্ত করেছেন। যা নিয়ে একাধিক প্রশ্ন উঠছে। সেই প্রসঙ্গেও শাসকদল এবং অন্যান্যদের বার্তা দিয়েছেন। তাঁর কথায়, ছেলে-মেয়েরা সবসময় বাবার পদবী নিয়েই বড় হয়। কিন্তু জনসংখ্যার অর্ধেক নারী শক্তি। মহিলারা উপরেরদিকে উঠে আসছে আজকের দিনে। সে কথা ভেবেই বাবার পরিচয়ের পাশাপাশি মাতৃ-পরিচয় যোগ করেছি। কল্যাণ-বাবুর কথায়, আমি তো ধর্ম-নাম বধক করেনি। আমি যে জায়গায় সেখানে মায়ের কৃতিত্ব অনেক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *