বেঙ্গল ওয়াচ নিউজ ডেস্ক:সুনীল ছেত্রী জানিয়ে দিলেন কলকাতায় কুয়েত ম্যাচ খেলেই আন্তর্জাতিক ফুটবলকে বিদায়। ফলে শেষ ম্যাচটি তিনি খেলবেন শ্বশুরবাড়ির শহরেই।
বিশ্বে সর্বাধিক গোলদাতাদের তালিকায় সুনীল রয়েছেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো (১২৮), আলি দাই (১০৮) ও লিওনেল মেসির (১০৬) পরেই। ১৫০ ম্যাচে সুনীলের গোল ৯৪। একটা সময় অবধি এগিয়ে ছিলেন মেসির চেয়েও।
বাবা কে বি ছেত্রী ছিলেন সেনাবাহিনীতে, অল্প বয়সে খেলতেন ফুটবল। মা সুশীলা ফুটবল খেলেছেন নেপালের জাতীয় দলের হয়েও। সুনীলের জন্ম ১৯৮৪ সালের ৩ অগাস্ট, তৎকালীন অন্ধ্রপ্রদেশের সেকেন্দ্রাবাদে। বাবার কাজের সূত্রে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে থাকতে হয়েছে, বদলেছে স্কুল, বদলায়নি ফুটবলের প্রতি প্যাশন।
সুনীল ২০০১ সালে যোগ দেন দিল্লির সিটি ক্লাবে। পরের মরশুমেই ডাক পান মোহনবাগানে। এরপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি। ২০০২ থেকে ২০০৫ অবধি সবুজ মেরুনে খেলার (৮ ম্যাচে ১৮ গোল) পর ২০০৫ থেকে ২০০৮ অবধি খেলেন জেসিটিতে, ২২ ম্যাচে ৪৮ গোল করেন।
২০০৮ থেকে ২০০৯ অবধি ইস্টবেঙ্গলে খেলেন, ৯ ম্যাচে ১৭টি গোল করেন। ২০০৯ থেকে ২০১০ খেলেন ডেম্পোতে। ২০১০ সালে যোগ দেন কানসাস সিটিতে, ভারতের তৃতীয় ফুটবলার হিসেবে দক্ষিণ এশিয়ার বাইরে খেলার সুযোগ পান, সুনীলই প্রথম ভারতীয় যিনি মেজর লিগ সকারের ক্লাবে যোগ দেন।
২০১১ সালে চিরাগ ইউনাইটেড, ২০১১ থেকে ২০১২ মোহনবাগান, ২০১২ থেকে ২০১৩ স্পোর্টিং সিপিতে খেলেন। ২০১৩ সালেই লোনে আসেন চার্চিল ব্রাদার্সে। ২০১৩ থেকে ২০১৫ অবধি আই লিগে বেঙ্গালুরুর হয়ে খেলেন। ২০১৫ থেকে ২০১৬ মুম্বই সিটিতে। ২০১৬ সালে লোনে আসেন বেঙ্গালুরুতে। তারপর থেকে বেঙ্গালুরু এফসির হয়েই আই লিগ ও আইএসএল খেলেছেন। বেঙ্গালুরুর হয়ে দেড়শোর উপর গোল রয়েছে।
ভারতের অনূর্ধ্ব ২০ দলের হয়ে সুনীলের অভিষেক হয়ে পাকিস্তানে, ২০০৪ সালে সাউথ এশিয়ান গেমসে সেই ম্যাচে ভারত জিতেছিল ১-০ গোলে। সেই প্রতিযোগিতায় রুপো জেতে ভারত। ভারতীয় দলের হয়ে সুনীলের প্রথম টুর্নামেন্ট ২০০৭ সালের নেহরু কাপ। প্রথম ম্যাচে তিনি কম্বোডিয়ার বিরুদ্ধে জোড়া গোল করেন, ভারত জিতেছিল ৬-০ গোলে।
দেশের হয়ে ১৫০ ম্যাচে ৯৪ গোল করেছেন। সেরা বছর ২০১১ সালে, সেবার ১৮ ম্যাচে সুনীল ১৩টি গোল করেছিলেন, যা কোনও বছরে দেশের হয়ে করা তাঁর সর্বাধিক গোল। ডেম্পো, চার্চিলের হয়ে আই লিগ জিতেছেন। বেঙ্গালুরু এফসির হয়ে ২ বার আই লিগ, ১ বার আইএসএল, দুবার ফেডারেশন কাপ, একবার করে সুপার কাপ ও ডুরান্ড কাপ ও পুত্তাইয়া মেমোরিয়াল কাপ জিতেছেন। ২০১৬ সালে এএফসি কাপে রানার-আপ হয়েছেন।
ভারতের হয়ে ২০০৮ সালে জিতেছেন এএফসি চ্যালেঞ্জ কাপ। ২০১১, ২০১৫, ২০২১ ও ২০২৩ সালে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ। ২০০৮ ও ২০১৩ সালে যাতে রানার-আপ হয় ভারত। ২০০৭, ২০০৯ ও ২০১২ সালে জেতেন নেহরু কাপ। ২০১৮ ও ২০২৩ সালে ইন্টার কন্টিনেন্টাল কাপ ও ২০২৩ সালে ত্রিদেশীয় সিরিজ জিতেছে সুনীলের ভারত।
সুনীল এআইএফএফের বিচারে সাতবার বর্ষসেরা ফুটবলার হয়েছেন, সর্বশেষ ২০২১-২২ মরশুমে। এফপিএআইয়ের বিচারে বর্ষসেরা তিনবার। চারবার সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে প্লেয়ার অব দ্য টুর্নামেন্ট ও তিনবার সর্বাধিক গোলদাতা হয়েছেন। ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপ ও আই লিগে সেরা ফুটবলার হয়েছেন। আই লিগে গোল্ডেন বুট পেয়েছেন একবার। আইএসএলের সেরাও হয়েছেন, জিতেছেন গোল্ডেন বুট।
২০১১ সালে অর্জুন পুরস্কার পান। ২০১৯ সালে ভূষিত হন পদ্মশ্রী সম্মানে। ২০২১ সালে প্রথম ভারতীয় হিসেবে পান দেশের সর্বোচ্চ ক্রীড়া সম্মান খেলরত্ন পুরস্কার। দেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি চারটি হ্যাটট্রিক করার নজির রয়েছে সুনীলের। আইএসএলে প্রথম ভারতীয় হিসেবে হ্যাটট্রিক করেন, এই টুর্নামেন্টে দুবার হ্য়াটট্রিক রয়েছে। বেঙ্গালুরুর হয়ে সবচেয়ে বেশি ২৭৬টি ম্যাচ খেলে সবচেয়ে বেশি ১২২ গোল করেছেন। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে সবচেয়ে বেশি ২৩টি গোল করার রেকর্ডটিও সুনীলের নামের পাশে। ভারতের হয়ে এএফসি প্রতিযোগিতায় তিনি সবচেয়ে বেশি ১৯টি গোল করেছেন।