মদনমোহন সামন্ত,:স্রোতের বিপরীতে সাঁতার কাটা অথবা নৌকা বাওয়া! কাজটা সহজ শোনালেও যাঁরা সাঁতার কাটেন বা কেটেছেন, যাঁরা নৌকা বাওয়ার কাজ করেছেন, শুধু তাঁরাই বুঝবেন এমন কাজ করে ওঠা এক অসাধ্যসাধন বটে। ঠিক সেই কাজটাই বারো জন দাঁড়ি বা মাঝিকে নিয়ে শক্ত হাতে হাল ধরে করে চলেছেন সীমা দাস। অবশ্যই তাঁর সঙ্গে যোগ্য সঙ্গত করছেন বাকিরা তো বটেই, রয়েছেন বৃত্তের বাইরে থেকেও বৃত্তের অন্তরের কিছু মানুষরাও।

সোজা কথা সোজাভাবে বলা যাক। এমন এক সময়ের স্রোতে বাংলার শিক্ষাব্যবস্থা চলেছে, যখন বাংলা মাধ্যমের প্রাথমিক শিক্ষালয়গুলির নাভিশ্বাস উঠতে শুরু করেছে নানা কারণে। বিত্তবানেরা তো আছেনই, মধ্যবিত্তরাও ক্রমশ ঝুঁকছেন সদ্য গজিয়ে ওঠা ইংরাজি মাধ্যম শিক্ষালয়ের দিকে। তাঁদের অনেকেরই আবার মাঝপথে নানা কারণে বাংলা মাধ্যমে ফিরতে গিয়ে আসলে বকচ্ছপ বা ময়ূরপাখাধারী কাকের মত দশা হয়ে গিয়ে না হয় সঠিক বাংলা শেখা, না হয় সঠিক ইংরাজি শেখা। বহু ক্ষেত্রে তো পড়ুয়ার সংখ্যা ও শিক্ষাদাতার সংখ্যা কমতে কমতে শিক্ষালয় বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে বলে অনেকেরই অজানা নেই।

এমন সময়ে যাদবপুর সন্তোষপুরের বিবেক নগরের ঝিল রোডের শিশু শিক্ষা নিকেতন প্রাথমিক বিদ্যালয় রমরম করে প্রায় তিনশো পড়ুয়া নিয়ে এলাকার ষোলটা শিক্ষালয়ের মধ্যে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। সরকার পোষিত এই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উপর এলাকার মানুষের আস্থা অর্জনে নিত্যনতুন শিক্ষাভাবনার উপর সমষ্টিগতভাবে জোর দিচ্ছেন শিক্ষকশিক্ষিকারা। আর তার ফল পাচ্ছেন হাতেনাতে।

১৯৫৭তে প্রতিষ্ঠিত এই শিক্ষালয় অনুমোদন পায় ১৯৬০ সালে। বহু ঝড়ঝাপ্টা পার করে আজ মহীরূহের আকার নিলেও শিক্ষাদাতাদের আক্ষেপ সমসাময়িক সময়ের উপযুক্ত হয়ে উঠতে আরও অনেক কিছু করার থাকলেও নানা কারণে সবটা করা হয়ে ওঠে না। তবুও তাঁরা তাঁদের যথাসম্ভব চেষ্টা করে চলেন। মিড ডে মিল নিয়ে প্রাথমিক ও প্রাথমিকোত্তর শ্রেণীর বরাদ্দের তারতম্য নিয়ে উষ্মা রয়েছে। প্রস্তাব এসেছিল এনজিওদের থেকে সহায়তার। সে প্রস্তাব সযত্নে ফিরিয়ে দিয়ে তাঁরা নিজেদের বেতনের কিছু অংশ ব্যয় করছেন মিড ডে মিলের মান বজায় রাখতে। সরস্বতী পূজা উপলক্ষে তাঁরা সব পড়ুয়ার জন্য প্রীতিভোজের আয়োজন করেছিলেন। চার জন রাঁধুনী তাঁদের তদারকিতে ফ্রায়েড রাইস, ভেজিটেবল চপ, চিলি চিকেন উইথ গ্রেভি, চাটনি, লেডিকেনি করে দিয়েছেন।

এমন এক খুশির দিনে ৯২ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মধুছন্দা দেব এসেছিলেন উৎসাহ দিতে। তিনি নিজেও খুব খুশি। জানিয়েছেন, এমন কাজ আরও হোক। আরও বেশি করে অংশগ্রহণ করুক সবাই। ছিলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম স্টাডিজের অধ্যাপক মানস ঘোষ, বিশেষ উপস্থিতি ছিল অমলেন্দুভূষণ রায়চৌধুরির। একবাক্যে সবাই স্বীকার করলেন, সবার সহযোগিতা ও সদিচ্ছায় শিক্ষালয় এগিয়ে চলেছে। তাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়, দৃষ্টান্ত স্থাপন করা যায়। মরা গাঙে জোয়ার সব জায়গায় আসুক সেই লক্ষ্য নিয়ে সবাইকে কাজ করতে আহ্বান জানালেন তাঁরা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here