শাশ্বতী চ্যাটার্জি :

“আমি বীর,
চির উন্নত শির।*(বিদ্রোহী)

প্রায় রবীন্দ্রসমকালে জন্মগ্রহণ করে কাজী নজরুল( ১৮৯৯ -২৪ মে,/১৯৭৬- ২৯ আগস্ট) নিজ মহিমায় বাংলা সাহিত্যের জগতে হয়ে উঠেছিলেন এক টুকরো জ্বলন্ত আগ্নেয়গিরি।
পারিবারিক আর্থিক প্রতিকুলতার কারণে তাঁর শিক্ষা জীবনে নেমে আসে নানা সঙ্কট।পরাধীন ভারতবর্ষে ব্রিটিশ ও দেশীয় জমিদার জোদ্দারদের শাসন ও শোষণের বিরুদ্ধে কাজী নজরুল ছিলেন একটা প্রতিবাদের স্ফুলিঙ্গ।তাঁর প্রথম কবিতা ‘মুক্তি’ বুঝিয়ে দেয় কবির চাহিদা।এর পরে তিনি বেশি করে গদ্য রচনায় মনোনিবেশ করলেও তাঁকে ফিরে আসতে হয় কবি হয়েই।
‘মুসলেম ভারত’ পত্রিকায়(১৩২৮ বঙ্গাব্দে) প্রকাশিত হয় তাঁর দুটি বিখ্যাত কবিতা ‘বিদ্রোহী’ আর ‘কামাল পাশা’।এর ঠিক পরেই তিনি নিজ সম্পাদনায় প্রকাশ করেন ‘ধূমকেতু’ পত্রিকা।এই পত্রিকাকে কেন্দ্র করেই বাঙ্গ জীবনে নেমে আসে এক চরম উন্মাদনা।
এই পরেই তিনি লিখলেন ‘অগ্নিবীণা’ কাব্য।এই কাব্যের ‘ধূমকেতু’ আর ‘আনন্দময়ীর আগমন’ কবিতা দুটি ব্রিটিশ শক্তিকে তীব্র আঘাত করে।ব্রিটিশ সরকার শুধু কাব্যটিকে নিষিদ্ধই করে থেমে থাকেন না।কবিকে এক বছরের জন্য কারারুদ্ধ করেন।
কিন্তু কবিকে আটকানোর ক্ষমতা ব্রিটিশ সরকারের ছিল না।জেল থেকে মুক্তি পেয়েই তিনি লেখেন,’দ্বিপান্তরে বন্দিনী’ কবিতাটি।প্রায় সমকালে লেখেন ,’চরকার গান’,’সব্যসাচী’ইত্যাদি কবিতা।এই কবিতাগুলোতে ব্রিটিশ বিরোধী রোষ আরো তীব্রভাবে প্রকাশ পায়।এই পরেই ‘লাঙল’ পত্রিকায় তিনি লেখেন তাঁর বিখ্যাত ‘সাম্যবাদী’ ও ‘লাঙল’ কবিতা দুটি।কাব্যগ্রন্থ হিসাবে এর পরেই তাঁর আগুন ঝরা কাব্য ‘সাম্যবাদী’,’সর্বহারা’ ও ‘ফনি মনসা’প্রকাশ পায়।কবির বিদ্রোহী মন আমৃত্যু উজ্জ্বল ছিল।কিন্তু শেষ কয়েক বছর তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন।
এমন জ্বলন্ত আগ্নেয়গিরি কবিকে বাঙালি পাঠক চিরকাল মনে রাখবে।প্রখ্যাত সমালোচক ও গদ্য লেখক অধ্যাপক নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় কবি নজরুল সম্পর্কে যথার্থভাবেই লেখেন,”সেদিনের যৌবন চাইছিল,আসুক এক দুরন্ত বাণীমূর্তি।এমন কবিকে চাই – যিনি এই মুহূর্তের,আজকের সংগ্রামের — প্রতিটি স্পন্দনের প্রবক্তা।দুঃসাহসী,দুরন্ত নজরুলের মধ্যে যৌবনদীপ্ত বাঙালির সেই আকাঙ্খা চরিতার্থ হলো।”

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here