উত্তাল ঘোষ, সংবাদকর্মী

🌍
You may say I’m a dreamer, but I’m not the only one -john lenon
🌍
এপিটাফ
লেখা হয় রোজ।
সভ্যতার।
মানুষের।
মনুষ্যত্বের।
🌍
বাতাসে ধূলিকণা বাড়ে। গ্রিনহাউস এফেক্ট। মরুদেশে বরফের চাঁই গলে। বিশ্ব উষ্ণায়ন। সমুদ্রে বেড়ে চলে জলতল। গ্যাসচেম্বারে থাকে আট থেকে আশি।
🌍
এপিটাফ
লেখা হয়
কনকনে রাতে।
এপিটাফ
লেখা হয়
গনগনে তাপে।
🌍
দায় ঝেড়ে ফেলা রাষ্ট্র আর রাষ্ট্রনেতাই তবু বিশল্যকরণী। গুণগানে মাতে সুইমিং পুলে বাঁচা বিলাসী জীবন। পপুলেশন না কমলে কিস্যু হবে না, ছকে দেয় বিজ্ঞ সমাধান।
🌍
এপিটাফ
লেখা হয়
স্পেস সেন্টারে।
এপিটাফ
লেখা হয়
খনির গভীরে।
🌍
অষ্টপ্রহর চলে মুক্ত বাণিজ্যের উদ্বাহু নাম সংকীর্তন। ভিসা বাতিল। বাণিজ্যে প্রাচীর। মলদ্বীপে রিফ্রেশিং ভ্যাকেশন ট্রিপ। দেনার পাহাড় কাঁধে বিষপাত্রে মুক্তি খোঁজে কৃষকের দল। রোজ গড়ে তেত্রিশ কৃষকের লাশ বয় দেশ।
🌍
এপিটাফ
লেখা হয় রোজ।
কৃষির।
কৃষকের।
ভাতের।
🌍
ধনী আর গরিবের ফাঁক বাড়ে মিনিটে মিনিটে। দুনিয়ার ধনীদের তালিকায় কটা নাম ভারতীয়, খুঁজে ফেরে উৎসুক চোখ। দশের হাতে আশি আর ষাটের হাতে পাঁচ ভাগ সম্পদের দখল। দুনিয়ার ছবিটাও ভিন্ন নয় কিছু।
🌍
এপিটাফ
লেখা হয়
মিঠি নদীর পারে।
এপিটাফ
লেখা হয়
আফ্রিকার ঘরে।
🌍
পাতে ভাত নেই। হাতে কাজ নেই। ধর্ম তো আছে। ভিন ধর্মীও মজুত। মাতো তবে ধর্মযুদ্ধে। রক্তে রক্তে দেশে দেশে লেখা চলে জীবনের এপিটাফ।
🌍
এপিটাফ
লেখা হয়
ক্রুশবিদ্ধ যীশুর।
এপিটাফ
লেখা হয়
শ্রীকৃষ্ণের, মহম্মদের।
🌍
ঘৃণা পোঁতা হয় ঘরে ঘরে মাইনের মত। বিদ্বেষের বিষ ছড়ায় মগজে মগজে। হিন্দু-মুসলমান, সাদা-কালো, পূর্ব-পশ্চিম, খ্রিস্টান-ইসলাম। টুইন টাওয়ারও মাটিতে গড়ায় বাবরি মসজিদ বা বামিয়ান বুদ্ধের মতো।
🌍
এপিটাফ
লেখা হয়
সিরিয়া, ইরাকে।
এপিটাফ
লেখা হয়
করাচি-অযোধ্যায়।
🌍
হঠাৎ
করোনা আসে।
দেশ-দুনিয়া
কাঁপল ত্রাসে।
শাটার ফেলো, শাটার নামাও।
ঘরবন্দি জীবন কাটাও।
জীবন বাঁচাও। জীবন বাঁচ।
ঘরেই খাও। ঘরেই নাচ।
🌍
লকডাউন।
শুরু লকডাইন।
দেশে দেশে
লকডাউন।
🌍
ব্রহ্মাণ্ড ঢুঁড়ে ফেলা মানুষের দল ছোট এক ভাইরাসে কত নাজেহাল! করোনার কেরামতি ফাঁস করে দেয় কেরামতি করা এই মানুষের দল কত অসহায় মৃত্যুর কাছে।
🌍
লকডাউন।
আজ চাকা বনধ।
লকডাউন।
আজ গাড়ি বনধ।
লকডাউন।
তাই হাড়ি বনধ।
🌍
এপিটাফ
লেখা চলে
রোজ রাত্তিরে।
এপিটাফ
লেখা চলে
পাখি ডাকা ভোরে।
🌍
চোখের সামনে
বিবস্ত্র সভ্যতা।
মুখ ঢাকা
রং-সাজে।
শরীরের
খাঁজে ভাঁজে
দগদগে ঘা।
লকডাউন
আলো ফেলে
বলে যায়,
আয় দেখে যা।
🌍
ছেলে কাঁধে হেঁটে যাওয়া ঘরের পথে। সঙ্গীনির কোলেও সন্তান।
বহু পথ হেঁটে এসে ঘরের গোড়ায় মরে বছর ছয়ের মেয়ে।ঘর কদ্দূর? কত মাইল? একশো? দুশো? নাকি হাজার? প্রশ্ন আছে। উত্তরে পাহাড়।
🌍
সভ্যতার
এপিটাফ হয়ে
থেকে যায়
পাহাড়ের সারি।
🌍
বাড়িতে ছেলে-বউ। ভাত নেই পাতে। দূর কোনও শহরে মধ্যরাতে বাবা আত্মঘাতী ঘোর অনুতাপে।
🌍
এপিটাফ
লেখা হয় রোজ।
শ্রমের।
শ্রমিকের।
পরিযায়ী শ্রমিকের।
🌍
কী কষ্ট লোকগুলোর! কারও কি চোখ নেই? মন নেই কারও? সরকার ননসেন্স! নেতারা ব্যস্ত শুধু ঘুষের হিসেবে! সোশ্যাল মিডিয়াজুড়ে ঝড় ওঠে!
🌍
ঝড় থামে সেলেবের হাতার দাপটে! হাতা ঠিক ক’বার ঘোরালে হবে জব্বর খাবার! ঠিক ওদের মতন! পোষ্যের গায়ে কোন হাত আগে রাখে দেখি! কী সার দেয় ওরা ফুলভরা গাছের গোড়ায়? সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে সেলেবের পোস্টেই মেতে থাকা ভাল।
🌍
কবরে
সারি সারি
দেহ জমে।
চুল্লির সামনে
ভিড়।
কত কত?
গোনা নেই।
দায় ঝাড়ে
রাষ্ট্রনেতা।
বেকারের
স্তূপ জমে।
নেতা দেখে
ভোটের হিসেব।
দায়ী হল
নাকবোঁচা
বদমাশ দেশ।
রাগে গড়গড়
দাদার নিদান।
🌍
তালি বাজে।
থালা বাজে।
মোম জ্বলে।
মিছিলে মিছিলে
চলে বাজির স্লোগান।
দেশজুড়ে সাড়ম্বরে
করোনা-পাবণ!
দো গজ দূরি,
শুনি নেতার নিদান।
🌍
রাস্তায় গোলগোল
চক্কর।
লাল ইটে
আঁকা হয়
সাদা সাদা চক্কর।
দাদা-দিদি টক্কর।
পাবলিক ঘুরে খায়
দিনরাত ঠোক্কর।
মরলেও মরে না।
করোনা তো মারে না।
এ তো দেখি
লাশ-চুরি।
কী যে বলি!
থুড়ি থুড়ি!
এটাই তো
যুগের নিয়ম।
🌍
এপিটাফ
লেখা হয় রোজ।
নৈতিকতার।
বিশ্বাসের।
সত্যের।
🌍
ওরা লড়ে
মুখোমুখি।
জামা নেই।
ঢাকা নেই।
তবু লড়ে
দিনরাত।
মরে তবু
লড়ে যায়।
মরে ওরা
ইতালিতে।
মরে ওরা
মার্কিন দেশে।
কলকাতা,
ইন্দোরে
মরে থাকে
স্টেথো হাতে
যোদ্ধার দল।
মরে থাকে
নাইটিঙ্গেল
এ দেশে
ও দেশে।
🌍
লকডাউন উঠে যায়। ট্রেন চলে। বাস চলে। উড়ছে বিমান। দোকানে কেনাকাটা। রাতে খাটে উদ্দাম সঙ্গম। চলতেই থাকে। চলতেই থাকে। মগজের লকডাউন শুধু ওঠে না।
🌍
এপিটাফ
লেখা হয় রোজ।
প্রেমের।
প্রেমিকের।
স্বপ্নের।
🌍
মাস্কে মুখ ঢাকা সভ্যতার।
————-
🔥
(মুশকিল একটাই, স্বপ্ন মার খেয়ে পড়ে যায়। মরে না। দেশে দেশে গেয়ে ফেরে লালনের মতো। নাপাম বোমায় ঝলসানো মেয়েটা মাদ্রিদের রাস্তায় চিৎকার করে ওঠে, নো পাসারেন।)

 

( মতামত  ব্যক্তিগত )

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here